,

বিপুল ভোটে বিজয়ী ড. জয়া সেনগুপ্তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৯৬ হাজার ২৬০ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছায়েদ আলী মাহবুব রেজু সিংহ প্রতীকে পেয়েছেন ৪২ হাজার ১৭০ ভোট। শতকরা ৫৬ ভাগ ভোট পড়ে। এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগেই এক এক করে যখন নৌকা প্রতীক বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার খবর আসতে থাকে তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছায়েদ আলী মাহবুব ভোট গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ করেন। দিরাই পৌর সদরে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছায়েদ আলী মাহবুব বলেন, ‘নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভোট প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে আমি পড়ে জানাবো।’ স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগের পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেছেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। মানুষ জঙ্গিবাদ ও উন্নয়নের পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। দিন শেষে সন্ধ্যায় তিনি কেন এই অভিযোগ করলেন বুঝতে পারছি না। কোনো কেন্দ্রে কারচুপি হলে শতাধিক সাংবাদিকের চোখে পড়তো।’ প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই আসন থেকে ৭ বার এমপি নির্বাচিত হন। তবে অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় এই প্রথম ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক অনেক কম। এই আসনে মোট ২লাখ ৪৬ হাজার ৪৩১ ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩০ ভোটার ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে শাল্লায় ৪৭ হাজার ৯৫৭ ভোটের মধ্যে নৌকা প্রতীকে জয়া সেনগুপ্তা ৩৬টি কেন্দ্রে পেয়েছেন ৩৮ হাজার ৯০০ এবং সিংহ প্রতীকে ছায়েদ আলী মাহবুব পেয়েছেন ৯ হাজার ৫৭ ভোট। এদিকে দিরাইয়ে ৭৪টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৯৯ ভোটারের মধ্যে ৯০ হাজার ৪৭৩ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে জয়া সেনগুপ্তা পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৩৬০ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছায়েদ আলী মাহবুব পেয়েছেন ৩৩ হাজার ১১৩ ভোট। বৈরি আবহাওয়ার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। সুরঞ্জিত সেনের মর্যাদা সরকারের উন্নয়নের পক্ষে মানুষ ভোট দিয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ভোট দিতেন দিরাই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রের মোট ভোটার ৩ হাজার ১৪৪ ভোট। পৌরসদরের এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি ভোটকেন্দ্রে অর্ধেক ভোটারই ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই কেন্দ্রে ১ হাজার ৬২২ ভোট পড়ে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীক পেয়েছে ১ হাজার ১০ ভোট এবং সিংহ প্রতীক পেয়েছে ৬শ ১২ ভোট। ড. জয়া সেনগুপ্তা ভোট দিয়েছেন দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সেখানে মোট ৩ হাজার ১০৮ ভোটের মধ্যে ১১শ ৬২ ভোট পড়ে। এর মধ্যে নৌকা পেয়েছে ৮৩৮ এবং সিংহ প্রতীক পেয়েছে ৩২৪ ভোট। গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি কেন্দ্রে অর্ধেকেরও কম ভোটার ভোট দেন। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছায়েদ আলী মাহবুবের নিজ গ্রাম ভাটিপাড়া ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেই ৬০ ভাগ ভোট পড়েছে। ওই কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ২৭৩ ভোটের মধ্যে ১ হাজার ৪৪৭ ভোট পড়ে। এর মধ্যে সিংহ প্রতীক পেয়েছে ৯৭৯ ভোট এবং নৌকা পেয়েছে ৪৬১ ভোট। তার নিজ গ্রামের বিপুল সংখ্যক ভোটার ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। বুধবার রাত থেকেই এ এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ১১টার পর থেকে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা বাড়তে থাকে। ২টার দিকে নারী ভোটারদের উপস্থিতি অনেকটা বৃদ্ধি পেলেও শেষ সময় ৪টা পর্যন্ত ভোটারদের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েনি। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দলীয় অবস্থানের চেয়ে বরাবরই ব্যক্তি ইমেজে ভোটাভোটি হয়েছে এই সংসদীয় আসনে। সুরঞ্জিত সেন যে দল থেকেই নির্বাচন করেছেন ব্যক্তি ইমেজে বারবারই তিনি নির্বাচিত হন। ’৯৬ সালে গণতন্ত্রী পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রথমবারের মত এই নির্বাচনী আসনে হোচট খান। ওই নির্বাচনে বর্তমানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরীর কাছে হেরে যান। এরপর হবিগঞ্জ-২ আসনে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে জাতীয় সংসদে জায়গা করে নেন। পরবর্তীতে আরও তিনটি নির্বাচনে এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। সুনামগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরীরও রয়েছে শক্ত অবস্থান। গত উপজেলা নির্বাচনে তার সমর্থিত দিরাই ও শাল্লায় দুই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হন। এর মধ্য দিয়ে নাছির চৌধুরীর ব্যক্তি ইমেজ আরও প্রকাশ্যে আসে। এবারের উপনির্বাচনে বিএনপি না আসলেও নাছির চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ায় আলোচনায় চলে আসেন ছায়েদ আলী মাহবুব রেজু। এলাকায় অপরিচিত এই প্রবাসীর আতংকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও নির্বাচনী মাঠে হাঁফিয়ে উঠেন। একে একে নেতারা ড. জয়া সেনের পক্ষে ভোট চাইতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতেও দেখা গেছে।


     এই বিভাগের আরো খবর