,

নবীগঞ্জে কলেজ ছাত্রী তন্নী হত্যাকান্ড : খুনি প্রেমিক রানু গ্রেফতার —আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি – নবীগঞ্জ ইউ.কে আইসিটি ইন্সটিটিউটের শিক্ষকের সাথে তন্নীর প্রেম : রাগান্বিত হয়ে গলা টিপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে তন্নীকে ॥ পরে লাশ বস্তাবন্দি করে নদীতে ফেলে দেয়

মোঃ জুয়েল চৌধুরী/মতিউর রহমান মুন্না/জসিম তালুকদার ॥ নবীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর তন্নী হত্যা মামলায় পলাতক আসামী প্রেমিক রানু রায় (২২) কে ১৮ দিনের মাথায় ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে সে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত সুলতানার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে সে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা প্রদান করেছে। ডিবির ওসি আজমিরুজ্জামান জানান, আটক রানু রায় তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করে ঘটনার দিন গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে রানু রায়ের ফাঁকা বাসায় দেখা করতে যায় তন্নী। তখন একাধিক প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে রানু রায়ের সাথে তার বাকবিতন্ডা হয়। ঘটনার দিন দুজনেই শারিরীকভাবে অসুস্থ ছিল। ঘটনার কিছুদিন আগ থেকে তন্নীর একাধিক সম্পর্ক নিয়ে দুজনের মাঝে মান অভিমানের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ঘটনার দিন তন্নী সব অভিমান ভুলে অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রেমিককে দেখতে তার বাড়িতে যায়। এসময় রানু রায়ের বাসা ফাঁকা ছিল। তার পিতা-মাতা বাসায় ছিল না। এসময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেদিন দুজনের মাঝে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়। কথাবলার এক পর্যায়ে ফের উঠে আসে তন্নীর একাধিক প্রেমের সর্ম্পকের বিষয়টি। নবীগঞ্জ ইউ.কে আইসিটি ইন্সটিটিউটের জনৈক শিক্ষকের সাথে তন্নীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই শিক্ষকের স্ত্রী বিদেশে থাকে। এ বিষয় নিয়েই ওই দিন তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এসময় দুজনের মধ্যে তুমুল কথাকাকাটির এক পর্যায়ে রানু’র গালে থাপ্পর মারে তন্নী। এতে রাগান্বিত হয়ে উঠে রানু রায়। এসময় সে তন্নীর গলাটিপে ধরে। এতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায় তন্নী। তন্নী মারা গেলে সে ঘাবড়ে যায়। ভয় ও আতংকে তন্নীর নিথর দেহ লুকানোর চেষ্টা করে রানু। এ সময় ঘরে থাকা বস্তায় তন্নীর দেহকে ভরে রাতের অন্ধকারে বাড়ির পাশের একটি নদীতে ফেলে দেয়। এরপর সে ঢাকায় পালিয়ে যায় এবং একটি দোকানে কাজ নেয়। গত শুক্রবার ডিবি পুলিশ মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান জানতে পেরে ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় অভিযান চালায় এবং ভাদুগড় বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। গতকাল শনিবার তাকে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত সুলতানার আদালতে হাজির করা হলে সে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে উল্লেখিত বিবরণ প্রদান করে। গতকাল সন্ধ্যায় তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসম সামসুর রহমান ভুইয়া, সহকারি পুলিশ সুপার সুদিপ্ত রায়, সাজিদুর রহমান, ডিবির ওসি আজমিরুজ্জামানসহ পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় পুলিশ সুপার আরো জানান, আটক রানু রায় পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তন্নীকে হত্যা করার ইচ্ছে তার ছিল না, উত্তেজনার বশে গলাটিপে ধরলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে তন্নীর মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, ওই মামলায় তৃতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার ১দিন পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হবিগঞ্জের ডিবি পুলিশের ওসি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আজমীর হোসেন, এসআই সুদ্বীপ রায় ও এস আই করিমের নেতৃতে একদল পুলিশ গত শুক্রবার বিকেলে ব্রাক্ষণবাড়ীয়া বাস স্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে রানু রায়কে গ্রেফতার করে। এর পূর্বে প্রথমে নবীগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই মোঃ মোবারক হোসেন ও নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল হাসান দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন।


     এই বিভাগের আরো খবর