,

নির্বাচন কমিশন নিয়ে টেনশনে বিএনপি

সময় ডেস্ক ॥ নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে টেনশনে বিএনপি। নতুন কমিশনে কারা আসছেন, তাদের কী ভূমিকা হবে তা নিয়ে দলের ভিতরে শুরু হয়েছে নানা পর্যালোচনা। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতারা কয়েক দিন ধরেই এ বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে শিগগিরই দলটির পক্ষ থেকে একটি রূপরেখা তুলে ধরা হবে। বেগম খালেদা জিয়া এ নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনও করতে পারেন। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, নতুন কমিশন গঠনের মাধ্যমেই অনেটকা পরিষ্কার হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হতে পারে। তাই এ নির্বাচন কমিশন গঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে বিএনপি। সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে বলেও মনে করেন তারা। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মতো বিতর্কিত কমিশন এর আগে কখনো হয়নি। তাই সরকার একতরফা সার্চ কমিটি গঠন করে এ ধরনের কমিশন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা চাই, সব দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে আমরা দলগতভাবেও কাজ করছি। তা খুব শিগগিরই দৃশ্যমান করা হবে।’ আগামী বছরের ফেব্র“য়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে এখনো কোনো আইন নেই। সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান নিজ উদ্যোগে একটি ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে বর্তমান কমিশন গঠন করেছিলেন। এ কমিশনের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে এখন আবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটি রূপরেখা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব আবদুর রশীদ সরকারসহ আরও কয়েকজন সম্ভাব্য রূপরেখা নিয়ে কাজ করছেন। তা শিগগিরই দলের স্থায়ী কমিটিতে উপস্থাপন করে বেগম জিয়া সংবাদ সম্মেলন করবেন বলেও জানা যায়। বিএনপি নেতারা বলছেন, সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সরকার রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আবারও নিজেদের মতো করে ‘সার্চ কমিটি’ গঠনের পাঁয়তারা করছে। তারাও বর্তমান ইসির মতো সরকারের ‘তলপিবাহক’ হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। এ নিয়ে প্রয়োজন সর্বদলীয় আলোচনা। যদিও সরকারি দলের নেতারা ইতিমধ্যেই বিএনপির আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। জানা যায়, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে পৃথক একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি। সেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের অতীতের নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি সামনে রাখা হচ্ছে। প্রস্তাবে আপিল বিভাগের একজন অবসর নেওয়া বিচারপতির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের সুপারিশ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেখানে একটি জটিলতা রয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এ আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় পরে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় আইন করা হয়, উচ্চ আদালতের কোনো বিচারপতি নির্বাচন কমিশনে যেতে পারবেন না। এ কারণে আইনটি সংশোধন জরুরি বলে মনে করে বিএনপি। দলের আইনসংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, মনে হয় সরকার এ কাজে হাত দেবে না। কারণ, এ আইন এখন সরকারের পক্ষেই আছে। তাই বিএনপি এখন সবার মতামতের ভিত্তিতে নাগরিকসমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে চায়। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যদের ব্যাপারেও সম্মতি রয়েছে দলটির। তবে সরকার শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রস্তাব আমলে নেবে না বলেও শঙ্কা দলটির। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন ইস্যুতে ফের রাজপথে নামার প্রস্তুতিও রাখছে তারা। এ ইস্যুটি নিয়েই নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ গরম রাখার পরিকল্পনা তাদের। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘আইনি জটিলতার কারণে বিচারপতিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তবে আইনটি সংশোধন করলে কোনো সমস্যা হবে না।’


     এই বিভাগের আরো খবর