,

ফাগুয়া উৎসবে মেতেছে চুনারুঘাটের চা শ্রমিকরা

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ বসন্তের রং-রূপে নতুন হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। আগাম বৃষ্টিতে চা-বাগানের রুক্ষ দৃশ্য দ্রুত সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে। গাছে গাছে এখন দুটি পাতা একটি কুঁড়ি। প্রতিবছর মার্চ মাস থেকেই দু-এক পশলা বৃষ্টি হয়। এবার ফেব্র“য়ারী মাস থেকেই বৃষ্টিপাতের দেখা মিলেছে। ফলে এবার মওসুমের আগেই চা পাতা চয়নে নেমেছেন চা কন্যারা। এর মধ্যেই চা বাগানের আনাচে-কানাচে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ফাগুয়া উৎসব। বসন্তের রং লেগেছে চুনারুঘাটের বিভিন্ন চা বাগানে। মজুরি বৃদ্ধির কারণে এককালীন এক বছরের বোনাস পাওয়া শ্রমিকদের ফাগুয়া উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ২৩ মার্চ থেকে এ উৎসব শুরু হলে চা বাগানে ৫ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এ উৎসব চলবে আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত। লাখ লাখ চা গাছ দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি টিলার পর টিলা। সবুজের সাথে বিবর্ণ চা শিল্পাঞ্চলের মানুষগুলোর মাঝে রংধনুর সাতরং ভর করেছে। তারা মেতে উঠেছে রঙের উৎসব ফাগুয়ায়। বেগুনি, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা লাল- কী নেই? যে দিকে তাকানো যায় সেদিকেই রঙের ছড়াছড়ি। নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ সব বয়সীরা মেতে ওঠেছে ফাগুয়া উৎসবে। একে অপরের দিকে রং ছুঁড়ে মারছে, গান গাইছে, নাচছে। তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী এমনকি ৭০-৭৫ বছরের বৃদ্ধরাও আনন্দ মেতে উঠেন। প্রাণের উচ্ছ্বলতায় বয়সের ভেদাভেদ ভুলে গেছে সবাই। চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর, চন্ডিছড়া, নালুয়া, আমু, লস্করপুর, চাকলাপুঞ্জি, রেমা, পারকুল, শ্রীবাড়ি, দেউন্দিসহ বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা যায় এক নান্দনিক দৃশ্য। একে অপরকে আরির দিয়ে রাঙিয়ে দিচ্ছে। এমনকি চা বাগান এলাকায় কেউ এলে তাকে আনন্দ সহকারে রাঙিয়ে দেয়া হচ্ছে। ছেলেরা মেয়ে সেজে নাচগান আর রং আবির নিয়ে মেতে উঠেছে। উপজেলার ছোট বড় ২৪টি চা বাগানেই চলছে এ উৎসব। চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী নেতা স্বপন সাঁওতাল জানালেন- প্রতিবছর পূর্ণিমা তিথিতে ফাল্গুন মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ফাগুয়া উৎসব চলে। উৎসব উপলক্ষে চা বাগানে ২৩, ২৪ ও ২৫ মার্চ তিন দিনের ছুটি দেয়া হয়েছে। এর সাথে শনিবার স্বাধীনতা দিবস ও রবিবার বাগানের সরকারি ছুটি থাকায় এবার বাগান ৫ দিনের লম্বা ছুটিতে পড়েছে। চা বাগানে এ উৎসব যে দিন শুরু হয় সেই দিন থেকে আরও ১৫ দিন পর্যন্ত তার রেশ থাকে। উৎসব শুরুর আগে থেকে রাতের বেলায় চা বাগান লাখড়ি সংগ্রহ করে থাকে। তিনি আরও জানান- ফাগুয়া উৎসব উৎপত্তি ভারত থেকে। সাধারণত হোলি খেলা উৎসব বলে। চা শ্রমিক নেতা কাঞ্চন পাত্র জানান- আজীবণ অভাবের সংসারের চা শ্রমিকরা ফাগুয়া উৎসব এলে তাদের ঘরে ঘরে আনন্দ উৎসব দেখে মনেই হয়না তারা ৮৫ টাকা মজুরি শ্রমিক। সারা বছরে এই এক সপ্তাহই তারা উৎমকে মাতিয়ে রাখে সারা বাগান। ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় পিঠা-পুলিসহ নানা মুখরোচক খাবারের। চা শ্রমিকদের কথা বলে জানা যায়- ছন্দ-তাল লয়হীন এসব চা শ্রমিকের কঠিনতম জীবনে ফাগুয়া উৎসব এসেছে মহান্দরে জোয়ার নিয়ে সেই জোয়ারে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি চা-বাগানের অনাচে-কানাচে। শুধুই রং, শুধুই রঙের ছড়াছড়ি। ছোপ ছোপ রঙের দাগ লেগেই থাকে চা বাগানের অলিগলিতে, শ্রমিক লাইন, বাড়িঘরের আঙিনায়। ফাগুয়ার উৎসবে নাইওর এসে সীমার পরিচিত সেই পাহাড়ি ছড়াই অবগাহন করেন, কৈশোরের ফেলে যাওয়া খেলার সাথীদের সঙ্গে প্রাণে প্রাণ মেলান, চা-বাগানের ছায়াবৃক্ষের মগডালে সবুজ ঘুঘুদের ডানা ঝাপটানোর মতোই উচ্ছলতায় মেতে উঠেন।


     এই বিভাগের আরো খবর