,

বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহালদশা : আয়া দিয়ে চলছে চিকিৎসা : বিকল এক্সরে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবল উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বেহালদশা। আয়া দিয়ে চলছে রোগীদের চিকিৎসাসেবা। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সরকারি পদক্ষেপও কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। আয়া মুক্তা তার কাজ বাদ দিয়ে নিরবধি রোগিদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যখন যা প্রয়োজন সবই তিনি করছেন। দায়িত্বে থাকা নার্স মধুমিতা জানালেন, মুক্তা আয়ার পদে চাকুরী করলেও সে শিক্ষিতা মেয়ে, ইন্টারমেডিয়েট পাশ। এ সম্পর্কে তার ভাল ধারনা আছে। সে চিকিৎসাও দিতে পারে। পেছন থেকে আয়া মুক্তা বলে উঠেন আপনারা কি সাংবাদিক, তখনই কথা বলা বন্ধ করে দেন নার্স মধুমিতা। জনবল সংকট ও যন্ত্রপাতি বিকলসহ নানা কারনে চিকিৎসা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটির। দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ মুল্যবান যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে দুই লক্ষ অধ্যুষিত উপজেলাবাসী কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে ২০১০ সালের ২৭ মে তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্জ দেওয়ান ফরিদ গাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি তিন তলা ভবন উদ্বোধন করেন। ভবন উদ্বোধনের ছয় বছর পর ৩০ শয্যার জনবল সংকটের মধ্য দিয়েই চলতি বছরের ২২ শে আগষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন হয়। ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালুর অনুমোদনের দুই মাস পরেও ৩১ শয্যার নয় জনের পদে চার জন ডাক্তার, পনের জন নার্সের পদে ২ জন। ৫ বছর ধরে সনোলজিষ্ট, মেডিকেল টেকনেশিয়ান ও ফার্মাসিস্ট পদে লোক শূণ্য। বিকল এক্সরে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ মুল্যবান যন্ত্রপাতি এখনও সংস্কারের কোন লক্ষণ নেই। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নীচ তলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দরজা বন্ধ, খোজঁ নিয়ে জানা যায় তিনি বাহিরে প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। আর আবাসিক মেডিকেল অফিসার তিনি তাঁর নির্ধারিত রুমে বসে দাপ্তরিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে বর্হিবিভাগের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে নারী ও পুরুষ রোগীরা একজন মেডিকেল এসিষ্ট্যান্ড এর কাছ টিকিট সংগ্রহ করে নতুন ভবনে বসা দুই ডাক্তারের কাছে বিষয় ভিত্তিক অনুযায়ী যাচ্ছেন। লাইনে দাড়িয়ে থাকা মিরপুর এলাকা থেকে আসা আনজব উল্লাহ নামের এক বৃদ্ধ জানান, মহিলা ও পুরুষের আলাদা কাউন্টার থাকলেও একজন দিয়ে টিকিট দেওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। দোতলায় ৩১ শয্যার পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তা নামের আয়া পুরুষ ওয়ার্ডে একজন বয়স্ক রোগীকে সেলাইন ও ইনজেকশন পুশ করছেন। উপজেলার গুলগাঁও থেকে আসা ভর্তিকৃত রোগী রুহুল আমীনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, দুইদিন আগে এখানে এসে ভর্তি হই, দিনে একবার নীল কাপড়ের (আয়া) মহিলা এসে সেলাইন ইনজেকশন দিয়ে যায়, সাদা কাপড়ের কোন মহিলাকে (নার্স) এখানে আসতে দেখা যায়না। অলুয়া গ্রামের কাজল মিয়ার বেডে একটি ক্লিনিকের ফাইল দেখে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি আক্ষেপ করে জানান, পেটের ব্যাথা নিয়ে বাহিরের ক্লিনিক থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে আসতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে একটি রক্তের গ্র“প পর্যন্ত পরীক্ষা করা যায়না। ভর্তি রোগীদের বাহিরে ক্লিনিকে নিয়ে বেশি টাকা দিয়ে বিভিন্ন পরিক্ষা করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে নার্স দুইজন ডাক্তারের ভূমিকা আর আয়া নার্সের ভূমিকা পালন করায় উপজেলার অনেক লোককেই প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরবর্তী জেলা সদর হাসপাতাল থেকে সেবা নিতে হচ্ছে। উপজেলার সারাংপুর গ্রামের ইঞ্জিন মেস্ত্রী আব্দুর রহিম, পশ্চিম জয়পুর গ্রামের গৃহিনী আম্বিয়া আক্তার মুক্তা, নোয়াগাও গ্রামের মনজুর হেসাইন আক্ষেপ করে বলেন, জরুরি বিভাগে ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে রোগী আসলেও সহজ কথায় তাদের জেলা হাসপাতাল বা প্রাইভেট হাসপাতালে প্রেরণ করার কথা বল হয়। প্যারাসিটামল ও গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট ছাড়া এখান থেকে কিছুই দেয়া হয় না। সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। ফলে প্রতিদিন প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে হতভাগ্য অনেক রোগীকে। হাসপাতালটির উন্নত চিকিৎসা সেবা সহ সব সরকারি পদক্ষেপ শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। ডিউটি রুমে বসা নার্স মধুমিতার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি ১৬ বছর ধরে এখানে কর্মরত। এখানে নার্সরা আসলে এক মাসও ঠিকেনা চলে যায়। দীর্ঘদিন যাবত দুইজন নার্স দিয়েই দুই ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সকালের শিফটে একজন, বিকেলের শিফটে শুধু আয়া দিয়ে, রাতের শিফটে আরেকজন দিয়েই চলছে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের চিকিৎসা কার্যক্রম। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বাবুল কুমার দাশ জানান, হাসপাতালের ৫০ শয্যার কার্যক্রমের অনুমতি পেয়ে ইতিমধ্যে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রতিদিন ৪৫-৫০ জন ভর্তি রোগীদের সেবা দিয়ে আসছি। দীর্ঘদিন যাবত জনবল সংকট এবং এক্সরে মেশিন সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আয়া দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি জানান, নার্স সংকটের কারণে কদাচিৎ এরকম ঘটতে পারে। আমরা পরিস্থিতির স্বীকার।


     এই বিভাগের আরো খবর