,

নবীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর কৃষক মোক্তাদির হত্যা মামলার রায় : ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড – ২৭ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর কৃষক মোক্তাদির আলী হত্যা মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদন্ড ও ২৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেছে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। উক্ত মামলায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক মাফরোজা পারভীন এ রায় দেন। মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্তদের মধ্যে আনিছ ও ফরাস কারাগারে এবং জমশেদ, বজলু ও নূর ইসলাম পলাতক রয়েছে। এর মধ্যে জমসেদ আলী প্রায় ২/৩ বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মামলার প্রধান আসামী এবং মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামী নুরুল ইসলাম বর্তমানে ইতালীতে অবস্থান করছেন। অপর ফাঁিসর আসামী বজলু মিয়া দেশে অবস্থান করছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। উক্ত রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও নিহত মুক্তাদির আলীর ভাই মোশাহিদ আলী ও তার পরিবার। ঘাতকদের দন্ডাদেশের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দ উচ্ছাস লক্ষ্য করা গেছে। এলাকাবাসী জানান, উক্ত রায়ের ফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা থেকে লোকজন বিরত থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ২০ ফেব্র“য়ারী দুপুরে নবীগঞ্জ উপজেলার দিঘলবাগ ইউনিয়নের বোয়ালজুর গ্রামের মোক্তাদির আলীর আত্বীয় গিয়াস উদ্দিনের জমির ধান খায় একই গ্রামের প্রভাবশালী নূর ইসলামের গরু। এতে প্রতিবাদ করলে নূর ইসলামসহ তার দলের লোকজন অস্ত্রশস্ত্রসহ হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে এবং নিহতের বাড়িঘরে হামলা করে ভাংচুর করে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে প্রতিপক্ষের লোকজনের হাতে নিহত মুক্তাদির আলীর ভাইসহ স্বজনরা গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মোশাাহিদ আলী বাদী হয়ে ৪০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। উক্ত মামলায় ১৬ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিজ্ঞ বিচারক হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন এ রায় প্রদান করেন। এ সময় আদালতে ১৫ জন আসামী হাজির ছিলেন। তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ১৭ জন আসামী পলাতক রয়েছে। মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্তদের মাঝে আনিছ উল্লা ও ফরাস উল্লা কারাগারে এবং জমশেদ আলী, বজলু মিয়া ও নূর ইসলাম পলাতক রয়েছে। এরমধ্যে নুর ইসলাম ইতালী, বজলু মিয়া দেশে অবস্থান করছে। অপর আসামী জমসেদ আলী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার ক্রাইমজোন নামে খ্যাত বহুল আলোচিত দীঘলবাক ইউনিয়নের বোয়ালজুর গ্রাম। দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’ দল লোকের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অগ্নিসংযোগ, খুনসহ একাধিক মামলা-মোকদ্দমার ঘটনা ঘটে। এক গ্র“পের নেতৃত্ব দেন ইতালী প্রবাসী নুর ইসলাম, ফরাস আলী ও আবির মিয়া। অপর গ্র“পে রয়েছেন গিয়াস উদ্দিন । নিহত মুক্তাদির ও মজিদ উল্লা গিয়াস উদ্দিন পক্ষের লোক বলে জানাগেছে। তারই জেরধরে গরু ধান খাওয়ার তুচ্ছ ঘটনা’কে কেন্দ্র করে ঘাতকরা মুক্তাদির আলীকে হত্যা করে। পরবর্তীতে ২০১৩ সনে একই গ্র“প বোয়ালজুর গ্রামের মজিদ উল্লাকে হত্যা করে। উক্ত হত্যাকান্ডের মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। মুক্তাদির হত্যাকান্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামী অনেকই মজিদ উল্লা হত্যা মামলার আসামী রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার ক্রাইম জোন হিসেবে খ্যাত বোয়ালজুর গ্রামে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পও বসানো হয়েছিল। বর্তমানে উক্ত গ্রামের পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও মুক্তাদির আলী হত্যাকান্ডের মামলায় ঘাতকদের ফাসিঁসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। নিহতের পরিবারসহ গ্রামবাসী উক্ত রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। মামলার বাদী মোশাহিদ আলী জানান, তার নিহত ভাইকে ফিরে না পেলেও ঘাতকদের সাজা প্রদান করায় তিনি সন্তুষ্ট। স্থানীয় ওর্য়াড মেম্বার উক্ত রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটা এলাকার জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। ঘটনাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেয়ায় ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি সিরাজুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত পিপি আব্দুল আহাদ ফারুক ও আলহাজ্ব সালেহ উদ্দিন আহমেদ। আসামীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এড. খালেকুজ্জামান চৌধুরী।


     এই বিভাগের আরো খবর