,

জেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র তদবির

সময় ডেস্ক ॥ আসন্ন জেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত কান কোন ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে তা চূড়ান্ত করেনি। এখনই তা করতেও চাইছে না। কারণ নির্বাচন কমিশন মনে করছে, তারা আগে ভাগে ভোট কেন্দ্র করার কাজটি করা হলে তা জানাজানি হয়ে যাবে। জানাজানি হলে এনিয়ে সমস্যা বাড়বে। কারণ সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন থেকেই ভোট কেন্দ্র তাদের কাছাকাছি ও সুবিধাজনক স্থানে করার জন্য কমিশনে জোর তদবির শুরু করেছে। এই তদবিরে কমিশনের শীর্ষ একাধিক কর্তা ব্যক্তিদের কান ঝালাপালা। এই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের একজন কমিশনার বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাচন হবে ২৮ ডিসেম্বর। এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। তা থাকলেও আমরা সব গোছগাছ করে রেখেছি। কোন কোন জেলায় কতগুলো ভোট কেন্দ্র করা হবে , কোথায় কোথায় হতে পারে তাও বিবেচনা করা হয়েছে। তাহলেও তা চূড়ান্ত করে শিগগিরই ঘোষণা করা হবে না। এই জন্য আমরা একটু সময় নিতে চাই। কারণ যদি আগে ভাগে কেন্দ্র ঘোষণা করে দেই তাতে কিছুটা সমস্যা তৈরি হবে। অনেক আবেদন পড়বে কেন্দ্র পরিবর্তন করার কিংবা স্থানান্তর করার। কিন্তু সেটা করতে চাইছি না। একবারেই আমরা চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করবো। এছাড়াও নিরাপত্তার বিষয়টিও আমলে নিতে হচ্ছে। এক একটি জেলায় কতগুলো ভোট কেন্দ্র হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এক এক জেলায় একএক রকম হতে পারে। কারণ যে জেলার আয়তন বেশি, ওই জেলার জন্য ভোট কেন্দ্র বেশি হবে। যে জেলার আয়তন কম সেই জেলার জন্য ভোটর অনুপাতে কম হবে। নির্দিষ্ট করে এখন বলা যাচ্ছে না। আবার এটাও ঠিক যে জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়, আবার ভোট কেন্দ্র যদি দূরে করা হয় তাতে করে ভোটারদের ভোট দিতে সমস্যা হবে। এই কারণে সেই সব দিক বিবেচনা করেই আমরা ভোট কেন্দ্র ঠিক করবো। কবে নাগাদ এটা চূড়ান্ত করা হবে জানতে চাইলে কমিশনার আব্দুল মোবারক বলেন, আমরা এটা করতে বেশি সময় নেব না। এই জন্য আধঘন্টা সময় লাগবে হয়তো। ভোটারতো বেশি না আর ভোট কেন্দ্রও বেশি হবে না তাই সময়ও বেশি লাগবে না। এত কম সময়ে করতে চাইছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত পেছনে কারণ আছে। ভোট কেন্দ্রগুলো কোথায় কোথায় হবে এটা এখন জানাজানি হলে সমস্যা আছে। কারণ অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে আর অনুরোধ করছে যাতে করে তার সুবিধাজনক এলাকায় ভোট কেন্দ্র করা হয়। এই সংক্রান্ত তদবিরে আমাদের কান ঝালা পালা। আর এগুলো চাইছি না। তাই আগে ভাগে যদি করি এটা অন্তত স্টাফরা জানবে। তা জানলে বিষয়টি আমরা গোপনও রাখতে পারবো না। তখন তদবিরের সংখ্যা আরো বাড়বে। সেটা চাই না। ফলে একটু সময় লাগবে। যখন করা হবে আমরা আধঘন্টার মধ্যে তা করে ফেলবো। কারা আপনাদের কাছে এত তদবীর করছে এই ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা তদবীর করছেন তারা প্রার্থী হতে চাইছেন। আবার তাদের ঘনিষ্টজনরা রয়েছে। নিজেরা তদবির করা ছাড়াও তাদের উপরে যাদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে তারাও বলছেন। তিনি বলেন, আমরা এই সব তদবির রক্ষা করতে পারবো না। কেমন করে ভোট কেন্দ্র করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলার আয়তন, ভোটার, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এলাকার ভৌগলিক অবস্থা, নিরাপত্তাসহ সব বিষয় বিবেচনা করেই আমরা তালিকা করবো। এদিকে বিএনপির আশঙ্কা এই নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীরা যাতে সবগুলোতেই জয় পায় সেই জন্য সরকার কমিশনের উপর চাপ তৈরি করবে। সরকার যেভাবে চাইবে কমিশন সেইভাবে কাজ করবে। তাদের সুবিধামতো ও সরকার নির্ধারিত জায়গায় তারা ভোট কেন্দ্র করবে। এতে করে সরকারি দলের প্রার্থীরা জয়ী হতে পারে সেই ব্যবস্থা করবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য সরকার যে বিধান করেছে এটা দুরভিসন্ধিমূলক। সরকার চাইছে সবগুলোতেই তাদের লোক বসাতে। এই জন্য আগেভাগে তারা ভোটার তালিকা ও ভেটকেন্দ্রের নাম প্রকাশ করতে চাইছে না। ভোট হবে এই জন্য ভোটার তালিকা ও ভোট কেন্দ্রের নাম আগে ভাগে জানলেতো কোন সমস্যা নেই। তিনি বলেন, এই কমিশনের এটাই শেষ নির্বাচন। শেষ সময়ে তারা আনুগত্য আরো বেশি দেখাবে। এতদিনতো দেখিয়েছে। এখন আরো পুরোটাই দেখিয়ে দিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা জানি যে এই নির্বাচন হচ্ছে এটা নামকাওয়াস্তে নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাইলে সরকার জেলা পরিষদ নির্বাচন আইন সংশোধন করতো না। কিন্তু সেটাতো তারা মনের মতো করে সংশোধন করছে। সরকার জেলা পর্যায়ে তাদের ক্ষমতা স্থায়ী করতে ও দখল রাখতেই এগুলো করছে। উল্লেখ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আগামী ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কমিশন নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ ও নির্বাচকমন্ডলী ভোট দিবেন। প্রত্যেক জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত পাঁচজন নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন।


     এই বিভাগের আরো খবর