,

হবিগঞ্জে কাল বৈশাখীর তান্ডব : ৩’শ হত-দরিদ্র পরিবার খোলা আকাশের নীচে

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন ॥ কাল বৈশাখীর ভয়াবহ তান্ডবে হবিগঞ্জ সদর উপজেলাধীন একাধিক গ্রামের মানুষ এখন সহায়-সম্বল হারিয়ে পুরোপুরি নিঃস্ব। কোলের শিশু থেকে শুরু করে গরু-ছাগল নিয়ে খোলা আকাশের নীচে রয়েছে অন্তত ৩ শতাধিক হত-দরিদ্র পরিবার। মেঘলা আকাশে বজ্রপাতের বিকট বিকট শব্দ আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মাঝে প্রান রক্ষার যেমন বিন্দুমাত্র সুবিধাজনক স্থানটুকু খুঁেজ পাচ্ছে না ওরা, তেমনি এই ব্যাপক ধ্বংসলীলার মাঝে কারো ঘরেই নেই রক্ষিত চাল-ডাল বা অন্য কিছু। ফলে কোন মায়ের সুযোগ নেই কারো চুলোতে ভাতের হাঁিড় বসিয়ে অন্তত দেড় থেকে ৩/৪ বছর বয়সী কুলের শিশুটির মুখে তুলে দেবে এক মুঠো ভাত। উপরন্ত দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব ও লজ্জা নিবারনে কাপড় আর ঘুমুনোর জন্য শুকনো জায়গা-বিছানা। তবে এই অসহায় মানুষগুলোকে রক্ষায় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক উপ-সচিব মোঃ সফিউল আলম এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ, টি, এম আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন। যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। আজ শুক্রবার ভোর রাত পৌনে ২ টার দিকে জেলা শহর হবিগঞ্জ সহ বিভিন্ন উপজেলার ওপর দিয়ে কয়েক ঘন্টা ব্যাপী বয়ে যায় প্রচন্ড কাল বৈশাখী ঝড়। এই ঝড়ে জেলা শহর হবিগঞ্জ সহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় বহু গাছপালা-খুঁটি ভেঙ্গে পড়লে বড় ধরনের বিদ্যুত বিপর্যয় ঘটে। কাঁচা-অর্ধপাকা বাড়ী-ঘর ক্ষতিগস্থ হয়। তবে এই কালবৈশাখীর ভয়াবহ তান্ডবের কবলে পড়ে জেলার সদর উপজেলাধীন নিজামপুর ইউনিয়ন। সরেজমিন এই উপজেলার শুটকীপাড়া, শরিফাবাদ, চক্রমোহনা, বলবারচক, এবতাবপুর, বড়চর, পূর্ব কাটখালী ও নিতাইচক ঘুরে দেখা গেছে, এই ৮টি গ্রামের হত দরিদ্র মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে। আর এই কালবৈশাখী ঝড়ে তাদেরই বাড়ী-ঘর শুধু নয় গাছপালা, বৈদ্যেতিক খুঁটিও ব্যাপক হারে ভেঙ্গে পড়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শুটকীপাড়া গ্রাম। এখানেই বসবাস করেন অন্তত অর্ধশতাধিক হত দরিদ্র পরিবার। এই ভয়াবহ তান্ডব থেকে রেহাই পায়নি একটি বাড়ীও। সবগুলো কাচা-অর্ধপাকা বাড়ী মাটির সাথে মিশে গেছে। কাল বৈশাখীর ছোবলে অনেক বাড়ীর চালে টীন আর পড়নের কাপড় পর্যন্ত উড়িয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দুরে শুধু নয় গাছের উপরেও লেগে থাকতে দেখা গেছে। বিছানা-বালিশ, গরু-ছাগল সবকিছুই বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে আছে খোলা আকাশের নীচে। শিশুরা তাদের মায়ের আচল ধরে এক মঠো ভাত আর ঘুমোনোর জন্য কান্না করছে। এমনি পরি¯ি’তিতে দেখা গেল, জেলা প্রশাসনের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক উপ-সচিব মোঃ সফিউল আলম ও সংশ্লিস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম আজহারুল ইসলামের উপস্থিততে এই গ্রামটিতে চলছে ৩ টি ভাগে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরী। সেই সাথে চলছে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সরকারীভাবে নয় নানা উপায়ে সংগৃহিত তাৎক্ষনিক চাল বিতরণ। উপ-সচিব সফিউল আলম ও সংশ্লিস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম জানান, সরকারীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এই হত-দরিদ্র পরিবারগুলোকে সাহাযার্থে তাদেরকে তাৎক্ষনিক গ্রহন করতে হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ৫০ কেজি ওজনের ২০ বস্তা চাল এনে প্রতি পরিবারকে আপাতত ১০ কেজি করে চাল বিতরন শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতি পরিবারকে ২ বান্ডিল করে টিন এবং নগদ ৬ হাজার টাকা এবং আরও ২ লাখ টাকা সহ ৫ টন চাউল স্থানীয় নিজামপুর ইউপ চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিনের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা জানান, এই সাহায্য ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য খুবই অপ্রতুল। তাই সরকারীভাবে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক হিসেবে অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো এই দখল আপাতত কাটিয়ে উঠতে হলে আরও ৩’শ বান্ডিল টিন ও ১০ টন চাল বরাদ্ধ প্রয়োজন। সেই সাথে নগদ অর্থ বরাদ্ধও প্রয়োজন। এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর পক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল মুকিত চৌধুরী ও নিজামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন জনকন্ঠকে বলেন, কালবৈশাথীর এমন তান্ডব অতীতে তারা দেখেননি। যা কিছু সাহায্য দেয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। তারপরও জেলা প্রশাসন তাৎক্ষনিক ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোয় অনেকেই মনোবল ফিরে পাবে।


     এই বিভাগের আরো খবর