,

নবীগঞ্জে নিখোঁজের ৪ দিন পর কিশোরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার : ঘাতক দিপংকরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ॥ কিলিং মিশনে ছিলো ৩জন

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার পল্লীতে ১৩ বছরের কিশোর অনুপ দাশ নিখোঁজের ৪ দিনের মাথায় তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার বিকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে হলিমপুর গ্রামের ধনাই দাশের ছেলে দিপংকর দাশকে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ মোঃ আব্দুল বাতেন খানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ হলিমপুর বাজার থেকে গ্রেফতার করে। এসময় তার স্বীকারোক্তিমতে পুলিশ একই গ্রামের জ্যোতিময় দাশের বাড়ির স্যানেটারী রিং টয়লেটের ভিতর থেকে অনুপ দাশের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন। পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের মৃত অন্তু দাশের কিশোর ছেলে অনুপ দাশ (১৪) গত ৩০ নভেম্বর রাতে হলিমপুর বাজারস্থ নিজ দোকান থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। বাড়ির লোকজন বিভিন্নস্থানে তাকে খোঁজাখুজি কালে হলিমপুর গ্রামের ভুষন দাশের দোকানের উত্তর-পুর্ব পাশের খালে কিশোর অনুপ দাশের সাথে থাকা ব্যবহৃত চাদর ও জুতা পায়। এ ব্যাপারে ১লা ডিসেম্বর নিখোঁজ কিশোরের মা উষা রানী দাশ নবীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী নং-৪৪ দায়ের করেন। উক্ত সাধারণ ডায়েরীর সুত্র ধরে অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল বাতেন খানের তত্ত্বাবধানে এসআই মোবারক হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ তদন্ত শুরু করেন। এক পর্যায়ে গত শনিবার বিকালে হলিমপুর গ্রামের সুখময় দাশের ছেলে গোপাল দাশ (৫০), হরমোহন দাশের ছেলে অধীর দাশ (৫৫), প্রল্লাদ দাশের ছেলে পিন্টু দাশ (৪২), ধীরেন্দ্র দাশের ছেলে প্রন্তা দাশ ও মানিক দাশের ছেলে মাদাই দাশ (৩৫)কে সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতার করেন। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় ৩৬৪/৩৪ ধারায় মামলা নং ২ তারিখ-০৩-১২-২০১৬ইং দায়ের করেছেন নিখোঁজ অনুপ দাশের মা উষা রানী দাশ। গতকাল রবিবার ধৃতদের কোর্ট হাজতে প্রেরণ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের তদন্তে সন্দেহের তীর যায় হলিমপুর গ্রামের ধনাই দাশের ছেলে দিপংকর দাশের দিকে। ফলে গতকাল বিকালে ওসি আব্দুল বাতেন খানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ দিপংকর দাশ (২৫)কে গ্রেফতার করে। পরে ধৃত দিপংকর দাশের দেয়া তথ্যমতে পুলিশ জ্যোতিময় দাশের বাড়ির স্যানেটারী রিং টয়লেট থেকে নিখোঁজ কিশোর অনুপ দাশের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এদিকে ধৃত দিপংকর দাশ থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। তার দেয়া স্বীকারোক্তি তথ্য মতে ইতিপুর্বে গ্রেফতারকৃত গোপাল দাশ, দিপংকর দাশসহ ৩ জন মিলে গত ৩০ নভেম্বর রাতে কিশোর অনুপ দাশকে বাড়ি ফেরার পথে আটক করে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করে। এক পর্যায়ে তারা পাশের বাড়ির জ্যোতিময় দাশের বাড়ির স্যানেটারী রিং টয়লেটের স্লাপ উঠিয়ে ভিতরে ফেলে দিয়ে পুণঃরায় স্লাপ লাগিয়ে দেয়। এ সময় দিপংকর দাশের ডান হাতের আঙ্গুল কেটে যায়। ঘটনার পর থেকেই দিপংকর দাশের চলাফেরা ও কথাবার্তা সন্দেহজনক ছিল বলে জানান স্থানীয়রা। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার বড় ভাকৈর পশ্চিম ইউপির হলিমপুর গ্রামের মৃত অন্তু দাশের কিশোর ছেলে অনুপ চন্দ্র দাশ পিতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হলিমপুর বাজারস্থ নিজ মুদি দোকান দেখাশুনা করতো। গত ৩০ নভেম্বর রাত সাড়ে ৭ টার দিকে দোকানের লোকজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। এ সময় তার পরনে হাফহাতা কালো গেঞ্জি, বাদামী রংয়ের পুল প্যান্ট ও খয়ারী রংয়ের চাদর ছিল। এদিকে কিশোর অনুপ দাশ বাড়ি ফিরতে দেরি দেখে তার মা উষা রানী দাশ দোকানে খবর করে জানতে পারে সে অনেক আগেই দোকান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। পরে বাড়ির লোকজন বিভিন্নস্থানে তাকে খোঁজাখুজি কালে হলিমপুর গ্রামের ভুষন দাশের দোকানের উত্তর-পুর্ব পাশের নালায় কিশোর অনুপ দাশের সাথে থাকা ব্যবহৃত চাদর ও সেন্ডেল পান। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, অনুপ দাশের পিতা অন্তু দাশ বিগত ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। ঘটনার দু’ দিন পর বাড়ির পশ্চিমে নদীর পাড়ে মৃত অবস্থায় অন্তু দাশকে পাওয়া যায়। দীর্ঘ দেড় বছর পর একই ভাবে নিখোঁজের ৪ দিন পর কিশোর ছেলে অনুপ দাশ’র মৃতদেহ উদ্ধার হলো। সুত্রে জানা গেছে, আর্থিক লেনদেন এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। ইতিপুর্বে ধৃত প্রন্তা দাশ ও মাদাই দাশ টাকা পাওনা দাবী করে মৃত অনুপ দাশের প্রায় ৫ কেদার জমি দখলে নেয়। এছাড়া ধৃত গোপাল দাশ দাবী করে অনুপের পিতা মৃত অন্ত দাশের নিকট দেড় লক্ষ টাকা পায়। তার দাবীকৃত টাকা নিয়ে অনেক বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ সব লেনদেনকে কেন্দ্র করেই ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে অসহায় পরিবারের সন্তান কিশোর অনুপ দাশ। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ আব্দুল বাতেন খান বলেন, নিখোঁজের বিষয়ে জিডি করার পরপরই আইনী প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এটা একটি নৃশংস হত্যাকান্ড। হত্যাকান্ডে জড়িত কেউ বা কোন অপরাধী আইনের উর্দ্ধে থাকার সুযোগ নেই। ঘটনায় সন্দেহ জনক ৪ জনকে ইতিপুর্বে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারমধ্যে ধৃত দিপংকর দাশের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি মতে গোপাল দাশ ঘটনায় সাথে জড়িত রয়েছে। অপরাধীদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলেও তিনি আশ্বাস দেন।


     এই বিভাগের আরো খবর