,

বাহুবলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যন্ত্রদানব ট্রাক্টরের অবাধ চলাচল : গ্রামীণ সড়ক বেহাল ॥ জনদূর্ভোগ চরমে

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবলের মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়ক ধাবিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ যন্ত্রদানব ট্রাক্টর। ক্ষেতে খামারে হালচাষের এ যন্ত্রটির অবাধ বিচরণে গ্রামীণ সড়কগুলো সবজি চাষযোগ্য ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। ২০১৫ সালে জেলা আইন-শৃংখলা কমিটি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল। সিদ্ধান্তের মাস দুয়েক যাওয়ার পরই নিষেধাজ্ঞা শিতিল হয়ে বরফে পরিণত হয়ে যায়। এনিয়ে প্রশাসনের আর মাথাব্যাথা নেই। পুলিশ প্রশাসনের সামনে দিয়েই বেপরোয়া ভাবে বিকট শব্দে মাটি বোঝাই ট্রাক্টর পাউডারের মত ধুলো উড়িয়ে ছুটে যাচ্ছে। উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি জমি থেকে ইট ভাটায় ব্যবহারের জন্য মাটি নিয়ে ট্রাক্টরগুলো মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কগুলোর উপর দিয়ে দিনরাত ছুটে চলেছে। বিশেষ করে শায়েস্তাগঞ্জ-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের সংযোগ সড়কগুলোর মাঝে মিরপুর থেকে পূর্বজয়পুর শচী অঙ্গন মন্দির হয়ে সাটিয়াজুরী সড়ক ও মিরপুর হতে মহাশয়ের বাজার সড়কে সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত শতাধিক ট্রাক্টর কৃষি জমি থেকে মাটি বোঝাই করে নিয়ে বিভিন্ন ইট ভাটায় যাতায়াত করছে। ফলে এসব পাকা সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গিয়ে ভাঙন ও গর্ত সৃষ্টি হয়ে ধূলোয় পরিণত হয়ে সড়কগুলো সবজি চাষযোগ্য জমিতে পরিণত হয়েছে। সড়কের দুইশত মিটার জায়গার গাইডওয়াল ভেঙ্গে পার্শ্ববর্তী পুকুরে পড়ে গিয়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আর এইসব সড়ক দিয়ে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ জনসাধারণের পায়ে হাঁটায় চরম দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। পুরো সড়কে মাটি পরে পিচ ঢেকে পাকা সড়ক এখন কাঁচা সড়কে পরিণত হয়েছে। এতে রাতের কুয়াশায় মাটি ভিজে পিচ্ছিল হয়ে দুই চাকা ও তিন চাকা বিশিষ্ট যানবাহনগুলো বিভিন্ন দূর্ঘনার স্বীকার হচ্ছে। দিনের বেলায় সূর্যের আলোয় পিচ্ছিল মাটি ট্রাক্টরের বড় চাকায় পিষ্ট হয়ে ধুলো সৃষ্টি হয়ে সড়ক ও সড়কের আশপাশ এলাকার পরিবেশ দূষিত দুর্বিসহ করে তোলছে। ফলে ঐ এলাকার জনস্বাস্থ্য হুমকির মূখে রয়েছে। উপজেলার মহাশয়ের বাজার এলাকা থেকে গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে মিরপুর বাজারের উপর দিয়ে ট্রাক্টরের বডি থেকে দুই ফুট উচু করে খোলা অবস্থায় মাটি বোঝাই করে প্রতি মিনিট ১৫/২০টি ট্রাক্টর বিকট শব্দে চলাচল করছে। ফলে বাজারের জোড়া ব্রীজ নামক স্থানে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রাক্টরের অবাধ চলাচলে প্রশাসনের নিরবতায় জনমনে প্রশ্ন জাগছে গরীবের এ্যাম্বুলেন্স (সিএনজি) কে নিষিদ্ধ করে যন্ত্রদানব ট্রাক্টরকে পাকা সড়কে চলতে দেয়া হচ্ছে কোন স্বার্থে? এছাড়া উপজেলার গ্রামীণ সড়ক ইসলামপুর-গোলগাঁও, নতুনবাজার-সাটিয়াজুরী, মিরপুর-লামাতাশী, মিরপুর-মহাশয়ের বাজার, মিরপুর-বানিয়াগাঁও, মিরপুর-দুলিয়াখাল সড়কগুলো যন্ত্রদানবের দাপটে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে এই সকল সড়ক দিয়ে ট্রাক্টর ছাড়া অন্যান্য যানবাহনের চলাচল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ট্রাক্টরের বিষয় নিয়ে বিগত বছর উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় অনেকবার আলোচনা করেছি কোন কাজ হয়নি। ইট ভাটা মালিকরা প্রতিবছর শুকনো মৌসুমের শুরুতেই প্রশাসনকে চা-কফি খাইয়ে ট্রাক্টর চালানোর অলিখিত অনুমতি নিয়ে নেন। বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, কিছুদিন আগে ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছে। এই এলাকায় অতিরিক্ত পরিমান ইটভাটা হওয়ায় ট্রাক্টরের উপদ্রব বেশি। জনবল সংকটের কারণে আমরা বারবার অভিযান দিতে পারছি না। এদিকে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মহাসড়কে সিএনজি পেছনে আর কোন সময় সংঘর্ষ থামাতে হাওয়রাঞ্চলে দৌড়াই। লোক স্বল্পতার কারণে আর ট্রাক্টরের নিয়ে ভাবার সুযোগ হচ্ছে না।


     এই বিভাগের আরো খবর