,

হবিগঞ্জ নিউ হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় দুই নবজাতকের মৃত্যু : ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে রফাদফা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ নিউ হসপিটাল (প্রাঃ লিঃ) হাসপাতালের ডাক্তারের গাফিলতি ও ভুল চিকিৎসায় দুই নবজাতক ও স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে রফাদফা হয়েছে। গত শনিবার রাতে তেঘরিয়া গ্রামে সঙ্গীয় লোকদের নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক আবুল কাশেম গৃহবধু নাসিমার স্বামী রিকশা চালক সায়েদ মিয়ার হাতে এ টাকা তুলে দিয়েছেন বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে। তাই নয়, গত রবিবার রিকশা চালক সায়েদ মিয়াকে দিয়ে এফিডেভিট করিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এফিডেভিটে রিকশা চালক সায়েদ মিয়া তার স্ত্রী ও নবজাতকের মৃত্যুর পেছনে হবিগঞ্জ নিউ হসপিটাল (প্রাঃ লিঃ) হাসপাতালের কোন হাত নেই বলে স্বীকার করেন। এ ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য গত শনিবার বিকাল ৪টার দিকে তেঘরিয়া গ্রামের সায়েদ মিয়া তার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা উঠলে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। নাসিমাকে দেখে ডাক্তার আলট্রা¯েœা করার পরামর্শ দেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, নাসিমার গর্ভে জমজ বাচ্চা রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ঠ ডাক্তার তাকে সিজার করাতে বলেন। কিন্তু টাকার অভাবে তিনি সিজার করাতে না পেরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখতে এলে হবিগঞ্জ প্রাইভেট হসপিটাল লিমিটেডের নিয়োজিত দুই রিকশা চালক দালাল মানিক ও শহীদের খপ্পরে পড়ে। তারা কম টাকায় সিজার করানোর কথা বলে ওইদিনই নাসিমাকে হবিগঞ্জ প্রাইভেট হসপিটাল লিমিটেডে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, সিজার করাতে খরচ হবে ৭ হাজার টাকা। তার কথামতো রিকশা চালক সায়েদ মিয়া রাজি হলে নাসিমাকে সিজারিয়ান করানোর ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ঠ ডাক্তার রাজিয়া সুলতানা অপারেশন করার সময় নাসিমার পেট থেকে শিশু দুইজনকে বের করতে পারেননি। এক পর্যায়ে নাসিমার পেটে রেখে অপর নবজাতককে কেটে বের করেন তারা। এ সময় এক শিশু মারা যায় এবং নাসিমার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। তড়িগড়ি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাসিমাকে ওই দিন সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু টাকার অভাবে স্ত্রীকে সিলেট নিয়ে যেতে পারবেন না বলে ওই দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায় রিকশা চালক সায়েদ আলী। তার বক্তব্য শুনার পর তারা জানান, চুক্তির ৭ হাজার টাকা দিয়ে যেতে। তা না হলে নাসিমাকে সিলেটে নিয়ে যেতে দেয়া হবে না। অনেক চেষ্টার পর ৩ হাজার টাকা হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে দিয়ে নাসিমাকে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় ছায়েদ মিয়া। সেখানকার ডাক্তাররা ওইদিনই নাসিমার পেট থেকে অপর শিশুকে মৃত অবস্থায় বের করেন। এক পর্যায়ে ওই হাসপাতালে ৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত বুধবার রাত ১টার দিকে নাসিমা মারা যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামে দুই মৃত নবজাতকসহ নাসিমাকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে সাংবাদিকরা ছুটে যান হবিগঞ্জ হসপিটাল (প্রাঃ লিঃ) হাসপাতালে। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তাদের এখানে এ ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সাংবাদিকরা রিকশা চালক সায়েদ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে সে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানায়, দুই দালালের খপ্পরে পড়ে কম টাকায় চিকিৎসার আশায় ওই হাসপাতালে গিয়েছিল। তারা তার স্ত্রীর অপারেশন করার সময় এক নবজাতককে মৃত অবস্থায় বের করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণসহ বিভিন্ন কারণে তার স্ত্রীর অবস্থা আশংকাজনক হলে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ তড়িগড়ি করে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ঠ ডাক্তার নাসিমার এক নবজাতককে মৃত অবস্থায় পেট থেকে বের করে আনে এবং নাসিমাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখেন। চিকিৎসাধীন থাকায় অবস্থায় তিন দিনের মাথায় নাসিমা মারা যায়। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের স্থানীয় সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশ হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে গত শনিবার রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কতিপয় ব্যক্তিদের নিয়ে রিকশা চালক সায়েদ মিয়ার বাড়ি যান এবং তার হাতে ৭ হাজার টাকা দিয়ে রবিবার কোর্টে এফিডেভিট করান। সুত্র জানিয়েছে, হাসপাতাল পরিচালকের সাথে যাওয়া লোকজন রিকশা চালক সায়েদ মিয়াকে চাপ প্রয়োগ করে মৃত্যুর ঘটনাটি অস্বীকার করিয়েছেন। এফিডেভিটে সায়েদ মিয়া উল্লেখ করে তার স্ত্রীর মারা যাওয়ার পেছনে হবিগঞ্জ হসপিটালের কোন হাত নেই। এ জন্য সে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ি করে না। এতে করে জনমনে প্রশ্ন উঠছে, যদি চিকিৎসা ও অপারেশনে হবিগঞ্জ হসপিটালের কোন গাফিলতি না থাকে, তাহলে কেন সায়েদ মিয়াকে দিয়ে এফিডেভিট করানো হয়? সম্প্রতি হবিগঞ্জের একটি কিনিকে ভুল ব্যবস্থাপত্রের কারণে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে স্থানীয় সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ হলে সিভিল সার্জন ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্থ করেন। কিন্তু হবিগঞ্জ হসপিটালের গাফিলতির কারণে ৩ জনের মৃত্যু হলেও সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।


     এই বিভাগের আরো খবর