,

৬১ জেলা পরিষদেই জয় নিশ্চিত আওয়ামীলীগের : অরাজনৈতিক এই নির্বাচনের বেশির ভাগ ভোটারই রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি

সময় ডেস্ক ॥ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরাই বিজয়ী হবেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, যাঁরা ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন, তাঁদের সংখ্যা পর্যালোচনা করে বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪-দলীয় জোট বা বিরোধী দলের সমর্থক কোনো জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় নেতার ওই পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগই নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির জন্য আলাদা আইন থাকায় এখানে নির্বাচন হবে না। বর্তমানে ৬১টি জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে সরকারের মনোনীত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাই আছেন। কোনো প্রশাসক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এই নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। ১৮ দলের শরিক বা বিএনপি-জামায়াত জোটের এই নির্বাচন ঘিরে তেমন আগ্রহ নেই। ১৪ দলের অন্য শরিকেরা এ নিয়ে কিছু ভাবছে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে গত সোমবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। আইন অনুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। ভোট দেবেন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধি বা নির্বাচকমণ্ডলী। এঁদের ভোটে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত পাঁচজন নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন। অর্থাৎ অরাজনৈতিক এই নির্বাচনের বেশির ভাগ ভোটারই রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কমিশন সচিবালয়ের হিসাব অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলা বাদে সারা দেশের ৬১ জেলায় মোট জনপ্রতিনিধির সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার, যাঁরা ওই নির্বাচনের ভোটার। প্রতিটি ইউপিতে জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ ‘ভোটার’ ১৩ জন। এর মধ্যে একজন চেয়ারম্যান, সাধারণ আসনের ৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের ৩ জন সদস্য রয়েছেন। এই হিসাবে সাড়ে ৪ হাজার ইউপির ভোটার সংখ্যা ৫৮ হাজার ৫০০। জেলা পরিষদ নির্বাচন করার জন্য গত ৬ অক্টোবর জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করে সংসদে বিল পাস হয়। ২০০০ সালের জেলা পরিষদ আইনে পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাময়িক বরখাস্তের বিধান ছিল না। নতুন আইনে আদালত কর্তৃক চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়া সাপেক্ষে সাময়িক বরখাস্তের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আগের আইনে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানদের জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না। এখন তাঁরা ভোট দিতে পারবেন। সরকার ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা বাদে বাকি ৬১টি জেলা পরিষদে দলীয় নেতাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তখন স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলেছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হবে। সেই নির্বাচন দিতে সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় লেগে গেল। আওয়ামী লীগের ভোট নিরঙ্কুশ: জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার ইউপি, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। এর মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি ভোটার ইউপি ও পৌরসভার। এই হিসাবে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় অনেকাংশেই নিশ্চিত। সদ্য শেষ হওয়া চার হাজারের বেশি ইউপির নির্বাচনে তিন হাজারের কমবেশি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এসব ইউপির বেশির ভাগ মেম্বারও (সদস্য) সরকারি দলের সমর্থক। অন্যদিকে বিএনপি জিতেছে চার শ-এর মতো ইউপিতে, জাতীয় পার্টি ৫৫টিতে। বাকিগুলোতে অন্যান্য দল-সমর্থিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন। পৌরসভার চিত্রও একই রকম। ৪৮৯টি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে মোট ভোটার ১ হাজার ৪৬৭ জন। এখানেও বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা জিতেছেন তিন শতাধিক উপজেলায়। বিএনপি জিতেছে দেড় শতাধিক উপজেলায়। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাচন হবে নির্দলীয়। এখানে দল বা জোটের কোনো বিষয় নেই। তারপরও দলের পক্ষ থেকে কিছু করণীয় থাকলে তা তফসিল ঘোষণার পর করা হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর