,

নানা সমস্যা ও দুর্নীতির বেড়াজালে বন্দি হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল

ষ্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল নানা সমস্যা ও দুর্নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই হাসপাতালে আসা জেলার ৮ টি উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা নানা সমস্যা ও দুর্নীতির কারণে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগীরা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে দিনদিন সেবার মান মুখ থুবড়ে পড়েছে। জানাযায়, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালটি ১৯৯৬ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত (২য় পৃষ্ঠায় দেখুন) হওয়ার পর থেকে জেলার সবকটি উপজেলার সাধারণ মানুষের সেবা প্রদান করে আসলে বিগত বছরে স্থানীয় এমপি এড. আবু জাহিরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর তারই প্রচেষ্টায় গত বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হবিগঞ্জ সফরকালে এ হাসপাতালে মেডিকেল কলেজ চালুর ঘোষনা করেন। এরপর থেকে নতুন ভবনের কাজ ও মেডিকেল কলেজ চালুর প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। বর্তমানে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ২ শত রোগী থাকার কথা থাকলেও গড়ে ২ শ ৭৫ জন রোগী ভর্তি থাকে। আর রোগীদের সাথে আসা ১ জন করে লোক থাকলে এর সংখ্যা দাড়ায় ৫ শত ৫০ জনে। অপারেশন থিয়েটারে ৩ টি এনসথেসিয়া মেশিন, এক্সরে মেশিন ও আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন দীর্ঘদিন যাবত অকোজো হয়ে পড়ে আছে। যার ফলে হবিগঞ্জ জেলাবাসী একমাত্র অবলম্বন এই হাসপাতালে যেকোন রোগী চিকিৎসার জন্য আসলে ডাক্তার দেখানো মাত্র যেকোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলেই তা বাহিরের বিভিন্ন ডায়গনষ্টিক সেন্টারের নাম বলে দেওয়া হয়। যেখান থেকে হাসপাতালে লোকজন পার্সেন্টটিজ পান। এতে রোগীদের যেমন হয়রানী হতে হয় তেমনি টাকা গুনতে হয় বেশী। জরুরী বিভাগের রোগী দেখানো সময় এক শ্রেনীর অসৎ কর্মচারীর যোগসাজসে সরকারী ফির চাইতে বেশী ফি আদায় করা হয়। সরকারী বিধি মোতাবেক আউটডোরে রোগী দেখানো ফি ৫ টাকা এবং রোগী ভর্তি ফি ১০ টাকার বিধান থাকলেও দ্বিগুন হারে রোগী দেখাতে ১০ টাকা এবং ভর্তির জন্য প্রতি রোগীকে ২০ টাকা প্রদান করতে হয়। হাসপাতাল কর্তৃক মেইনটেইনকৃত রেজিষ্টার খোজে প্রতিদিনের মোট রোগীর সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় না। এছাড়া বহিরাগত যেকোন লোকজন যখন তখন রেজিষ্টার নাড়াচাড়া করতে দেখা যায়। আর এখান থেকেই দালালী শুরু হয়। রোগীদেরকে সহযোগীতার নামে নির্দিষ্ট ফার্মেসীতে নিয়ে ঔষধ বিক্রি করে ব্রাদার ও দালালরা পারসেন্টিজ আদায় করে। এছাড়া রোগীদের চিকিৎসার ও অপারেশনের জন্য ক্রয়কৃত ঔষধ পুরোপুরী ব্যবহার না করে পুনরায় তা দোকানে বিক্রি করে নগদ টাকা উপার্জন করতে দেখা যায়। রোগীদের জন্য নির্ধরিত প্যাথলজিতে সরকারীভাবে ইমতিয়াজ আহমদসহ ২ জন ডিপ্লোমা প্যাথলজিষ্ট থাকার পরও বহিরাগত আরো ৩ জন লোক প্রায় ৪/৫ বছর ধরে কাজ করে আসছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন ওরা কি বিনা টাকায় এখানে কাজ করেন নাকি কি স্বার্থের বিনিময়ে এসব বহিরাগতরা কাজ করেন। গাইনী ওয়ার্ডে কোন নার্স ও আয়ার ২ বছরের বেশী ডিউটি করার কথা না থাকলেও বছরের পর বছর ওরা গলাকাটা ব্যবসা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এছাড়া সার্জারী, মেডিসিন, শিশু বিভাগ, সার্জারী কনসালটেন্ট, অর্থপেডিক কনসালটেন্ট থাকা সত্ত্বেও প্লাস্টার এমপুটেশন করেন এম এল এস এস ও ঝাড়-দারুরা। প্রতিদিন রাতে ও সকালে ওয়ার্ড রাউন্ড দেওয়ার কথা থাকলেও শুধুমাত্র সকালে একবার দেওয়া হয়। ফলে সাধারণ রোগীদের ভোগান্তির অন্ত নেই। বর্হিবিভাগে প্রতিদিন কনসালটেন্টগন রোগী দেখার বিধান থাকলেও সার্জারী, অর্থপেডিক কনসালটেন্ট ও ই এনটি কনসালটেন্টগন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে এক এক দিন করে একজন রোগী দেখেন। ফলে রোগীরা সঠিক কনসালটেন্টদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। এই হাসপাতালেও শিশু কনসালটেন্টগস সকালে একবার ওয়ার্ড রাউন্ড দিয়ে নিজেদের খোলা ব্যবসা প্রতিষ্টান ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখেন। এরকম প্রায় সবকটি বিবাগেই বিকল্প লোক দিয়ে নামমাত্র চিকিৎসা চালানো হয় যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে চলেন। তাছারা হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বহিরাগত দালালরা সাধারণ রোগীদেরকে বাহির থেকে প্রয়োজন ছাড়া ঔষধপত্র ক্রয় করিয়ে এনে তা আবার বিভিন্ন ফার্মেসীতে বিক্রি করে সকলে মিলে ভাগভাটোয়ারা করে নেন। এছাড়া রক্ত সঞ্চালন বিভাগে পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া শহরের বিভিন্ন নেশাগ্রস্থ রোগীদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে তা হাসপাতালে আসা মুমুর্ষ রোগীদের জরুরী প্রয়োজনে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয় যা সম্পূর্ন ঝুকিপূর্ন। এতে করে যেকোন রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে যেকোন সময়। হাসাপাতালে বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক বিভাগসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান ও পর্যবেক্ষন এর দায়িত্ব হবিগঞ্জ গনপূর্ত বিভাগের থাকলেও তা পুরোপুরি ভাবে ব্যবস্থ নেওয়া হয় না বলে সুত্রে জানাগেছে। এক কথায় বিভিন্ন সমস্যা ও দালালদের হয়রানি এবং অসৎ কর্মচারীদের দুর্নীতির বেড়াজালে বন্দি হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল। এ ব্যাপারে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।


     এই বিভাগের আরো খবর