,

মা, তুমি কান্দো ক্যান

সময় ডেস্ক ॥ দীর্ঘ এক মাস পর মা-মেয়ের দেখা। দেখা হতেই মা ও মেয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। প্রথমে হাসি, তারপর মায়ের চোখ দিয়ে পানি গড়াতে লাগল। মাত্র নয় বছর বয়সী জান্নাতুল ফেরদৌস মায়ের কোলে বসে মায়ের চোখের পানি মুছে দিচ্ছিল। মা-মেয়ের বিদায় নেওয়ার সময়ও মায়ের কান্না আর থামে না। তাই দেখে জান্নাতুল বলল, ‘মা, তুমি কান্দো ক্যান? কাইন্দো না। বাড়িত গিয়া ভালা থাকবা। আমি ভালা আছি।’ আজ রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গাজীপুরের জয়দেবপুরে এক বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিল জান্নাতুল। গরম ইস্তিরির ছ্যাঁকায় তার মাথার তালুর অনেকটা জায়গাজুড়ে ঘা হয়ে গর্ত হয়ে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর এখন চুল গজানোর ফলে মাথা প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। শুধু মাথা নয়, জান্নাতুলের সারা শরীরে খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছিল। এখনো শরীরের দাগগুলো আছে। তবে যন্ত্রণা নেই। আর এই কয় দিনে জান্নাতুলও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে নতুন পরিবেশে। মায়ের চোখের জল মুছে দিচ্ছে জান্নাতুল। ছবি: মানসুরা হোসাইনঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৯ নভেম্বর জান্নাতুলের নতুন ঠিকানা হয় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির আশ্রয়কেন্দ্রে (বিএনডব্লিউএলএ)। আজ বিএনডব্লিউএলএর আশ্রয়কেন্দ্রের হাউস মাদার সুফিয়া বেগম জান্নাতুলকে ফলোআপ করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জান্নাতুলের বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচরে। জান্নাতুলকে দেখতে তার মা ফিরোজা বেগম ও বোন সকালে হাসপাতালে পৌঁছান। বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন হোসাইন ইমাম জান্নাতুলের মাথা ও সার্বিক অবস্থা দেখে জানালেন, ও এখন ভালো আছে। ভিটামিন, সিভিট ছাড়া আপাতত আর কোনো ওষুধ খেতে হবে না। এক মাস পর আবার ফলোআপ করতে হবে। জান্নাতুলকে কাছে পেয়ে মা-বোনের চোখেমুখে আনন্দ। ছবি: মানসুরা হোসাইনগৃহকর্মী থাকাকালে জান্নাতুলের বাড়ি যেতে মন চাইত। গৃহকর্তা ওমর ফারুক ও তাঁর স্ত্রী মণি বেগমের কাছে এ নিয়ে সে আবদার করত। আর এই আবদারের ‘অপরাধে’ তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল বলে জানায় জান্নাতুল। আজ মা ও বোনকে দেখে জান্নাতুল একবার বাড়ি যেতে চায়। তবে পরিস্থিতি বুঝিয়ে বললে আবার মত পাল্টায়। হাসপাতালে যতক্ষণ ছিল, ততক্ষণ মা ও বোনের সঙ্গে অনবরত গল্প করতে থাকে। আশ্রয়কেন্দ্রে তার জন্য আলমারির একটি তাক দেওয়া হয়েছেসে গল্পও বাদ যায় না। জান্নাতুল বাড়ির সবার খোঁজখবর নেয়। জান্নাতুলের মা তাকিয়ে তাকিয়ে মেয়ের গল্প শোনেন। একটু পরপর মা, মেয়ে ও বোন একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকেন। ফিরোজা বেগম জানান, তাঁর খালাতো ভাই হাইমচরের বাসিন্দা মোস্তফা সরদার এক বছর আগে জান্নাতুলকে তাঁর (মোস্তফা) আত্মীয় গাজীপুরের ওমর ফারুক-মণি বেগম দম্পতির বাসায় নিয়ে যান। প্রচণ্ড মারধর ও নির্যাতনের শিকার হলে গত ঈদুল আজহার পরের দিন মোস্তফা সরদার জান্নাতুলকে হাইমচরে নিয়ে যান। গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথমে হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে চাঁদপুর সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। মায়ের দেওয়া নতুন জামা পরার পর বোন সাজিয়ে দিয়েছে। তাতে বেজায় খুশি জান্নাতুল। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিনউন্নত চিকিৎসার জন্য জান্নাতুলকে গত ১ অক্টোবর প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার পাশাপাশি পুনর্বাসন ও আইনি পরামর্শ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে এই ট্রাস্ট। জান্নাতুলের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাকে আপাতত আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় জান্নাতুলের প্রতিবেশী শাহজাহান ভূঁইয়া বাদী হয়ে ওমর ফারুক, মণি বেগম ও মোস্তফা সরদারকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এ মামলায় আইনি সহায়তা দিচ্ছে বিএনডব্লিউএলএ। জয়দেবপুর থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জানামতে, তিনজন আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। দ্রুত মামলার চার্জশিট দেব।


     এই বিভাগের আরো খবর