,

দালাল সুহেলের খপ্পরে পড়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে হবিগঞ্জের নারী

জুয়েল চৌধুরী ॥ হবিগঞ্জের নারী পাচারকারী সুহেল মিয়া বিদেশ পালিয়ে যাবার পায়তারা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলে সে এ পায়তারা করছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী দুই মহিলা। জানা যায়, সম্প্রতি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বারাপইত গ্রামে সুহেল মিয়া নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নারী পাচারের অভিযোগ উঠে। সে নারীদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। দুই মাস আগে সুহেল তার পুর্ব অনন্তপুর গ্রামের আলকাছ মিয়ার স্ত্রী প্রাণ কোম্পানীর শ্রমিক খাদিজা খাতুন (৩০) কে বিদেশ পাঠানোর নামে ঢাকায় নিয়ে যায়। শুধু খাদিজাই নয়, সুহেলের খপ্পর থেকে বাদ পড়েনি তার চাচাতো বোন সুরুজ আলীর কন্যা হনুফা আক্তার (২৮), নিলুফা (৩০), কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার বাজুকা গ্রামের নীলা বেগম, বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের জুলেখা (২৫), ছয়ফুল (২৭), মিনারা (২৮)। দালাল সুহেল তাদেরকে চাকুরীর প্রলোভন দিয়ে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। বেশি অর্থ উপার্জনের আশায় সুহেলের ফাঁদে পা দেয় এ সব সহজ সরল নারী ও গৃহবধুরা। সুহেল পাসপোর্ট বানিয়ে দেবার কথা বলে খাদিজার নিকট ৬০ হাজার টাকা, ছয়ফুলের নিকট থেকে ১৫ হাজার টাকা, হনুফা ও নিলুফা দুই বোনের নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা, নীলা বেগমের নিকট থেকে ৩০ হাজার টাকা, জুলেখার নিকট থেকে ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে তাদেরকে ট্রেনিংয়ের কথা বলে ঢাকা নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে ফোন ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয় এবং নারী পাচারকারী চক্রের নিকট তুলে দেয়। তারা ওই নারীদের চোখ বেঁেধ দুতলার একটি আন্ডারগ্রাউন্ডের আটকে রাখে। এদের মাঝে খাদিজা টয়লেটের কথা বলে কৌশলে তাদের খপ্পর থেকে বের হয়ে আসে এবং পুলিশের সহযোগিতা নেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। পুলিশ মারফত খবর পেয়ে খাদিজার ভাই আয়াত আলী তার বোন খাদিজাসহ নিলুফা, জুলেখা, ছয়ফুল, মিনারা বেগমকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ নিয়ে আসে। পরে এ বিষয়টি খাদিজার ভাই আয়াত আলী এলাকার মেম্বার ইদ্রিস আলীসহ মুরুব্বীদের অবগত করে। মুরুব্বীরা সুহেলের পিতা মানিক মিয়াকে জানালে তিনি জানান, তার ছেলের খোঁজ খবর তিনি রাখেন না। এদিকে সোহেলের খপ্পরে প্রতারিত হয়ে ওই সব নারীরা স্বামীর সংসার হারিয়েছেন। সন্দেহ ও ভুলবুঝে তাদেরকে অনেক স্বামীরা বিদায় করে দিয়েছে। ফলে তারা স্বামীর গৃহ হারিয়ে বাসা বাড়ি, হোটেল রেষ্টুরেন্টে কাজ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এর আগে সুহেল মিয়ার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম ভাদৈ গ্রামের সমসু মিয়া সদর থানায় অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন মানিক মিয়ার পুত্র সুহেল মিয়া গত ১ বছর ধরে হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থান থেকে নারীদেরকে ওমান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে লোভনীয় চাকুরীর প্রলোভন দিয়ে পাচার করছে। সেখানে গিয়ে নারীরা দালালদের খপ্পরে পড়ে নারীরা অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। দালালদের কথামতো না চললে নারীদের উপর নির্যাতনসহ নিপীড়ন চালানো হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। শুধু সমসু মিয়ার স্ত্রীই নয়, বারাপইত গ্রামের সমুজ মিয়ার কন্যা সুবর্না আক্তার (২০) কে চাকুরী দেয়ার কথা বলে ওমানে পাঠিয়েছিল সুহেল। সেখানে গিয়ে সুবর্না দালালের খপ্পরে পড়ে। সুবর্ণা কোথায় আছে জানতে পারছে না তার পরিবার। শুধু সুবর্নাই নয়, একই গ্রামের সমছু মিয়ার স্ত্রী জরিনা আক্তারকেও একই কায়দায় ওই দালাল দুবাই পাঠায়। তারও কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে জরিনার স্বামী সমসু মিয়া বাদি হয়ে দালাল সুহেল মিয়া, সমুজ আলীসহ বেশ কয়েকজনকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করে। স্থানীয়রা জানান, সুহেল গত এক বছরে শুন্য থেকে কোটিপতি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে দালাল সুহেল জানায়, ঢাকার কামাল আহমেদ নামের সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার মাধ্যমে দেড় বছরে সে হবিগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় শতাধিক নারীকে ওমান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে পাঠানোর কথা বলে পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর