,

নবীগঞ্জে নদী থেকে কলেজ ছাত্রী তন্নীর লাশ উদ্ধার নিয়ে তোলপাড় ॥ থানায় মামলা দায়ের, প্রেমিক রানুর পর এবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে পরিবারের অন্য সদস্যরা সন্ধিগ্ধ আসামীদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত

জসিম তালুকদার ॥ নবীগঞ্জের শাখা বরাক নদী থেকে হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্ধি অবস্থায় কলেজ ছাত্রী তন্মী রায় (১৮)’র লাশের ময়না তদন্ত শেষে গতকাল বুধবার বিকালে জয়নগর শশ্মানঘাটে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে নিহত তন্মী রায়ের পরিবারসহ শিবপাশা শ্যামলী আবাসিক এলাকায় চলছে শোকের মাতম। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় নিহত তন্মী রায়ের পিতা বিমল রায় বাদী হযে নবীগঞ্জ থানায় অজ্ঞানামা আসামীদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তন্নী নিখোঁজের পর থেকেই পুলিশ নিহত তন্মীর মোবাইল কল লিষ্ট সংগ্রহসহ জোর তদন্ত শুরু করে। সন্ধিগ্ধ আসামীদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে ২/৩ দিনের মধ্যেই নির্মম এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোবারক হোসেন জানিয়েছেন। এদিকে বুধবার তন্নীর প্রেমিক রানু রায়ের বাড়ির ফটকে তালা ঝুলিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা লাপাত্তা হয়েছেন। এদিকে তন্নী হত্যার প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে হিউম্যান রাইট রিভিউ সোসাইটি নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন মানববন্ধন করেছে। কলেজ ছাত্রী তন্মী রায়ের নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার পুর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেছেন হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানাযায়, গত শনিবার বেলা দেড় টার দিকে তন্মী রায় ইউ.কে আই,সিটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেড় হয়ে আর ফিরেনি। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী করার ৩ দিনের মাথায় উক্ত কলেজ ছাত্রী তন্মী রায়ের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ ইউ.কে আইসিটি ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ ফয়ছল আহমেদ চৌধুরীর সাথে কথা বলে জানাযায়, ৩ মাসের কম্পিউটার র্কোসে তন্মী রায় বিত ২৭ জুলাই ভর্তি হয় ওই সেন্টারে। সপ্তাহে ২/৩ দিন ক্লাস করতো তন্মী রায়। সর্বশেষ ১০ সেপ্টেম্বর ক্লাশ করে তন্মী। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আইসিটি সেন্টারে ক্লাশ করার কথা বলে বাসা থেকে বের হলেও তন্মী রায় ওই দিন ক্লাশে যায়নি বলে জানান অধ্যক্ষ।
এ ব্যাপারে অফিসার ইনর্চাজ মোঃ বাতেন খান বলেন, মঙ্গলবার বেলা সোয়া ৪টার দিকে মোবাইল ফোনে সংবাদ পেয়ে সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। অনুমান ৩ দিন বা অধিক সময়ের শরীরে ফোলা, পচন ও মূখ মন্ডল বিকৃত অবস্থায় মৃতদেহ দেখতে পেয়ে তার পরিবার-পরিজন ভাই ও বাবার সনাক্তমতে ছুরতহাল রির্পোট তৈরীসহ আলামত জব্দ করা হয় এবং ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় মেযেটির নাম তন্মী রায় পিতা বিমল রায়, পৌরসভার শ্যামলী আ/এ বাসিন্দা ও নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে বলে জানাযায়। উক্ত তন্মী রায় গত ১৭ সেপ্টম্বর দুপুরে নবীগঞ্জ ইউ.কে আইসিটি ইন্সটিটিউটে কম্পিউটার প্রশিক্ষনের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে না আসায় তার পিতা থানায় নিখোজঁ সংক্রান্ত জিডি করেন। উক্ত জিডির প্রেক্ষিতে পুলিশ আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহন কালে মঙ্গলবার উল্লেখিত সময় ও স্থান থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, এটা একটি নিঃসন্দেহে নির্মম হত্যা কান্ড বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণ করা হচ্ছে। প্রেম সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা সংঘটিত হতে পারে বলেও ধারনা করেন তিনি। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে হত্যাকারী যেই হউক তদন্ত সাপেক্ষ সন্ধিগ্ধ ও জড়িতদের গ্রেফতারসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনাও করেন তিনি। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু তন্মী রায়ের নির্মম হত্যাকারীদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। অপর দিকে গতকাল বুধবার মহিলা এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী নিহত কলেজ ছাত্রী তন্মী রায়ের বাসায় গিয়ে নিহতের পিতা-মাতা, ভাইসহ স্বজনদের শান্তনা দেন। এ সময় তারা তন্মী রায়ের নির্মম হত্যাকারীদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। এদিকে মামলার বাদি নিহত তন্নীর পিতা বিমল রায় মামলায় কাউকে নির্দিষ্ট করে আসামী না করলেও মামলার অভ্যন্তরে তন্নীর প্রেমিক রানু রায় এবং ২০১০ইং সালে তার মেয়েকে ইভটিজিংকারী আনজব আলী ও আলকাছ এর নাম উল্লেখ করেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর