,

গডফাদাররা অধরা থাকায় বন্ধ হচ্ছে না মাদক ব্যবসা : চুনারুঘাটে দীর্ঘ হচ্ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ আইনী দূর্বলতায় মাদক বিক্রির মূলহোতাদের ধরতে না পারায় চুনারুঘাট উপজেলায় বন্ধ হচ্ছে না মাদক ব্যবসা। ফলে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার সর্বত্র মাদকের অবাদ বিকিকিনি বেড়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে প্রতিনিয়তই তাদের কৌশল পরিবর্তন করে চলেছে। মাদক ব্যবসায়ীরা নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করায় চুনারুঘাটে দীর্ঘ হচ্ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকসেবনের সাথে শিক্ষার্থীসহ উঠতি বয়সী যুব সমাজ জড়িয়ে পড়ায় অভিভাবকসহ সচেতন মহলে বাড়ছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। অনুসন্ধানে জানা যায়, চুনারুঘাট পৌর শহরসহ চুনারুঘাট উপজেলায় অন্তত ৩০টি মাদক স্পট রয়েছে। এসব স্পটে প্রতিদিনই পাইকারী ও খুচরাভাবে বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার টাকার যৌন উত্তেজক ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক। স্পটগুলো হচ্ছে পৌর শহরের থানা সংলগ্ন সিনেমা হলের পেছন দিক, হাতুন্ডা, চন্দনা, দক্ষিণ বাসস্ট্যান্ড, উত্তর বাসস্ট্যান্ড, নয়ানী, সরকারি কলেজের যাত্রী ছাউনি, মুড়ারবন্দ মাজারের পাশের এক বাড়ি, দুর্গাপুর বাজার, রাণীগাঁও বাজার, আসামপাড়া বাজার, আমুরোড বাজার, শুকদেবপুর বাজার, শাকির মোহাম্মদ বাজার, বাসুল্লা বাজার, সাটিয়াজুরী বাজার, বাল্লা সীমান্তের টেকেরঘাট, পাক্কাবাড়ী, বড়রে, টিলাবাড়ী, গোবরখলা, ফাটাবিল, গাজীপুর, সাদ্দাম বাজার, আহমদাবাদ ইউনিয়নের চিমটিবিল খাস, আমুরোড বাজার, সীমান্তের কুলিবাড়ী, শ্মশানঘাট, বড়ইতলা, মোকামঘাট, বড়রে, গুইবিল, সাতছড়ি ও কালেঙ্গা পয়েন্ট, গাজীপুর ইউনিয়নের ইব্রা শাহ ভিলেজ মার্কেটের সামন, ইছালিয়া সেতু, আমুরোড বাঁশতলা এবং সিএনজি পয়েন্ট। প্রতিদিন এসব স্পটে বাস-টেম্পো, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকারসহ, রিকশা, ঠেলাগাড়ি করে মাদক পাচার হচ্ছে। র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ মাঝেমধ্যে মাদক ব্যবসায়ীদের তাড়া করে পাকড়াও করলেও মূলহোতারা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে। জানা গেছে, উঠতি বয়সীদের পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়ারাও শিক্ষার্থীরাও এখন গাজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। কতিপয় শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে টিফিন খরচের টাকা নিয়ে কয়েকজন মিলে একত্র হয়ে ইয়াবা ও ফেনসিডিল সেবন করছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, চুনারুঘাটে মাদক বাণিজ্যের সাথে কতিপয় প্রভাবশালী লোক জড়িত। ওই সব প্রভাবশালীরা আইন শৃংখলাকারী বাহিনীর সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের যোগসাজস করে দিয়ে সর্বত্র মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। কোন মাদক ব্যবসায়ী বেশি সংখ্যক মাদকসহ আটক হলেই প্রভাবশালীরা তাদের ছাড়িয়ে নিতে তদবির করছে। ফলে বাল্লা সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে আসা মাদক সড়ক পথে হবিগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করছে। পরে তা তা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন স্পটে। তরুণ ও যুব সমাজকে টার্গেট করে এক শ্রেণীর লোক মাদকের রমরমা ব্যবসায় মেতেছে। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যার পর চুনারুঘাট উপজেলার এসব স্পটে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। উপজেলার মুড়ারবন্দ মাজার এলাকায় জলফু মিয়া, সিনেমা সংলগ্ন এলাকার খালেক মিয়া, বাল্লা রোডের রুকন মিয়া, দক্ষিণ হাতুন্ডা গ্রামের সাদেক মিয়া, সিনেমা হল আব্দুল আওয়ালসহ শতাধিক ব্যবসায়ী মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। অনেকে একাধিকবার হাজতও বাস করেছে। এলাকাবাসির অভিযোগ থানা পুলিশ মাদক স্পটের মালিকদের (চোরাকারবারি) ধর-পাকড় করতে পারছে না। যে কারণে চুনারুঘাটে মাদক ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন ৪/৫টি দলে বিভক্ত হয়ে চুনারুঘাট থানা সংলগ্ন সিনেমা হল এলাকায় মাদকসেবীরা ভিড় জমায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কতিপয় যুবক নীলকন্ঠ সিনেমা হল এলাকা থেকে ফেনসিডিল কিনে নিয়ে কলেজের অদুরে নির্জনস্থানে সেবন করে রাস্তার পাশে যততত্র ফেলছে। থানার অদূরে উপজেলা গেইট পার হলেই রাস্তার পাশে অসংখ্য ফেনসিডিলের খালি বোতল চোখে পড়ে। সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় এ উপজেলাকেই মাদকের রুট হিসেবে ব্যবহার করে মাদক ব্যবসায়ীরা। চুনারুঘাটে মাদক ব্যবসার অন্যতম আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা হল স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি। তাদের কেউ-কেউ মাদকা ব্যবসায় সরাসরি জড়িত। আবার কেউ কেউ লোক দিয়ে ব্যবসা করাচ্ছে। অনেকে আবার সমাজের নেতৃস্থানীয় লোকজনের নাম ভাঙ্গিয়ে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে মাদক ব্যবসা করছে। আর এসব কারণে চুনারুঘাটে বরাবরই অধরা থাকছে নেপথ্যে থাকা মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেটের মূলহোতারা।


     এই বিভাগের আরো খবর