,

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলার বাদী তাজুল ইসলাম ফারুক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত

আব্দুল হামিদ ॥ হবিগঞ্জের বিশিষ্ট শিল্পপতি নুরপুর গ্রামের বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী, সাবেক ওয়েস্ট মন্ট পাউয়ারের চেয়ারম্যান সমাজ সেবক কাজী তাজুল ইসলাম ফারুক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তিনি সদর উপজেলার নুরপুর গ্রামের মৃত সিরাজুল হক চৌধুরীর পুত্র। গতকাল মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নছরতপুর গেইটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, জেলার সদর উপজেলার অলিপুরে অবস্থিত হযরত শাহ ফতেহ গাজী (রঃ) এর মাজার থেকে প্রাইভেটকার যোগে বাড়ি ফেরার পথে ভোর ৫টায় বিপরীত দিক থেকে আসা সবজি বোঝাই একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট-১৮-৮৩২০) তার প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে তাজুল ইসলাম গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে নিয়ে যাবার পথে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে তার মৃত্যু হয়। এদিকে দুর্ঘটনার খবর শুনে এলাকার হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে। এসময় তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাছ ফেলে, আগুন ধড়িয়ে দিয়ে রাস্তা প্রায় ৫ ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ-লাখাই আসনের এমপি আলহাজ্ব মোঃ আবু জাহির, সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার মাকছুদুর রহমান মনির, সদর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন, শায়েস্থাগঞ্জ থানার ওসি এজাজুল ইসলামসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌছে স্থানীয় লোকদের শান্তনা দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। উল্লেখ্য ২০০৭ সালে (ওয়ান-ইলেভিনে) ৯ এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃৃত্বে গঠিত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকার চাঁদাবাজির মামলা করে আলোচিত হন পাওয়ার প্লান্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের তৎকালীন চেয়ারম্যান শিল্পপতি কাজী তাজুল ইসলাম ফারুক। মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে গণভবনে বসেই ওই চাঁদার টাকা গ্রহণ করেন। পরে ২০১০ সালের ৩০ মে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ওই মামলাটি বাতিল করেন। পরবর্তিতে ২০০১ সালের নির্বাচনে হবিগঞ্জ সদর আসনের প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ এএমএস কিবরিয়ার নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তাজুল ইসলাম ফারুক। এবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাজুল ইসলাম ফারুক আত্মগোপনে চলে যান। বেশির ভাগ সময় তিনি গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন। এলাকার মসজিদ মন্দিরে দান-খয়রাত, গরীব অসহায়দের পাশে দাড়ানো, এলাকার শত শত যুবক-যুবতীকে চাকরি দেয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে ছিলেন তাজুল ইসলাম ফারুক। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার শুভাকাঙ্কি, আত্তিয়-স্বজন, এবং বন্ধু-বান্ধব সবাই মর্মান্তিক এ ঘটনায় হতম্ব হয়ে পড়েছেন। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪ টায় নুরপুর কলেজ মাঠে তার জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি চৌধুরী আব্দুল হাই, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ সাখাওয়াত হোসেন জীবন, বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ বশির আহমেদ, হবিগঞ্জ চেম্বার প্রেসিডেন্ট মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লষ্কর, জাকির হোসেন অসিম, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান আওয়াল, ইউপি চেয়ারম্যন আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বেলাল, আলী আহমেদ খাঁন, আব্দুল আওয়াল তালুকদার, আব্দুর রহিম চৌধুরী, হাজী মোক্তার হোসেন, মরহুমের বড় পুত্র কাজী আদনান প্রমুখ। জানাজায় সামাজিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দসহ হাজারো মানুষের ঢল নামে।


     এই বিভাগের আরো খবর