,

বদলে যাচ্ছে বিএনপি

সময় ডেস্ক ॥ বদলে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রতিটি স্তরেই ব্যাপক পরিবর্তন অত্যাসন্ন। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাহী কমিটি পর্যন্ত ঢেলে সাজাচ্ছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির প্রায় অর্ধেক পদেই পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে তিনজনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারা হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান। এর বাইরেও আরও অন্তত চারজনকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করার প্রক্রিয়া চলছে। দলের স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পেতে বিভিন্ন স্তরের নেতা ও ব্যক্তিবর্গ ইতিমধ্যেই ব্যাপক লবিং-তদবিরও শুরু করেছেন। গত এক সপ্তাহে দলের বেশ কজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে দলীয় চেয়ারপারসন এ নিয়ে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। ফেব্র“য়ারির শেষ দিকে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা চলছে। সম্মেলনের জায়গা বরাদ্দের জন্য সরকারের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১৯টি পদের মধ্যে তিনজন ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। অসুস্থতার কারণে দুজন আর এ কমিটিতে থাকবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এসব পদ পূরণের ক্ষেত্রে তিনজন নতুন মুখ ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করেছেন খালেদা জিয়া। বাকি তিন থেকে চারটি পদে নতুন মুখ আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আবদুল আউয়াল মিন্টুর নাম শোনা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের একজন সদস্য জানান, ‘মৃত্যু’র কারণে গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতা, বয়সের ভারে ন্যুজ ও শারীরিক অক্ষমতার জন্য পাঁচজন সদস্যের সরে যাওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। তা ছাড়া নিষ্ক্রিয়তা, অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে আরও দু-এক জনকে সরিয়ে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই ‘মৃত্যু’র কারণে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, ‘৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ড কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রকৌশলী ড. আর এ গণির খালি হওয়া তিনটি পদ ছাড়াও আরও যে দুটি পদ নিশ্চিতভাবে খালি হচ্ছে এগুলো যথাক্রমে শারীরিকভাবে মারাত্মক অসুস্থ এম শামসুল ইসলাম ও বেগম সারোয়ারি রহমান। তারা নিজেরাই ইতিমধ্যে আর এ পদে থাকবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। দলের একজন প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান জানান, স্থায়ী কমিটির সমমর্যাদায় দলের নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠনেরও প্রক্রিয়া চলছে। স্থায়ী কমিটি থেকে যারা সরে যাবেন তাদের দলের এ উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত করা হবে। এ পরিষদে দল ও দলের বাইরের অনেক হেভিওয়েট ব্যক্তিও যুক্ত হতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের তালিকা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবারের দলীয় কাউন্সিলে সংগঠনের সর্বস্তরে পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সেই চমক দেখাবেন বলেই দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। আর সেই কাউন্সিলের মধ্য দিয়েই এবার ভারমুক্ত হবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কাউন্সিল প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সাত বছর ধরেই এ কাউন্সিলটি ‘বকেয়া’ হয়ে আছে। রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশের কারণেই এতদিন সম্ভব হয়নি। প্রায় বছর তিনেক আগে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হানা দিয়ে পুলিশ এ-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তবে এবার আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব এ কাউন্সিলের আয়োজন করা হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ফেব্র“য়ারির শেষার্ধেই আমরা কাউন্সিল আশা করছি। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের পাশাপাশি দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সমমর্যাদায় নতুন করে দলের উপদেষ্টা পরিষদ গঠনেরও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে সদস্য থাকবেন সর্বোচ্চ ৩০ জন। অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলের মাধ্যমে এ পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারক মহলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো। কয়েক দিন ধরে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যদের (৩য় পৃষ্ঠায় দেখুন) সঙ্গে পৃথকভাবে এসব বিষয়ে শলাপরামর্শ করে চলেছেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে অন্তত তিনজন সদস্যকে ডেকে নিয়ে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ কথা বলেছেন তিনি। স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, দলের জাতীয় কাউন্সিল একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর আগেও বেশ কয়েকবার কাউন্সিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে কাউন্সিলের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানসহ অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ইতিমধ্যেই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল তথা সম্মেলন প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। মোহাম্মদ শাহজাহান এ প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় এই কাউন্সিলের প্রস্তুতি প্রক্রিয়া আরও আগেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝখানে পৌর নির্বাচনের জন্য স্থগিত রাখা হয়। পৌর নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আবারও তা শুরু করেছি। আশা করছি আগামী মাসের শেষার্ধেই কাউন্সিল সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এ জন্য দলের পক্ষ থেকে শেরেবাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রসহ আরও বেশ কয়েকটি স্থান বরাদ্দ চাওয়া হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কাঙ্খিত কোনো জায়গায় বরাদ্দ পাওয়া না গেলে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের মতো বিকল্প স্থানেও শেষ পর্যন্ত তা করা হতে পারে। কেন্দ্রীয় বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ছোট্ট পরিসরে মাত্র এক দিনের ভিতরই সম্পন্ন করা হবে এবারের জাতীয় কাউন্সিল। এর মধ্যেই ৩৮৬ সদস্যের সাজানো-গোছানো কার্যনির্বাহী কমিটি এবার সম্পূর্ণ ওলট পালট হতে পারে। এ ‘কাউন্সিলঝড়ে’ অনেক বড় বড় নেতাও ছিটকে পড়তে পারেন নির্বাহী কমিটি থেকে। আবার ত্যাগী, যোগ্য, দক্ষ ও দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা ছোট পদের নেতারাও নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান করে নিতে পারেন। তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য একটি নামের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটি থেকে যারা সরে যাবেন কিংবা বাদ পড়বেন তাদের একই সমমর্যাদায় গঠিতব্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হবে। আর এই নতুন উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান করা হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকে। তার নেতৃত্বে এই পরিষদের উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হবেন বিচারপতি টি এইচ খান, বেগম সারোয়ারি রহমান, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক শফিক রেহমান, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ড. আসিফ নজরুল, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, শামছুজ্জামান দুদু, ড. তুহিন মালিক, মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, হারুনুর রশিদ খান মুন্নু, সাবেক শিক্ষা সচিব খন্দকার শহীদুল আলম প্রমুখ। দলের পরবর্তী নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম-মহাসচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদক পদে যারা স্থান পেতে পারেন তাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে একটি প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, বরকতউল্লা বুলু, আমানউল্লাহ আমান, মজিবর রহমান সরোয়ার, ফজলুল হক মিলন, গাজীপুরের সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, আসাদুল হাবিব দুলু, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আ ন ম এহছানুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, নাজিমউদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, গোলাম আকবর খোন্দকার, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, নাদিম মোস্তফা, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন, ব্যারিস্টার রুহিন ফারহান, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শিরিন সুলতানা, নিলোফার চৌধুরী মণি, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, রেহেনা আক্তার রানু, শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু, তাবিথ আউয়াল, সাইফুল আলম নীরব, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শরীফুল আলম প্রমুখ। প্রসঙ্গত, গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রতি তিন বছর অন্তর দলের জাতীয় সম্মেলন তথা কাউন্সিল হওয়ার কথা। কিন্তু ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ সাত বছর পর এবার হতে যাচ্ছে দলটির জাতীয় এই কাউন্সিল।


     এই বিভাগের আরো খবর