,

জাতীয় সংসদে নবীগঞ্জ-বাহুবলের বিভিন্ন দাবী ও সমস্যা নিয়ে বক্তব্য রাখেন এমপি মুনিম বাবু : বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরা হলো

মাননীয় স্পীকার, আপনাকে ধন্যবাদ।
বসন্তের সুবাসিত কলতানে, কোকিলের কুহু কুহু ডাকে, আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সবাইকে জানাচ্ছি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর লাল গোলাপ শুভেচ্ছা। মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর বক্তব্য দেয়ার সুযোগ প্রদানের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মাননীয় স্পীকার, ফেব্র“য়ারি মাস, মহান ভাষা আন্দোলনের মাসে দাঁড়িয়ে বক্তব্যের শুরুতেই আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি মহান ভাষা শহীদ সহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার প্রাণপ্রিয় নেতা বাংলাদেশের সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি, গ্রাম বাংলার গণমানুষের প্রাণের নেতা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যাত্রার অগ্র সৈনিক জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে। যাঁরা আমাকে এই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দিয়েছেন। একইসাথে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আধুনিক বাংলার রূপাকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। আমি আরও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জ-১ এর নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার আপাময় জনসাধারণকে যারা আমাকে ভোটে নির্বাচিত করেছেন। তাছাড়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদেরও আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি। বিশেষভাবে স্মরণ করছি, গত কয়েক দিন আগে আমাদের কাছ থেকে চলে গেলেন সিলেটের কৃতি সন্তান উপমহাদেশের প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। মাননীয় স্পীকার, গত ২২ শে জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ আব্দুল হামিদ এই জাতীয় সংসদে একটি ভাষণ প্রদান করেছেন। গতানুগতিক ভাষণে তিনি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন। এই সফলতার জন্য অবশ্যই সরকারকে ধন্যবাদ। আমার দল জাতীয় পার্টি অবশ্যই এই সফলতার অংশীদার। তাছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার শাসনামলে এই সফলতার দ্বার উন্মোচন করেছিলেন। তবে সফলতার পাশাপাশি সরকারের কিছু ব্যর্থতাও আছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে তাঁর ভাষনে কখনো ব্যর্থতার জায়গাগুলোতে কথা বলতে শুনিনি। মাননীয় স্পীকার, মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেছেন বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপমুক্ত একটি সুখী, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়ভিত্তিক এবং জ্ঞাননির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ। তিনি আরো বলেছেন দারিদ্র্য বিমোচন এবং আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অন্যতম কৌশল। কিন্তু বাস্তবতা কি, মাননীয় স্পীকার। আমরা গরষষবহহরঁস উবাড়ষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষ (এমডিজি) অর্জন করেছি। শুধু তাই নয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য অনেক সস্মান নিয়ে এসেছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাই। আমরা ঝঁংঃধরহধনষব উবাড়ষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষ (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ইতোমধ্যেই কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। কিন্তু আমরা দেখছি সেবা খাতগুলি চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। মানুষের আয় বৈষম্য বাড়ছে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমরা শুধু সূচকের উর্ধ্বগতির দিকে মনোযোগ দিচ্ছি, গুণগত মানের বিশুদ্ধতার কথা ভাবছি না। ঘড়ঃ ছঁধষরঃু, আমরা শুধু ছঁধহঃরঃু র দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। কিন্তু এই বৈষম্য দূর করতে না পারলে ২০২১ সলের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অত্যন্ত কষ্টকর হবে। মাননীয় স্পীকার, বাংলাদেশ গ্রাম নির্ভর দেশ, কৃষি নির্ভর দেশ, নদীমাতৃক দেশ। তাই গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। গ্রামীণ অর্থনীতিতে শক্তিশালী করার জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গ্রামভিত্তিক উন্নয়নের ধারা শুরু করেছিলেন, দেশ গঠনের মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণ শুরু করেছিলেন। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার জন্য উপজেলা প্রশাসন সৃষ্টি করেছিলেন। মূলত সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাহেবের সময়েই এদেশে উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারা সৃষ্টি হয়। কিন্তু ৯০’র পর উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। মাননীয় স্পীকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষন করে বলতে চাই, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সার, বিশেষ করে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন বেশি হয়। ১৯৯২-৯৩ সালে এই সার কেলেংকারিতে অনেক কৃষকের রক্ত ঝড়েছে, অনেক কৃষক শহীদ হয়েছেন। আজ কৃষকের সারের কোন সংকট নেই। কিন্তু তৎকালীন সময়ে বিএনপি সরকারের সাথে যোগসাজসে যারা এই কেলেংকারিতে জড়িত ছিল, যারা এই নিরীহ কৃষকদের হত্যা করেছিল তাদের কোন বিচার হয়নি। আমি তাদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি এবং আমদানি নির্ভর না হয়ে দেশীয় কারখানাগুলো প্রয়োজনীয় ইউরিয়া উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। মাননীয় স্পীকার, আমরা এখন আর ভিক্ষুকের জাতি নই। আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এটা জাতির তৃপ্তি। কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি এখনও উপেক্ষিত। প্রতিনিয়ত মানুষ বিষাক্ত খাবার খাচ্ছে এবং বিভিন্ন রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যখাতে পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব। অকালে প্রাণ হারাচ্ছে বহু মানুষ। মাননীয় স্পীকার, স্বাস্থ্য খাতে বর্তমান সরকার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফলতা অনেক। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে অসামান্য অবদান রাখা এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পরিচালিত হচ্ছে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। ফলে কর্মরত কর্মচারীরা এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। চিকিৎসা সেবার এই কাজটি অত্যন্ত নিবিড় মনোযোগের সহিত করা উচিত। আমি মনে করি দ্রুত এই ক্লিনিকগুলো রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা দরকার। তাছাড়া প্রত্যেকটি ক্লিনিকে একজন ডিগ্রিধারী ডাক্তার পদায়নের ব্যবস্থা করলে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। মাননীয় স্পীকার, সকল উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছেন। বিগত কয়েক বছরে আমরা শিক্ষার সূচকে অনেক উপরে উঠে আসছি। কিন্তু শিক্ষার গুণগত মানের তেমন উন্নতি হচ্ছে না। এই সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু গোষ্ঠি শিক্ষা খাতে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কোমলমতি শিশুদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্বৃত্তায়ন যেকোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে। তা নাহলে আমরা জাতির মেরুদন্ড শক্ত করে আগাতে পারবো না। মাননীয় স্পীকার, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আকার প্রতিবছরই সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। সুবিধাভোগীদের সংখ্যা বাড়ছে, বরাদ্দও বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু যেই কাজটির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়ার দরকার তা হলো তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তাদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হবে। মাননীয় স্পীকার, প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকার মসজিদ/মন্দির/কবর স্থান/শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার/মেরামতের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য এলজিইডি থেকে প্রত্যেক সংসদ সদস্যের নিকট ১ কোটি টাকার তালিকা চাওয়া হলো। আমরা যথারীতি ১ কোটি টাকার প্রকল্প তালিকা দিলাম। কিন্তু এই প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা কি জানি না, মাননীয় স্পীকার। এলাকার জনসাধারণ আমাদের জিজ্ঞাসা করলে কিছুই বলতে পারি না। এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য আমি মাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রীর নিকট বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকার দু’একটি বিষয় আপনার মাধ্যমে এই সংসদে উত্থাপন করতে চাই। (১) আমার নির্বাচনী এলাকার কৃতি সন্তান আওয়ামী লীগের সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেব এই পার্লামেন্টের সদস্য থাকা অবস্থায় ২০০৫ সালে গ্রেনেড হামলা করে তাকেসহ বেশ কয়েকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য আবু জাহিরও সেদিন ভয়াবহ এই গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছিলেন। ভাগ্যক্রমে তিনি সেদিন বেঁচে যান। তাই আজ এই পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ টানা ৮ বছর দেশ শাসন করে চলেছে। দীর্ঘ ১২ বছর পার হলেও চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি। বিচার সম্পন্ন হয়নি বাহুবলের চাঞ্চল্যকর সেই চার শিশু হত্যার মামলার বিচার। রহস্যজনক কারণে বিচার প্রক্রিয়া এগুচ্ছে না। এই বিচার নিয়ে রাজনীতিকরণ চলছে। আইনের শাসন ভুলুন্টিত হওয়ার কারণে আজ হারাতে হয়েছে আমাদের প্রিয় সহকর্মী মনজুরুল ইসলাম লিটনকে। শুধু আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ নয়, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এসব চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চায়। (২) মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকা একদিকে হাওর-বাওড় অন্যদিকে পাহাড় ও সমতল ভূমির এক নৈসর্গিক লীলাভুমি। প্রকৃতি যেখানে উদার হলে উন্নয়নে ছোঁয়া সেখানে উপেক্ষিত। এখানে পর্যটন শিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে দারুনভাবে যে দুইটি ফাইভ স্টার হোটেল পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে ‘দি প্যালেস’ এন্ড ‘গ্রান্ট সুলতান’ তার মধ্যে ‘দি প্যালেস’ আমার নির্বাচনী এলাকার বাহুবলে অবস্থিত। এখানে প্রতিদিন প্রচুর দেশি বিদেশি পর্যটক আসছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার সহযোগিতা করলে এখানে পর্যটন খাতে দেশি-বিদেশি প্রচুর বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। (৩) মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রচুর হাওর রয়েছে। হাওরের হাজার হাজার একর জমিতে বছরের অধিকাংশ সময় কোন চাষাবাদ হয় না। জাতির পিতা এই হাওর-বাওড়ের জন্য গঠন করেছিলেন ‘বাংলাদেশ হাওর উন্নয়ন বোর্ড’। কিন্তু জাতির পিতার নির্মম হত্যার ৪০ বছর পরও এই বোর্ডের গতিশীল কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না। অথচ হাওরের এই বিশাল অনাবাদী হতেই তৈরি হতে পারে জাতির অফুরন্ত সম্ভাবনা। (৪) মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ ও বাহুবল গ্যাস-বিদ্যুতের এক বিরাট উৎস। বিশেষ করে বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র আমার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত, যেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাবের শিকার হচ্ছে এলাকার জনগণ। জাতীয় স্বার্থে আমার এলাকার মানুষ এর কোন প্রতিবাদ করছে না। অথচ এই এলাকার জনগণ গ্যাস সংযোগের সুবিধা পাচ্ছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, মাননীয় স্পীকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত বছর আমার নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে এলাকার জনসাধারণ গ্যাস সংযোগের দাবি জানিয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন উৎপন্ন গ্যাসের কিছুটা সংশ্লিষ্ট বিতরণের চিন্তা করছে সরকার। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি আমার নির্বাচনী এলাকার, বিশেষ করে নবীগঞ্জ উপজেলার ৩, ৪, ৫, ৬নং ইউনিয়নে অগ্রাধিকারভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। (৫) মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকা শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক চেয়ে পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার হার এখানে একেবারেই কম। ইতোমধ্যেই আমার নির্বাচনী এলাকার নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ এবং নবীগঞ্জ জে. কে. উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারীকরণ করায় আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিনয়ের সহিত অনুরোধ করছি, আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং বাহুবল উপজেলা সদরে অবস্থিত বাহুবল ডিগ্রি কলেজ এবং দীননাথ ইনস্টিটিউশনকে সরকারিকরণ করার জন্য। মাননীয় স্পীকার, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আমার নির্বাচনী এলাকার অনেক গ্রামে এখনো কোন বিদ্যালয় নাই। নবীগঞ্জ উপজেলার ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নের পূর্ব কসবা, ৬নং কুর্শি ইউনিয়নের হৈবতপুর, ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নের গাজীর মোকাম গ্রাম এবং বাহুবল উপজেলার ২নং পুটিজুরি ইউনিয়নের রূপাইচড়া চা বাগান অত্যন্ত জনবহুল কিন্তু কোন স্কুল না থাকায় শিশুরা মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুত এই গ্রামগুলিতে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা অতীব প্রয়োজন। তাছাড়া এই অঞ্চলের শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, যথা- নতুন ভবন নির্মাণ, পুরাতন ভবন সংস্কার/মেরামত করা, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন এবং কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা প্রয়োজন। (৫) মাননীয় স্পীকার, নদী ভাঙ্গন আমার এলাকার একটি অন্যতম সমস্যা। কুশিয়ারা নদী আমার নির্বাচনী এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলার ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক গ্রামের প্রায় অর্ধেক কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছর ভাঙতে ভাঙতে ঘর-বাড়ি হারিয়ে এই গ্রামের মানুষগুলো অত্যন্ত অসহায় জীবন-যাপন করছে। এই ভাঙন রোধ করা না হলে পুরো গ্রামটি হয়তো নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে। তাই দ্রুত এই গ্রামটিকে রক্ষা করার জন্য মাননীয় পানিসম্পদ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। (৬) মাননীয় স্পীকার, স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সরকার বদ্ধ পরিকল্প। আমার নির্বাচনী এলাকার বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংস্কার কাজ এবং যন্ত্রপাতি সরবরাহ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাহুবল হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধন হলেও নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। দ্রুত হাসপাতালটি উদ্বোধন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকার গোপলার বাজার ও আউশকান্দি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দুটি এক সময়ের অত্যন্ত ব্যস্থতম স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হলেও বর্তমানে অনেক পরিত্যাক্ত অবস্থায়। কারণ এখানে দীর্ঘদিন কোন ডাক্তার নেই। জরুরিভিত্তিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্র দুটিতে ডাক্তার পদায়নসহ গোপলার বাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রূপান্তর করার জন্য মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। (৭) মাননীয় স্পীকার, স্বাধীনতার পর ৪৫ বছরের অধিকাংশ সময় আমার নির্বাচনী এলাকা ছিল বাংলাদেশের একটি অবহেলিত জনপদ। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে আমার নির্বাচনী এলাকার কৃতিসন্তান শাহ এম এস কিবরিয়া সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন এই অবহেলিত জনপদটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। সাবেক এই সফল অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনায় এলাকার রাস্তা-ঘাট, মসজিদ, মন্দির, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। কিন্তু অত্যন্তু পরিতাপের বিষয় ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তন হলে সমস্ত উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ে। মাননীয় স্পীকার, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সমগ্র দেশে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জিং সেই নির্বাচনে এলাকার জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে। বর্তমান সরকারের তিন বছরে আমার এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়ন হয়েছে। আরো কয়েকটি কাজ জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করা একান্ত প্রয়োজন। মাননীয় স্পীকার, হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ-আউশকান্দি রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষও শত শত যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু দীর্ঘদিন রাস্তাটি মেরামত বা সংস্কার না হওয়ায় জনসাধারণ যাতায়াতের ক্ষেত্রে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করা একান্ত প্রয়োজন। আউশকান্দি-দেওতৈল কিবরিয়া সড়কটি ১৯৯৮ সালের পর কোন সংস্কার হয়নি। দীর্ঘদিন মেরামত/সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ১১নং গজনাইপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও-উমেদগঞ্জ সড়কটির একই অবস্থা। জনসাধারণ দুর্ভোগ লাঘবে এই সড়কগুলোর সংস্কার করা অতীব জরুরী। নবীগঞ্জ উপজেলার ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নের ইমামগঞ্জ বাজারের কাছে গোপলা নদীর উপর এবং ৫নং ইউনিয়নের মুকিমপুর গ্রামের কাছে ১০০ মিটার করে দুইটি ব্রিজ নির্মাণ করা অতীব জরুরি। তাই যাতায়াত ব্যবস্থার অবকাঠামো উন্নয়নে জরুরীভিত্তিতে সড়কগুলো সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মিত হয়েছে। তবে নবীগঞ্জ উপজেলার ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়ন এবং ৮নং নবীগঞ্জ ইউনিয়নে জরুরিভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। কারণ যে ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে অত্যন্ত জরাজীর্ণ এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকার নবীগঞ্জ উপজেলা সদরে কোন অডিটোরিয়াম নাই। ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যোগেও এখানে কোন কমিউনিটি সেন্টার বা অডিটোরিয়াম নির্মিত হয়নি। ফলে এলাকায় কোন সামাজিক বা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য স্কুল-কলেজের মাঠ বা খোলা জায়গা ছাড়া কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে কোন কর্মসূচি পালন করতে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অথচ মানুষ এখন সকল কর্মসূচি ইনডোরে পালন করতে চায়। তাই মাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রীকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি আমার নবীগঞ্জ উপজেলা সদরে একটি অডিটোয়িাম স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার করার জন্য। (৮) মাননীয় স্পীকার, আমার এলাকা সুবিধাবঞ্চিত এবং দরিদ্রপীড়িত এলাকা। এখানকার অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে। তাই এখানে স্যানিটেশন সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য বেশ কিছু গভীর নলকুপ স্থাপন করা প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আকার সম্প্রসারণ করা দরকার, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো দরকার। সর্বশেষ মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে তার মূল্যবান ভাষণ প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ, মাননীয় স্পীকার।
আল্লাহ হাফেজ।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।


     এই বিভাগের আরো খবর