,

হবিগঞ্জের খোয়াইসহ সকল নদী জলাশয় দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবী

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস ২০১৬ উপলক্ষ্যে হবিগঞ্জের খোয়াইসহ জেলার সকল নদী-জলাশয় দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবী জানিতেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার। গতকাল ১৪ মার্চ নদী রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে স্কুল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও নদী পাড়ের বাসিন্দাদের নিয়ে আয়োজন করা হয় নদী বিষয়ক আলোচনা সভা, কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের। সকাল ৯টায় দ্যা নিউ ব্লুু-বার্ড স্কুল প্রাঙ্গণে বাপা জেলা সভাপতি অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদ এর সভাপতিত্বে আয়োজিত সভার সূচনা বক্তব্য রাখেন খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও জেলা বাপা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল। “এসো নদী রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই” শীর্ষক আলোচনা পর্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্যাকস এর সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ, কবি আছমা খানম হ্যাপী, ব্লু-বার্ড স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাছির উদ্দিন, নাট্য সংগঠক মোক্তাদির হোসেন ও সংস্কৃতিকর্মী শেখ ওসমান গণি রুমি প্রমুখ। বাপার পক্ষ থেকে বলা হয়,, হবিগঞ্জে নদী ও খাল বিলগুলো চরম হুমকির মুুখে। দখল-দূষণে মা-রূপী নদীগুলোকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। খোয়াই একসময় খরস্রোতা নদী ছিল। উজানে ভারত সরকারের পানি সীমিতকরণ, দেশের প্রভাবশালী মহল কর্তৃক নদী দখল, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন, নদীর মধ্যে আবর্জনা ফেলে ভাগার তৈরী করা ও নদী ড্রেজিং না করার কারণে নদীর ধারা দিন দিন ক্ষীনতর হয়ে যাচ্ছে। অথচ এই নদীর উপর নির্ভরশীল জেলার কৃষি ও বাণিজ্যের বিশাল অংশ। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানির প্রধান আধার পুরাতন খোয়াই’র বিভিন্ন অংশ দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই হবিগঞ্জ শহরে দেখা দেয় কৃত্রিম বন্যা। শহরের নীচু এলাকা জলমগ্ন হয় অহরহ, বাসাবাড়ীতে ঢুকে বৃষ্টির পানি। গত প্রায় এক দশক ধরে নাগরিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে পুরাতন খোয়াই রক্ষা ও সংরক্ষণ করার জন্য কিন্তু দিনের পর দিন ভরাট ও দখলের মাত্রা বেড়েছে বহুগুণে। সাম্প্রতিককালে মাহমুদাবাদসহ পুরাতন খোয়াই’র বিভিন্ন অংশ পরিকল্পিতভাবে প্রভাবশালীরা ভরাট করে নিজেদের দখলে নিচ্ছে। এছাড়া মাধবপুরে সোনই নদীর উপর অবৈধ স্থাপনা এবং ঐ অঞ্চলে গড়ে উঠা কল-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য সুতাং নদীসহ বিভিন্ন খালে ফেলার ফলে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ- প্রতিবেশের। সুতাং নদীর পানি কালো ও দূর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে। নদী ও খালবিল হয়ে পড়ছে মৎস্য শূণ্য। নদী তীরবর্তী জন-মানুষের জীবন-জীবিকার টানাপোড়েন, খাদ্য-পানীয় সমস্যা ও পানিবাহিত নানাবিধ রোগসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে নদী তীরের বাসিন্দারা। এসময় বক্তারা হুন্ডুরাসের নদী সংগ্রামের নেত্রী বেরতা কাসেরেস এর নদী সংগ্রামের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করেন। গত ৩ মার্চ নদী আন্দোলনের এই নেত্রীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি গত বছর পরিবেশ আন্দোলনে অবদানের জন্য গোল্ডম্যান পরিবেশ পুরস্কার পেয়েছিলেন। বক্তারা বেরতা কাসেরেস এর হত্যার বিচার দাবী করেন। আলোচনা শেষে নদীর সাথে শিশুদের পরিচয় ঘটাতে আয়োজন করা হয় নদী বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতার। শিশু-কিশোরদের মাঝে বিভিন্ন প্রশ্ন রাখেন অতিথিবৃন্দ। অংশগ্রহণকারী শিশুদের মাঝে বিশিষ্ট আলোচনাচিত্রী আনসার উদ্দীন খান পাঠানের তোলা খোয়াই নদীর একটি সুন্দর ছবি পুরষ্কার হিসেবে তুলে দেয়া হয়।


     এই বিভাগের আরো খবর