,

নবীগঞ্জে শহীদ বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বাস্তবায়নে নবীগঞ্জের কৃতিসন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী ও হবিগঞ্জ প্রেস কাবের সভাপতি এবং দৈনিক হবিগঞ্জ জনতার এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ফজলুর রহমান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নবীগঞ্জ প্রেসকাবের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ এটিএম সালাম, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্মেলেন্দু দাশ রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক ওহি দেওয়ান চৌধুরী, শহীদ অনুদ্বৈপায়ন স্মারক গ্রন্থের সম্পাদক সাংবাদিক উজ্জ্বল দাশ, নবীগঞ্জ সংবাদ পত্রের এজেন্ট মোশাহীদ আলী, নবীগঞ্জ প্রেসকাবের দপ্তর সম্পাদক মতিউর রহমান মুন্না, দৈনিক হবিগঞ্জের বাণী প্রতিনিধি মামুন আহমেদ প্রমুখ। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ১৪ ডিসেম্বর বুধবার সকাল ১০ ঘটিকায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদ অনুদ্বৈপায়ন স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করা হবে। নবীগঞ্জ সরকারী ডিগ্রী কলেজ ও শহীদ অনুদ্বৈপায়নের নিজ গ্রাম জন্তরীর ত্রিমূখী রাস্তার মিলনস্তলের পাশে নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। উক্ত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হওয়ায় নবীগঞ্জ বাসীর র্দীঘদিনের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটলো বলে দাবী সুশীল সমাজের। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ কর্তৃক শহীদ বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যকে নিয়ে প্রকাশিত ডাক টিকেটকে প্রতিপাদ্য করে তৈরী করা হয়েছে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের মূল নকশা। স্বাধীনতার পর নবীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে তাঁর গ্রাম জন্তরী পর্যন্ত রাস্তার নামকরণ করা হয়েছিল অনুদ্বৈপায়ন সড়ক। কালের গর্ভে সেটি এখন কলেজ রোড নামেই অধিক পরিচিত। এখন আর কোথাও চোখে পড়েনা না অনুদ্বৈপায়ন সড়কের ফলক। নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কর্তৃক জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যকে নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের এই প্রচেষ্ঠাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নবীগঞ্জবাসী। উক্ত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হওয়ায় ওই এলাকায় সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য, শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার জন্তরী গ্রামে ১৯৪৫ সালের ৩১শে জানুয়ারি তাঁর জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা দিগেন্দ” চন্দ” ভট্টাচার্য ছিলেন নামকরা আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। নবীগঞ্জ যোগল কিশোর (জে.কে) হাই স্কুলের কৃতি ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অনুদ্বৈপায়ন ভট্রাচার্য। ১৯৬১ সালে স্কুল থেকে প্রথম শ্রেণীতে অংক ও সংস্কৃতি বিষয় দুটিতে লেটার নম্বর পেয়ে ম্যাট্রিকুলেশন (এস.এস.সি) উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ সালে এম.সি. কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে মেধা তালিকায় একাদশ স্থান অধিকার করে আই.এস.সি (উচ্চ মাধ্যমিক) পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন।
১৯৬৬ সালে অনুদ্বৈপায়ন পদার্থবিদ্যায় প্রথম শ্রেণীতে তৃতীয় স্থান অধিকারে বি.এস.সি সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ফলিত পদার্থ বিদ্যায় প্রথম শ্রেনীতে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে এম.এস.সি. পাশ করেন। অনুদ্বৈপায়ন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব প্রতিষ্ঠিত ফলিত পদার্থ বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র। ১৯৬৮ সালের ১৪ই মার্চ ফলিত পদার্থ বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন অনুদ্বৈপায়ন। আর একই বছরের ১লা জুলাই জগন্নাথ হলের সহকারী আবাসিক শিক হিসেবে নিযুক্তি পান। শহীদ অনুদ্বৈপায়ন শিকতাকে জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কলম্বো প্লানের বৃত্তি নিয়ে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ রাতে বিমানে উঠার সব ব্যবস্থা চুড়ান্ত ছিল। কিন্তু ভোর রাতে পাকবাহিনীর হাতে অন্যান্য মেধাবী ছাত্র শিক্ষকের সাথেই নির্মমভাবে শহীদ হন অনুদ্বৈপায়নের ভট্টাচার্য। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, অনুদ্বৈপায়ন ভট্রাচার্য শহীদ হওয়ার দু’ দিন আগে অর্থাৎ ( ২৪ মার্চ) নিজ জন্ম ভুমি নবীগঞ্জের জন্তরী গ্রামে এসেছিলেন। ২৬ মার্চ লন্ডন বিশ্ব বিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিতে যাওয়ার জন্য বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে বিদায়ও নেন। এ সময় অনেকেই ঢাকায় না যেতে বারণ করেছিলেন। কিন্ত তার স্বপ্ন এবং উচ্চতর ডিগ্রী গ্রহনের দিক বিবেচনা করে কাহারো বাধাঁ তাকে ধরে রাখতে পারেনি। তিনি ২৫ মার্চ ঢাকায় ফিরেন। ওই দিনই দিবাগত ভোর রাত ( ২৬ মার্চ ) পাকবাহিনীর বুলেটে তিনি শহীদ হন। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পর হলেও নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরীর অকান্ত প্রচেষ্টায় উপজেলা পরিষদ উক্ত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করেন। যা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আর মাত্র দিন বাকী। রাত পোহালেই এর উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু। উদ্বোধন করবেন উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী। অনুষ্টানে সভাপত্বি করবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজিনা সারোয়ার। এতে নবীগঞ্জে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ জনপ্রতিনিধিগণ অংশ গ্রহন করে বক্তব্য রাখবেন বলে জানাগেছে। উক্ত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগকে স্বাগত ও সাধুবাদ জানিয়েছেন নবীগঞ্জের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ।


     এই বিভাগের আরো খবর