,

হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কের দূর্লভপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ইমাম নিহত

জুয়েল চৌধুরী ॥ হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কের দূর্লভপুর নামকস্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মাওলানা মহিউদ্দিন (৫০) নামের এক ইমাম নিহত হয়েছেন। তবে নিহতের স্বজনদের দাবি মূমূর্ষু অবস্থায় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ৩ ঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও ডাক্তার, নার্সসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কেউ এগিয়ে না আসায় তিনি মারা গেছেন। এ নিয়ে হাসপাতালের কর্মচারী ও নার্স এবং স্টাফদের সাথে নিহতের স্বজনদের বাকবিতন্ডা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে দায়িত্বরত চিকিৎসক কৌশলে সটকে পড়েন। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিহত ইমাম মহিউদ্দিন বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ সাঙ্গর গ্রামের মৃত আরব আলীর পুত্র। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রিচি ইশানকোনা জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি হবিগঞ্জ থেকে টমটমযোগে রিচি যাচ্ছিলেন। তাকে বহনকৃত টমটমটি উল্লেখিতস্থানে পৌছলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। অভিযোগ উঠেছে, জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক আরএমও মোঃ বজলুর রহমান প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পুরুষ সার্জারী ওয়ার্ডে প্রেরণ করেন। কোন সিট না থাকায় মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। ৩ ঘন্টা ধরে তিনি মেঝেতে পড়ে মুত্যুযন্ত্রনায় ছটফট করলেও হাসপাতালের কোন নার্স, কিংবা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসেননি। রিচি ইশানকোনা জামে মসজিদের সেক্রেটারী নায়েব হোসেন জানান, বারবার তিনি অভিযুক্ত ডাক্তার বজলুর রহমানের নিকট ছুটে যান। রোগীর অবস্থা আশংকাজনক, তার পর্যাপ্ত চিকিৎসা প্রয়োজন জানিয়ে একাধিকবার অনুরোধ করলেও তিনি কর্ণপাত না করে শিক্ষানবীশ নার্সদের নিয়ে তার চেম্বারে গল্পগুজবে সময় ব্যয় করেন। এক পর্যায়ে বিকাল ৪টার দিকে ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। মসজিদ সেক্রেটারী আরো অভিযোগ করেন, মাওলানা মহিউদ্দিনের শ্বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি বিকাল ৪টার দিকে ফের ছুটে যান আরএমও বজলুর রহমানের চেম্বারে। অনেক অনুনয় বিনয় করার পর যখন ডাক্তার বজলুর রহমান সার্জারী ওয়ার্ডে গিয়ে পৌছেন ততক্ষণে মারা যান ইমাম মহিউদ্দিন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সার্জারী ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, ইমাম সাহেব মৃত্যুবরণ করেছেন বলা হলেও ডাক্তার বজলুর রহমান কোনরূপ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেননি। এক পর্যায়ে দায় এড়াতে বাধ্য হয়েই নিজের মনগড়া মতো ইমাম মহিউদ্দিনের শরীরে ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বজলুর রহমান জানান, ইমাম মহিউদ্দিন আর বেচেঁ নেই। তার মৃত্যু হয়েছে। এ খবর শুনার পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নিহত ইমামের সাথে আশা লোকজনের মাঝে। শুরু হয় ডাক্তার ও নার্সদের সাথে বাকবিতন্ডা। এক পর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশলে সার্জারী ওয়ার্ড থেকে সটকে পড়েন। উত্তেজিত ইমামের স্বজনরা হাসপাতালের বিভিন্ন রোম তল্লাশী করেও তার কোন সন্ধান পাননি। উল্লেখ্য ডাক্তার বজলুর রহমান হাসপাতালে যোগদান করার পর চিকিৎসার অবহেলায় একাধিক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বার বার রোগী মৃত্যুর ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশ হলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। বিভিন্ন সময় তার এসব দায় এড়ানোর ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ করলে তিনি হাসপাতালের অন্যান্য ডাক্তারদের প্রলুব্দ করে চিকিৎসক ধর্মঘটের ডাক দিয়ে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেন। ফলে রোগীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে কেউ তার দায় এড়ানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। জানা গেছে আজ রবিবার সকাল ১০টায় ইমাম মহিউদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে জানাজার নামাজ শেষে তার দাফন সম্পন্ন হবে। এ বিষয়ে ডাক্তার বজলুর রহমান জানান, ইমাম সাহেবের হায়াত নেই। তাই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি চিকিৎসায় কোন অবহেলা করেনি। পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা দিয়েছি।


     এই বিভাগের আরো খবর