,

দেওয়ান ফরিদ গাজী’র ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

এম,এ আহমদ আজাদ ॥ সাবেক মন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হবিগঞ্জ-১ আসনের এম.পি দেওয়ান ফরিদ গাজীর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সিলেট বিভাগের কৃতি সন্তান, প্রাক্তন মন্ত্রী মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজী হবিগঞ্জ জেলার দিনারপুর পরগনার দেবপাড়া গ্রামে ১৯২৪ সালের ১লা মার্চ জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম দেওয়ান হামিদ গাজী ও মাতার নাম মোসাম্মাৎ ছলিমা খাতুন। হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর সাথী-৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম আউলিয়া হযরত শাহ-তাজ-উদ্দিন কুরেশী (রঃ) এর বংশধর হলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী। দেওয়ান ফরিদ গাজী গোলাপগঞ্জ থানার ফুলবাড়ী গ্রাম নিবাসী আব্দুজ জহির চৌধুরীর মেয়ে আলম রওশন চৌধুরীকে বিবাহ করেন। আলম রওশন চৌধুরীর মাতামহের নাম দেওয়ান এখলিমুর রাজা। দেওয়ান ফরিদ গাজীর রাজনৈতিক জীবনের সাফল্য ও জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা লাভের পেছনে তার স্ত্রীর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিল। দেওয়ান ফরিদ গাজী ০২ মেয়ে ও ০৬ ছেলের জনক। ০৬ ছেলের মধ্যে ০১ জন (গাজী মোঃ জাহেদ) ১৯৮৭ সালে অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রী আলম রওশন চৌধুরী ১৯৯৫ সালের ৩রা নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। ১৯৪২ সালে কুইট ইন্ডিয়া আন্দোলনের মাধ্যমে দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছাত্র রাজনীতিতে যোগদান। দেওয়ান ফরিদ গাজী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ সালে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর আহ্বানে আসামে বাঙ্গাল খেদাও আন্দোলনে যোগদান করেন। তারপর ১৯৪৭ সালে গণভোট, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালে শিক্ষানীতি আন্দোলন, ১৯৬৬-৬৮ সালে ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান বিরোধী গণ অভ্যূথান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৪ সালে সিলেট বিভাগ আন্দোলন এবং ১৯৯৫ সালে গণ আন্দোলন সব ক’টি আন্দোলনে দেওয়ান ফরিদ গাজীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেওয়ান ফরিদ গাজী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ। দেওয়ান ফরিদ গাজী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও যুদ্ধ পরিচালনায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের এডমিনিষ্ট্রেটিভ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ৪নং ও ৫নং সেক্টরের বে-সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন বিধায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সরকারের দেশদ্রোহিতার অপরাধে তাকে ১৪ বছরের জেল এবং তার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা লাভের পর দেওয়ান ফরিদ গাজী সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে ১৯৭১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। যুদ্ধ বিদ্ধস্থ সিলেট জেলার প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র গ্রহন করে আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হন। ১৯৭৩ সালে দেওয়ান ফরিদ গাজী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রী পরিষদে প্রথমে স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এবং পরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। সমবায় প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সুতা আমদানী করে সমবায়ের মাধ্যমে তাঁতীদের অর্থঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করে তাঁত শিল্পকে চাঙ্গা করে তোলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ওয়েজ আর্নার স্কীম চালু করে দেশের অর্থভান্ডারে প্রচুর বৈদেশিক আয়ের পথ সুগম করে দেন। পাকিস্তান আমলে দেওয়ান ফরিদ গাজীর আন্তরিক চেষ্টায় ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা, ছাতক পেপার মিল, খাদিম নগরে পল্লী উন্নয়ন প্রশিক্ষন কেন্দ্র এবং শ্রীমঙ্গলে চা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। দেওয়ান ফরিদ গাজী ১৯৭০ সালে সিলেট-১ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যদিও তিনি নবীগঞ্জ-বাহুবল এলাকা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তথাপি তিনি সিলেট বিভাগের সকল সমস্যার ব্যাপারে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আলোচনা করতেন। সিলেট বিভাগের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষক প্রশিক্ষন মহাবিদ্যালয়, প্রকৌশলী ও কৃষি মহাবিদ্যালয় স্থাপন এবং এম.এ.জি ওসমানী বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রুপান্তরিত করা এবং সিলেট বিভাগকে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ হিসেবে চালু করা প্রভৃতি প্রস্তাব তিনি জাতীয় সংসদে তুলে ধরেন। ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নবীগঞ্জ-বাহুবল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি থেকে ৭৫ হাজার ভোট বেশি পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসাবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। প্রবীণ বয়সে কালজয়ী জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী জন্মভূমির উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেট ও নবীগঞ্জ বাহুবলে বিভিন্ন দরগা, মাদ্রাসায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে হযরত শাহজালাল (রাঃ) এর মাজার দরগা শরীফে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর