,

৫ পৌরসভায় আওয়ামীলীগ-বিএনপি ও জাপার প্রার্থী চূড়ান্ত নবীগঞ্জে উৎসবের আমেজ

আলী হাছান লিটন/মতিউর রহমান মুন্না ॥ আসন্ন পৌর নির্বাচনে হবিগঞ্জ জেলার ৫ পৌরসভায় আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী চুড়ান্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্র থেকে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীদের তালিকা চুড়ান্ত করা হয়। বিএনপির ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড তাদের প্রার্থীতা চুড়ান্ত করে। মেয়র পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীরা হলেন হবিগঞ্জ পৌরসভায় জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, নবীগঞ্জ পৌরসভায় বর্তমান মেয়র অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ ছালেক মিয়া, চুনারুঘাট পৌরসভায় সাইফুল আলম রুবেল ও মাধবপুর পৌরসভায় হিরেন্দ্র লাল সাহা। এদিকে, হবিগঞ্জে বিএনপির হ-য-ব-র-ল অবস্থায় দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে কোন আলোচনা বা কার্যক্রম দেখা যায়নি। এ অবস্থায় বিএনপির কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড তাদের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৫ পৌরসভায় ৫ জনকে মনোনীত করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অনুমতিক্রমে গতকাল মঙ্গলবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে যে সব পৌরসভায় দলীয় মেয়র রয়েছেন তাদেরকে দলীয় প্রার্থী দেয়া হবে। এ অবস্থায় হবিগঞ্জ পৌরসভায় বর্তমান (সাময়িক বরখাস্তকৃত) মেয়র জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক অথ্যমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারান্তরীণ আলহাজ্ব জি কে গউছ, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র ফরিদ আহমেদ অলি ও চুনারুঘাট পৌরসভার বর্তমান মেয়র নাজিম উদ্দিন শামছু এর নাম চুড়ান্ত। এদিকে, নবীগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও নবীগঞ্জ পৌর বিএনপি সভাপতি আলহাজ্ব ছাবির আহমেদ চৌধুরী ছাড়া বিএনপির আর কোন প্রার্থী না থাকায় তিনিও দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা চুড়ান্ত। সূত্র মতে মাধবপুর পৌরসভায়ও পৌর বিএনপির সদস্য সৌদী প্রবাসী হাবিবুর রহমান মানিক এর নাম চুড়ান্ত তালিকা রয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ সাখাওয়াত হাসান জীবনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমান মেয়রগণ প্রার্থী রাখা হবে এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। মেয়র পদে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা হলেন নবীগঞ্জ পৌরসভায় জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মাহমুদ চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভায় জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা এডভোকেট শিবলী খায়ের, চুনারুঘাট পৌরসভায়হাজী আসিফ ইকবাল দুলালকে জাপা মনোনয়ন বোর্ড মনোনয়ন দিয়েছে। এছাড়া নবীগঞ্জ পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছে যুক্তরাজ্য প্রবাসী গীতিকার, কবি ও সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর আলম রানা ও লন্ডন প্রবাসী জুবায়ের আহমদ চৌধুরী। আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে পৌর নির্বাচনকে ঘিরে নবীগঞ্জে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রতীক বরাদ্ধ না হলেও ভোটারদের বাসা বাড়িতে গিয়ে গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিভিন্ন স্থানে ও অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে সাধারণ ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় ও উঠান বৈঠক করছেন। সাধারণ ভোটার এ মুহুর্তে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে তেমন কোন আলোচনা না করলেও পৌর পরিষদের গুরুত্বপূর্ন কান্ডারী মেয়র প্রার্থী নিয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষণ করছেন বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরা ও চায়ের ষ্টলে। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে কাউন্সিলর পদে নবীগঞ্জ পৌরসভার যে সকল প্রার্থী মনোনয়নপত্র গ্রহন করেছেন- ১নং ওয়ার্ড- মোঃ মিজানুর রহমান মিজান (বর্তমান কাউন্সিলর), মোঃ জাকির হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর মোঃ জয়নাল আবেদিন। ২নং ওয়ার্ড- মোঃ সুন্দর আলী (বর্তমান কাউন্সিলর), মোঃ হাফেজ নিয়ামুল হক, মোঃ আলমগীর মিয়া, মোঃ আবুল মিয়া। ৩নং ওয়ার্ড- শাহ রেজভী আহমদ খালেদ (বর্তমান কাউন্সিলর), মোঃ ওহি দেওয়ান চৌধুরী, সাবেক কমিশনার মোঃ আব্দুস সালাম ও মোঃ নুর মিয়া। ৪নং ওয়ার্ড- যুবরাজ ঘোপ (বর্তমান কাউন্সিলর), প্রানেশ চন্দ্র দেব, শফিকুল ইসলাম, মুক্তার হোসেন, সায়র কুমার দাশ। ৫নং ওয়ার্ড- এটি এম সালাম (বর্তমান কাউন্সিলর), লুৎফর রহমান মাখন ও ইছমত আলী। ৬নং ওয়ার্ড- নুরুল গনি চৌধুরী সোহেল, জায়েদ চৌধুরী, শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী রিপন, শেখ আবুল কাশেম, মিজানুর রহমান চৌধুরী মিতু, জয়নাল আবেদিন, আজিল মিয়া চৌধুরী, আঃ আহাদ চৌধুরী ও রথীন্দ্র মালাকার। ৭নং ওয়ার্ড-রুহুল আমিন রফু (বর্তমান কাউন্সিলর) ও মোঃ কবির মিয়া। ৮নং ওয়ার্ড- সন্তোষ দাশ (বর্তমান কাউন্সিলর), সাবেক কাউন্সিলর বাবুল চন্দ্র দাশ, তপন জ্যোতি দে, আলমগীর হোসেন চৌধুরী। ৯নং ওয়ার্ড- মোঃ আলাউদ্দিন (বর্তমান কাউন্সিলর), শেখ শাহনুর আলম ছানু, মোঃ নকুল মিয়া তালুকদার, ফজল আহমদ চৌধুরী, মোঃ লিল খাঁ। সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী- ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ড- জাকিয়া আক্তার লাকি (বর্তমান কাউন্সিলর), ফারজানা আক্তার পারুল। ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ড- যুতিকা রাণী দাশ (বর্তমান কাউন্সিলর), আছমা বেগম, পূণীমা রাণী দাশ, সামারুন বেগম। ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড- শেলি বেগম, ফুলন সূত্রধর, সৈয়দা নাসিমা বেগম। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত উল্লেখিতরাই নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়ন পত্র গ্রহন করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ভোটারদের মাঝেও আগাম নির্বাচনী হিসাব নিকাশ ও চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে। প্রার্থীদের অতীত ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও চুলছেড়া বিশ্লেষণ। এ আলোচনায় বাদ নেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক, পেশাজীবি লোকজনও। এদিকে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনীত ৩ বারের নির্বাচিত বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামীলীগের সদস্য অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী। সদা হাস্যজ্জ্বল সৎ এবং অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে ইতিমধ্যে পৌর নাগরিকদের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক হিসেবেও পরিচিত। অপরদিকে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী। ৬নং ওয়ার্ডে টানা তিনবার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং তিন বারই পৌরসভার প্যানেল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই দীর্ঘ সময়ে পৌর পরিষদের থাকার সুবাধে এবং বিএনপির রাজনৈতিক কারনে তিনি এলাকায় সুপরিচিত। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী লন্ডন প্রবাসী জাহাঙ্গীর রানা গীতিকার, কবি ও সাহিত্যিক হিসেবে তার অনেক খ্যাতি রয়েছে। তিনি উচ্চ শিক্ষিত ও ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। লন্ডন যাওয়ার পুর্বে আর্তসামাজিক উন্নয়নে এলাকায় নিবেদিত ছিলেন। বিগত নির্বাচনগুলোর মতো দলমতের উর্ধ্বে উঠে ওই সম্প্রদায়ের অনেক ভোট তার দিকে রয়েছে বলে সাধারণ মানুষের ধারনা। অপরদিকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মোঃ মাহমুদ চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র গ্রহন করেছেন প্রবাসী জুবায়ের আহমদ চৌধুরী।


     এই বিভাগের আরো খবর