,

গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাপের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অভিযোগ প্রদান করেননি মানিক উল্লাহ : সাহায্যের জন্য টিপসই নিয়ে এই নাটক সাজিয়েছে একটি চক্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, বর্তমান ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি ও একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের একটি অভিযোগ ও হবিগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশের প্রতিবেদন নিয়ে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নসহ দিনারপুর পরগনার মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ওপ্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এছাড়া অভিযোগকারী ওই ইউপির নিশাকুড়ি গ্রামের বায়োবৃদ্ধ ও তৎকালীন পাকিস্থানীদের হাতে নির্যাতিত মানিক উল্লার বক্তব্যে ষড়যন্ত্রের তথ্য বের হয়ে এসেছে। এ ব্যাপারে গত দু’ দিন ধরে ওই এলাকার বিভিন্ন লোকজনের সাথে আলাপকালে থলের বিড়াল বের হয়ে আসে এবং এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়ায় জানা গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও সহায়তাকারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। সকলেই এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, নেতৃত্ব ও অধিপত্য বিস্তার নিয়ে সৃষ্ট দু’চাচাতো ভাই বতর্মান চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ ও সাবেক চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ এর মধ্যে বিরোধের জের হিসেবেই একটি স্পর্শকাতর ভিত্তিহীন অভিযোগের নাঠক সাজানো হয়েছে। অনেকেই বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সাবেক চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজের বাবা মরহুম সাজিদুর রহমান মাষ্টার সাহেব ছিলেন পিছ কমিটির মেম্বার। আবুল খায়ের গোলাপ’র বয়স তৎকালীন সময়ে ছিল ১৫/১৬। তার বাবা এলাকার নিরীহ লোকজনসহ মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন। তৎকালীন সময়ে এত অল্প বয়সের ছেলে হয়ে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর তাকে রাজাকার বলা বা যুদ্ধাঅপরাধীর অভিযোগ সাজাঁনো হাস্যকর ছাড়া কিছুই হতে পারে না। এই দু’দিনে সরজমিনে গিয়ে গজনাইপুর ইউপির নিশাকুড়ি, শংকর সেনা, মোহাম্মদপুর, কায়স্থগ্রাম, সাতাইহালসহ নানা স্থানে ঘুরে এবং বয়স্ক লোকদের সাথে আলাপ করে এ সব তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে প্রথমেই অভিযোগকারী মানিক উল্লার নিশাকুড়ি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার সাথে একান্ত আলাপ হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের থাকার স্থান দেয়ার অপরাধে পাক বাহিনীর সদস্যদের হাতে চরম নির্যাতনের শিকার মানিক উল্লার করুন অবস্থা দেখে আক্ষেপ হয়। বয়সের ভারে বিচানায় বেশীর ভাগ সময় একটি আধা ভাঙ্গা ঘরে জীবন যাপন করছেন তিনি। ৫ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক তিনি। বৃদ্ধা স্ত্রী এখনও বেচেঁ আছেন। পাক বাহিনীর নির্মম শিকার হওয়া সত্বেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় কোন দিন নাম লিখান নি। অনেক মুক্তিযোদ্ধারা লোমহর্ষক ঘটনা জানার পরও কেউ একদিন তার খোজ খবর করেন নি। ব্যক্তিগত জীবনের অনেক দুঃখ কাহিনী পর্ব শেষ করে তার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতেই চমকে উঠেন। অশ্র“সিক্ত কন্ঠে বলেন, জীবনের শেষ দিকে এসে একজন ভাল লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে, এই অভিযোগের নায়ক আমাকে বানানো হবে জানলে সাহায্যের জন্য আবেদন করতাম না। বিষয়টি খোলে বলেন, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমাদের এলাকার আব্দুর রউফ নামের এক ব্যক্তি এসে তাকে জানায়, স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর হাতে নির্যাতিত লোকদের সরকার সাহায্য করবে। তা পেতে গেলে একটি আবেদন ও দস্তগত করতে হবে। তিনি সরল বিশ্বাসে একটি কাগজে টিপসই করে আব্দুর রউফের হাতে দেন। কিন্তু চেয়ারম্যান গোলাপ’র বিরুদ্ধে কোথায়ও কোন অভিযোগ দেন নি। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারেন তাকে বাদী সাজিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তা সম্পূর্ণ অসত্য ও মিথ্যা। তাই স্বপ্রনোদিত হয়ে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে গিয়ে একটি এফিডেভিটের মাধ্যমে তার বক্তব্য প্রদান করেন। ওই বক্তব্যে তিনি যে কোন অভিযোগ করেন নি তা উল্লেখ করেছেন। তার ছেলে সুন্দর আলী জানান, এক সময়ের এলাকার দাগী চোর আব্দুর রউফ তার বাবাকে সরকারী সাহায্যের কথা বলে কতগুলো কাগজে টিপসই নেয়। এখনও পর্যন্ত কোন সাহায্যের খবর নেই। অথচ সম্প্রতি পত্রিকায় একটি সংবাদের মাধ্যমে আমি জানি বাবাকে বাদী করে চেয়ারম্যান সাহেবের বিরুদ্ধে একটি সাজানো যুদ্ধাঅপরাধীর অভিযোগ দেয়া হয়েছে। যা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ভাতিজা জিলু মিয়া জানান, তার চাচা মানিক উল্লাহ এলাকার একজন সহজ সরল মানুষ। স্বাধীনতার সময় পাকবাহিনীর হাতে চরম নির্যাতিত হয়েছে। সাহায্যের কথা বলে এলাকার চোর আব্দুর রউফ চাচা’র টিপসই নিয়ে ভাল মানুষের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ করেছে। মানিক উল্লাহ ভাই আব্দুল মন্নাফ বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হঠাৎ একদিন গভীর রাতে তাদের পাশের বাড়ি কায়স্থগ্রামের মৃত মকছুদ মুন্সী (তৎকালীন সময়ে পিছ কমিটির সদস্য) একদল পাকবাহিনীকে নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা করে। এ সময় বড় ভাই মানিক উল্লা ঘরে ফিরলে পাক বাহিনীর সদস্যরা তাকে এবং অপর ভাই মৃত নবীব আলীকে বেদরক মারপিট করে এবং ধরে নিয়ে যায়। গভীর রাতে মিরপুর এলাকা থেকে পাকবাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে আসেন। কিন্তু ওই সময় গোলাপ চেয়ারম্যানকে দেখা যায়নি। তিনি খুব ছোট ছিলেন। তার বাবা মতিউর রহমান সংগ্রামের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তখনকার সময়ে তাদের অবস্থা ভাল ছিল। তিনি বলেন, আমি কেন, দিনারপুর পরগনার একটি লোকও গোলাপ চেয়ারম্যান রাজাকার ছিলেন বলতে পারবে না। অথচ আমার সহজ সরল ভাইকে সাহায্য দেয়ার নাম করে সাদা কাগজে টিপসই নিয়ে একটি ভুয়া অভিযোগ দেয়া হয়। তিনি আব্দুর রউফের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবী করেন। এ ব্যাপারে কথা হয় শংকর সেনা গ্রামের আব্দুস ছুবান বখস, ছনর আলী (গ্রাম সরকার), মোহাম্মদপুর গ্রামের হাসিম উল্লা, লোগাওঁ গ্রামের আছকর উল্লা, কায়স্থগ্রামের কদ্দুছ মিয়া, জাহির উদ্দিন মেম্বার, সিলালের পুঞ্জি গ্রামের আব্দুল কদ্দুছ, নিশাকুড়ি গ্রামের ছাদ উল্লা, মোহাম্মদপুর গ্রামের বিজিন চন্দ্র রায়, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মনিন্দ্র রায়, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর ভাই মহিবুর রহমান চৌধুরী (হান্নান) সহ এলাকার নানা শ্রেণী পেশার মানুষদের সাথে আলোচনা হয়। তাদের প্রত্যেকেরই বর্তমান বয়স ৬০ থেকে ৮০/৮৫। সকলেরই দাবী বতর্মান চেয়ারম্যান ও ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল খায়ের গোলাপের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। গ্রামের লোকজন জানান, মূলত বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যান তারা একে অপরের চাচাতো ভাই। এক বাড়ির মানুষ। তাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তাদের মধ্যে একাধিক মামলা মোকদ্দমাও রয়েছে। সেই বিরোধের জের হিসেবেই এমন নাঠক সাজাঁনো হয়েছে বলে তাদের দাবী। এছাড়া কথিত আব্দুর রউফকে নিয়েও রয়েছে নানা বির্তক। উক্ত রউফ এক সময়ে এলাকার দাগী চোর হিসেবে খ্যাত ছিল। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য চুরির মামলা রয়েছে। একই অভিযোগে একাধিকবার জেল কেটেছে। অথচ বর্তমানে উক্ত রউফ সাবেক চেয়ারম্যানের সান্নিধ্যে রয়েছে। এ ব্যাপারে ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় তিনি ৯ম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত ছিলেন। পাঞ্জাবী কিভাবে, কি পোষাকে এসেছিলো তা বলতে পারবো না। মূল বিষয় হলো আমার চাচাতো ভাই সাবেক চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ সাহেব পর পর দু’বার নির্বাচনে হেরেছেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ভাইকে শান্তিতে থাকতে দিব না। সেই থেকেই আমাকে প্রাণনাশের হুমকীসহ একাধিক বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয়েছে। তিনিই মানিক উল্লার টিপসই কৌশলে রউফ চোরাকে দিয়ে সংগ্রহ করে আমার বিরুদ্ধে উক্ত ভুয়া অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন এ ব্যাপারে আমার কোন র্নিদিষ্ট ব্যক্তি স্বাক্ষী নেই। গজনাইপুর ইউনিয়নসহ দিনারপুর পরগনার ষাটোর্ধ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ স্বাক্ষী। স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় আমার পিতা বা আমার ভুমিকা কি ছিল, তারাই তা বলবেন। তার অভিযোগ হবিগঞ্জের গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তাকে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিবেন বলেও জানান। এছাড়া যোদ্ধাপরাধীদের নামের তালিকা তৈরীর কাজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশের ন্যায় নবীগঞ্জেও যখন তৈরী হয়। তখন নবীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে আমার ইউনিয়নে কোন রাজাকার নাই বলে একটি প্রত্যায়ন পত্র প্রদান করা হয়েছিল। এছাড়া আমার ব্যক্তিগত অবস্থা ও চারিত্রিক ঘটনা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রাক্তন মন্ত্রী মরহুম জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী এমপি, মুক্তিযোদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার প্রাক্তন এমপি মাহবুবুর রব সাদী সাহেবও প্রত্যায়ন পত্র প্রদান করেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর