,

দুই জঙ্গি আস্তানার সন্ধান : শান্ত শহর মৌলভীবাজারে হঠাৎ উদ্বেগ উৎকণ্ঠা

জুয়েল চৌধুরী ॥ শান্ত শহর মৌলভীবাজারে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। জেলা শহরে দুইটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের খবরে এমন উদ্বেগে প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলার লোকজন। বেলা বাড়ার সাথে গণমাধ্যমে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রবাসীরা যোগাযোগ করতে থাকেন তাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে। জঙ্গি আস্তানার একটি বাড়ি সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর। অন্যটি পৌর শহরের বড়হাট এলাকায়। একটি বাড়ি থেকে অন্যটির দুরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। গভীর রাত থেকেই প্রশাসনের প্রস্তুতি। কোন বড় ধরনের অভিযানের হবে এমনটিই কিছুটা টের পাচ্ছিল নগরবাসী। তাই রাত থেকে তাদের কৌতুহলের শেষ নেই। শেষ রাতেই জানা গেল অভিযানের নির্দিষ্ট বাড়ি। ভোর থেকে শহরের বড়হাটের জঙ্গি আস্তানার ওই বাড়ির দিকে চোখ পৌরবাসীর। ওই এলাকার আশপাশের চা দোকানীরা প্রতিদিনের মত তাদের দোকানের কাজ শুরু করতে গেলেই টের পান চুলায় গ্যাস নেই। বিদ্যুত নেই। আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকজন তাদেরকে দোকান খোলতে বারণ করছেন। কিছু সময়ের ভেতরে পুরো শহর জুড়ে শুরু হয় আইন শৃংখলা বাহিনীর বাড়তি নজরদারী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও প্রবেশ দ্বারগুলোতে মোতায়ন করা হয় অতিরিক্ত র‌্যাব ও পুলিশ। সন্দেহ হলে চালানো হয় তল্লাশি। শহরের ঢাকা সিলেট সড়কের দুইপাশের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। ঘুম থেকে উঠে কিছু টের পাওয়ার আগেই বড়হাট এলাকার লোকজন দেখতে পান তাদের বাসার আশপাশে আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকজন। মাইকে ঘোষণা হচ্ছে বাসার লোকজন যেন নিরাপদে বাসার ভিতরে অবস্থান করেন। বারন করা হয় বাসার ছাদে না ওঠতে। স্কুল কলেজ গামী শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেও তারা বাসা থেকে বের হতে পারেননি। সিলেটের পরপরই মৌলভীবাজারেও জঙ্গি অস্তানায় অভিযান হচ্ছে এমন খবর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হলে জেলার সাত উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার মানুষের মধ্যেও দেখা দেয় উদ্বেগ উৎকন্ঠা। উৎসুক জনতা অভিযান দেখতে ভিড় করলেও বাড়িটির আশপাশে যেতে দিচ্ছেন না আইন শৃংখলাবাহীর সদস্যরা। শহরের মনুনদী তীরবর্তী বড়হাট আবু শাহ (রঃ) দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন ৩ তলার ওই বাড়িটির কয়েক কিলোমিটার এলাকা নিরাপত্তা জনিত কারণে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘিরে রেখেছে। সেখানে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা। মিডিয়া কর্মীরা ওই গলির ভিতরে প্রবেশ করতে না পারায় তারা গলির মুখে প্রধান সড়কেই অবস্থান নিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। স্থানীয় সুত্রে জানা যায় দুইটি বাড়ির মালিকই সাইফুর রহমান নামের একজন লন্ডন প্রবাসী। বড়হাটের ওই বাড়ি ৩ তলা হলেও ১ম ও ২য় তলা রয়েছে ভাড়ায়। আর ৩য় তলা নির্মাণাধীন। দুই ‘জঙ্গি আস্তানার’ মালিক লন্ডন প্রবাসী ঃ মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘিরে রাখা পৃথক বাড়ি দুটির মালিক একই ব্যক্তি। বাড়ির মালিকের নাম সাইফুর রহমান। তিনি লন্ডন প্রবাসী। স্থানীয় লোকজন ও বাড়ি দুটির তত্ত্বাবধানে থাকা সাইফুর রহমানের এক আত্মীয় এ তথ্য জানিয়েছেন। নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু ঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাসিরপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সোয়াত টিম। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ১৮ মিনিটে এ অভিযান শুরু হয়। জানা যায়, ৬টা ১৮ মিনিটে অবস্থান নিয়ে জঙ্গি আস্তানার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন সোয়াত সদস্যরা। কিছুক্ষণের পরপরই গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এর আগে, বিকাল পৌনে ৫টার দিকে সোয়াত টিমের সদস্যরা নাসিরপুরে পৌঁছান। মৌলভীবাজারের দুই এলাকায় ১৪৪ ধারা ঃ মৌলভীবাজারের যে দুটি বাড়ি ঘিরে আইন-শৃংখলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে, সেই দুই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, বড়হাটের বাড়ি ঘিরে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও কুসুমবাগ এলাকা এবং খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আশপাশের দুই কিলোমিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল করতে পারবে না, জনসাধারণের চলাচলও নিয়ন্ত্রিত থাকবে। তবে বড়হাটের ওই এলাকা সংলগ্ন ঢাকা-মৌলভীবাজার মহাসড়কে যান চলাচলে কোনা সমস্যা নেই। উল্লেখ্য, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় একটি বাড়ি এবং খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামে আরও একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও সিটিটিসি। দুটি আস্তানাতেই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-বিস্ফোরক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর