,

হযবরল নির্বাচনী প্রক্রিয়া

সময় ডেস্ক ॥ পৌরসভা নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তফসিল ঘোষণার ১১ দিন পরও প্রয়োজনীয় নির্বাচনী বই (ম্যানুয়েল) পৌঁছেনি রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের হাতে। মনোনয়নপত্র দাখিলের একদিন পরও প্রার্থীর দলীয় পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য ইসি জানাতে পারেনি। মনোনয়নপত্র জমার পর প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়টি স্পট করার জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রে তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রেও ইসির নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন সংশ্লিষ্ট কিছু মাঠ কর্মকর্তা। প্রার্থীর ঋণখেলাপির তথ্য যথাসময়ে ইসির হাতে পৌঁছানো নিয়েও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, কমিশনের অদক্ষতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেন, আরও আগে থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিল। প্রয়োজনীয় কাজগুলো শেষ না হওয়ায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। এসব কারণে কমিশনকেও বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৫টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় হযবরল অবস্থার কিছু নেই। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর প্রয়োজনীয় কাজ করছেন রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা। কমিশন মনিটরিং করছে। এজন্য কমিশনের সব কর্মকর্তাকে বন্ধের দিন অফিসে এনে বসিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব পৌরসভা থেকে তথ্য আসছে। এগুলো একীভূত করতে কিছুটা সময় লাগছে। এছাড়া সব পৌরসভা থেকে সিআইএমএসে একই সঙ্গে তথ্য আপলোড করা হচ্ছে। এতে ইন্টারনেটের গতি কমে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। কয়েকটি পৌরসভার রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার ১১ দিন পরও নির্বাচনী আইন, বিধি ও নির্বাচনী ফরমের নমুনার একীভূত বই (ম্যানুয়েল) পাননি তারা। কর্মকর্তারা বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে তফসিলের পরপরই ম্যানুয়েল দেয়া হয়েছে। এক বইতে সব ধরনের নির্দেশিকা ও আইন-বিধি থাকায় নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালানা করতে সুবিধা হয়। প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে পৌর নির্বাচনের আইন ও বিধিতে অনেক সংশোধনী এসেছে। ম্যানুয়েল না থাকায় প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব এবং আইনি সমস্যার সমাধান পেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। তারা বলেন, কমিশন থেকে আইন, বিধি ও ম্যানুয়েলের সফট কপি পাঠানো হলেও মফস্বলে ইন্টারনেটের গতি কম হওয়ায় তা ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। অনেক পৌরসভায় কমিশন থেকে পাঠানো পিডিএফ ফাইল সাপোর্ট করেনি। এ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন তারা। কমিশন সূত্র জানায়, ম্যানুয়েল তৈরি ও কমিশনের অনুমোদন পেতে অনেক সময় চলে গেছে। আগামী রোববারের আগে এটি ছাপা সম্ভব হবে না। এরপরই মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হবে। অথচ রবি ও সোমবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন নির্ধারিত রয়েছে। ওই দুই দিনই ম্যানুয়েলের ব্যবহার বেশি হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, কমিশন থেকে নির্দেশনা পেতেও নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে বৃহস্পতিবার রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের প্রার্থী নির্বাচনে যোগ্য হবেন এবং কারা অযোগ্য হবেন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ চিঠি মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে পাঠানো উচিত। কারণ প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে জানতে হবে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কি না। তার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা আছে কিনা ইত্যাদি। এ চিঠি অনুযায়ী তিনি অযোগ্য হলে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন না। আর যদি নির্বাচন করতেই চান সে ক্ষেত্রে তাকে ইসির চাহিদা অনুযায়ী যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট করায় প্রার্থী না জেনে অনেকটা অন্ধকারে ঝাঁপ দেয়ার মতো অবস্থায় পড়বেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ঋণখেলাপি প্রার্থীরা নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন। ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে প্রার্থী ঋণখেলাপি কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত হবে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের আগেই এসব কাজ করতে হবে। আগামীকাল রবি ও সোমবার দু’দিন মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণখেলাপির তথ্য প্রাপ্তিসাপেক্ষে প্রার্থীকে যোগ্য বা অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্র দু’দিনের মধ্যে সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি প্রার্থীর ঋণবিষয়ক তথ্য নির্ভুলভাবে যাচাই-বাছাই করা কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে আরও সময় পাওয়া গেলে ভালো হতো।


     এই বিভাগের আরো খবর