,

প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত : বন্ধ হচ্ছে না বাল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে মাদক আমদানি

জুয়েল চৌধুরী ॥ র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের অব্যাহত অভিযান সত্ত্বেও চুনারুঘাটে মাদকের আগ্রাসী থাবা বন্ধ হচ্ছে না। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের মধ্যেও মাদক ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে, সচল রয়েছে তাদের সরবরাহ ব্যবস্থাও। মাদক আমদানি, সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থা নির্বিঘœ রাখতে একের পর এক কৌশল পাল্টাচ্ছে তারা। এসব নিত্য নতুন কৌশলে পাচার হওয়া মাদক ধরতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। ইদানীং বাক প্রতিবন্ধীদেরও (বোবা) ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক পাচারে। এতে মাদকসহ বোবারা ধরা পড়লেও তারা মূল মাদক ব্যবসায়ীর নাম-পরিচয় কিছুই জানাতে পারছে না, দিতে পারে না স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। ইদানিং অন্যদিকে এক শ্রেণির হিজড়াদের মাধ্যমেও মাদক পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, বাল্লা সীমান্তের ওপার থেকে আসা মাদক পাচারের প্রধান রুটে পরিণত হয়েছে চুনারুঘাট-শায়েস্তাগঞ্জ সড়ক। যাতায়াত সুবিধা ভালো হওয়ায় এ পথ ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। এলাকাবাসির অভিযোগ আইন শৃংখলা বাহিনীর কতিপয় অসাধু সদস্যদের সহায়তায় এখানকার মাদক সিন্ডিকেটদের দমন করা যাচ্ছে না। মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসা করতে মাসোয়ারার মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ম্যানেজ করছে। আর পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সমন্বয় করে দিচ্ছে লাইনম্যান নামধারী কতিপয় ব্যক্তি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুনারুঘাট থানার মোড় থেকে গার্ড স্কুল পর্যন্ত অন্তত ৫ ব্যক্তি মাদক বিক্রির সাথে জড়িত। তারা বাল্লা থেকে মাদক আনছে এবং চুনারুঘাট থানা পার হয়ে আসার আগ পর্যন্ত বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করছে। অভিযোগে জানা যায়, চুনারুঘাট পৌর শহরে শীর্ষ ৫ মাদক ব্যবসায়ী হল বাল্লা রোডের রুকন মিয়া, দক্ষিণ হাতুন্ডা গ্রামের সাদেক মিয়া, নীলকন্ঠ সিনেমা হল আব্দুল আওয়াল ও খালেক। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। অনেকে একাধিকবার হাজতও বাস করেছে। এ ১০জন ছাড়াও চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত শতাধিক খুচরা ও পাইকারি মাদক বিক্রির স্পট রয়েছে। এলাকাবাসির অভিযোগ থানা পুলিশ মাদক স্পটের মালিকদের (চোরাকারবারি) ধর-পাকড় না করে কেবল খুচরা বিক্রেতাদের গ্রেফতার করে। যে কারণে চুনারুঘাটে মাদক ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন দুপুর ২টার পর থেকে ৪/৫টি দলে বিভক্ত হয়ে চুনারুঘাট থানা থেকে কলেজ রোড পর্যন্ত বিভিন্ন স্পটে মাদক ব্যবসা চলে। থানার ৫শ গজ দূরে উপজেলা গেইট পার হলেই রাস্তার পাশে তাকালে অসংখ্য ফেন্সিডিলের খালি বোতল চোখে পড়ে। সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় এ উপজেলাকেই মাদকের রুট হিসেবে ব্যবহার করে মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদক পাচারে চুনারুঘাট একটি গুরুত্বপূর্ণ মাদক রুট। এ রুটে ফেনসিডিল, ফেনসিডিল জাতীয় স্কপ সিরাপ, রিকোডে, কডোকপ, গাঁজা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিয়ার ও মদ, প্যাথিডিন ইনজেকশন ইত্যাদি প্রতিদিন আসছে। এসবের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভারতীয় খাসিয়া উপজাতির তৈরি করা ছোট ও বড় আকারের নকল ইয়াবা ট্যাবলেট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা মাদক বিক্রেতা জানায়, প্রতি বোতল ফেন্সিডিল বাল্লা সীমান্ত থেকে চুনারুঘাট পর্যন্ত আনা নেয়া করতে খরচ হয় ৪৫ থেকে ৬০টাকা। প্রতি কেজি গাঁজা পরিবহনের খরচ দিতে হয় ৮শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। ভয়ঙ্কর তথ্য হলো দিন দিন মাদক আসক্তদের সংখ্যা বাড়ছে। বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলেবন্ধু বা মেয়েবন্ধুর মাধ্যমে অনেকেই এ জগতে প্রবেশ করছে। অনেকে আবার স্রেফ কৌতূহলের বশেও এক-দুইবার মাদক সেবন করে স্থায়ীভাবে এতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই রয়েছে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মাদকের ভয়াবহতা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল সব মহলকে ভাবিয়ে তুলছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাঝে মধ্যেই ধরা পড়ছে মাদক ব্যবসায়ীরা, প্রচুর মাদকও উদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরও মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।


     এই বিভাগের আরো খবর