,

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ

মতিউর রহমান মুন্না ॥ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জের আইনগাও নামক স্থানে গত রবিবার দুপুরে যাত্রীবাহি মামুন পরিবহনের বাসের ধাক্কায় সিএনজি অটোরিক্সার ৩ যাত্রী নিহতদের জানাযার নামাজ শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দাফনের পুর্ব মুহুর্তে এলাকায় ছাউর হয় গাড়ী পুরানো এবং পুলিশকে মারপিটের ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় পুলিশ এসল্ট মামলা হয়েছে। জানাযার সময় লোকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে। এমন খবরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং তাৎক্ষনিকভাবে হাজারো মানুষের ঢল নামে মহাসড়কে। এক পর্যায়ে ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় জনতা গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১১ টার সময় নিহতদের লাশ সামনে নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালে প্রায় ৩ ঘন্টা মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে। এসময় নবীগঞ্জ থানার ওসি থানায় কোন ধরনের মামলা হয়নি আর হবেও না বলে প্রতিশ্র“তি দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে উঠে। পরে বেলা ৩টায় জানাযা শেষে নিহতদের দাফন সম্পন্ন হয়। উল্লেখ্য, গত রবিবার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যাত্রীবাহী একটি সিএনজি (অটোরিক্সা)-নং হবিগঞ্জ-থ-১১-৫৬৮৪ পুলিশ দেখে সিএনজি নিয়ে চালক দ্রুত গতিতে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী মামুন পরিবহনের বাসের (নং ঢাকা মেট্রো-প ১৪-৮৬৯০) ধাক্কায় সিনিজটি ধুমড়ে মুছড়ে যায়। এসময় সিএনজিতে থাকা ৩ যাত্রীর মৃত্যু হয়। উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের নুর মিয়ার মেয়ের বিয়েতে অটোরিক্সা নিয়ে মখলুছ বিবি (৭০) তার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে উপজেলার গোপলার বাজার মর্তূজা কমিউনিটি সেন্টারে যাচ্ছিলেন। এসময় মহাসড়কে গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রের এস আই সোহেল রানা তিনজন পুলিশ নিয়ে একটি মোটর সাইকেল যোগে টহল দিচ্ছিলেন। অবৈধভাবে মহাসড়কে চলাচলকারী ওই সিএনজি চালক পুলিশ দেখে দ্রুত সরে যাওয়ার চেষ্টাকালে সামন থেকে আসা ঢাকা থেকে সিলেটগামী মামূন পরিবহনের নীচে চাপা পড়ে ধুমড়ে মুছড়ে যায়।। এ সময় মখলুছ বিবি (৭০), তার ছেলে কাছন মিয়ার স্ত্রী ছফিনা বিবি (৩৫) ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং চাচাতো দেবর আব্দুল হান্নানের ছেলে সুফিয়ান মিয়া (২৭) কে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ সময় উত্তেজিত জনতা মামুন পরিবহনে আগুন ধরিয়ে দিলে গাড়ীটি ভস্মিভূত হয়। এছাড়াও উত্তেজিত জনতা হাইওয়েতে দায়িত্বরত এসআই সহ দু’জন পুলিশ সদস্যকে ধাওয়া করলে তারা পাশের একটি ঘরে আত্মরক্ষা করেন বলে স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে। এ সময় প্রায় ২ ঘন্টা মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে থাকে। খবর পেয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। পরে রাতেই হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র দায়িত্বে অবহেলার দায়ে গোপলার বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনর্চাজ এসআই সুহেল রানাকে প্রত্যাহার করে নেন। এদিকে গতকাল রবিবার বেলা আড়াইটার সময় নিহতদের লাশ পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট শেষে তাদের গ্রামের বাড়ীতে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। তাদের লাশ গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে আসলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনার সৃষ্টি হয়। এলাকায় সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতদের পরিবারে চলে শোকের মাতম ও কান্নার রোল। জানাযার নামাজের পূর্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা শাহেদ গাজী, উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক ডাঃ আবুল খয়ের, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, থানার ওসি আব্দুল বাতেন খান, উপজেলা যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হেলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন্দ্র পাল রবি, যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রসূল চৌধুরী রাহেল, পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়েজ আমীন রাসেল, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ, এড. জাবেদ আলী প্রমুখ। সমাবেশে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ বলেন, জনতার বিরুদ্ধে কোন ধরনের মামলা নেয়া হয়নি এবং নেয়া হবে না। এমন প্রতিশ্র“তির প্রেক্ষিতে উত্তপ্ত পুরস্থিতি শান্ত হয়। এ ব্যাপারে অফিসার ইনর্চাজ মোঃ আব্দুল বাতেন খানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, একটি বিশেষ মহল নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য এলাকায় মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে গুলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছিল। তাদের অপচেষ্টা সফল হয়নি।


     এই বিভাগের আরো খবর