,

নিজামপুর ইউনিয়নে কাল বৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে নগদ টাকা, টেউনিট ও চাউল বিতরণ

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন ॥ কাল বৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে লন্ডভন্ড হবিগঞ্জের নিজামপুর ইউনিয়নের শুটকিপাড়াসহ ৮টি গ্রামের অন্তঃত দু’সহস্রাধিক নিঃস্ব হত-দরিদ্র মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচেই রয়েছে। আর ভিজছে বৃষ্টিতে। কাপড়-চোপড়, বিছানা-বালিশ আর চকিগুলো শুধু নয় ভেঙ্গেপড়া বাড়ীর সামগ্রীগুলোও বৃষ্টি ও কর্দমাখা মাটিতে রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যেন ওদের বাস অত্যন্ত দূর্বিসহ। মেঘলা আকাশে কখনও বজ্রপাতের ঘনঘটা আবার কখনও গুড়িগুড়ি এমনকি ভারী বৃষ্টিপাত আর ধমকা হাওয়া-অথচ এরই মাঝেই ভেজা এক কাপড়ে শিশু সন্তান নিয়ে ওরা স্যাতস্যাতে মাটির ওপরে একটু নিরাপদ আশ্রয়ের প্রহর গুনছে। শুধু তাই নয়, সরকারী সাহায্যের প্রত্যাশায় ওরা এও ভাবছে, স্ব স্ব ভিটে আবারও তারা বাড়ী তৈরী করে তার প্রিয় শিশু সন্তানের মুখে এক মুঠো ভাত তুলে দিতে পারবে কি-না। আর সংসারে আসবে আবারও প্রানচাঞ্চল্যতা। এরই মাঝে যেন ওদের একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস। আগের দিন ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ ফেরার পথিমধ্যে শুক্রবার গভীর রাতে সাংবাদিক প্রতিনিধি রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন ও সদর ইউএনও এটিএম আজহারুল ইসলামকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাম শুটকিপাড়ার ধ্বংস লীলা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এসময় ঘুমন্ত এইসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের অনেকেই জেগে উঠেন এবং জেলা প্রশাসককে কাছে পেয়ে বাঁচার আকুতি জানান। তখনই এইসব হত-দরিদ্র মানুষের কাছে খবর পৌছে যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য ও গৃহ নির্মানের জন্য আর্থিক সাহায্য ও নির্মান সামগ্রী আসছে। আর তা আজ শনিবারই দেয়া হবে। ফলে সহায়-সম্বল হারানো শত শত নারী-পুরুষ স্থানীয় নিজামপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকে। এই ফাঁকে আবারও জেলা প্রশাসনের পক্ষে এডিসি (সার্বিক) মোঃ এমরান হোসেন এবং এডিসি (রাজস্ব) মোঃ রোকন উদ্দিন সাংবাদিক রফিকুল হাসান চৌধুরীকে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলো পরিদর্শন ও সর্বশেষ পরিস্থিতি জরিপ করেন। এর অল্প কিছুক্ষনের মাঝেই একের পর এক আসতে থাকে জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিগণ। তখনও এইসব মানুষ চিন্তিত ছিলেন যে, আদৌ তারা সরকারী সাহায্য পাচ্ছে কি-না। তেমনি মুহুর্তে জেলা প্রশাসক সাবিনা আলমও পৌছলেন সংশ্লিস্ট ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে। হতাশায় নিমজ্জিত এই মানুষগুলো ফিরে পেল নতুন প্রান। এখন তারা বুঝতে পারলো সরকারী সাহায্য পাবেই তারা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এই পরিষদ প্রাঙ্গনে জেলা প্রশাসক সাবিনা আলমের উপস্থিতিতে এবং সদর ইউএনও এ,টি,এম আজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় শুরু হলো ক্ষতিগ্রস্থ এই হত-দরিদ্র মানুষ গুলোর মাঝে সরকারী সাহায্য তুলে দেয়ার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এসময় ওই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর পাশে বর্তমান সরকার ও জেলা প্রশাসন সবর্দাই পাশে শুধু থাকবে না বরং বাড়ী-ঘর বানিয়ে যাতে আবারও মাথা তুলে মানুষগুলো দাঁড়াতে পারে সে ব্যবস্থাই সরকার দ্রুত গতিতে করবে এমনই কালবৈশাখীর তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক উপ-সচিব মোঃ সফিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ এমরান হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ রোকন উদ্দিন, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমুদুল হক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব রইছ মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসি কবির, আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থা কর্তৃক গঠিত জেলা স্বাক্ষী ও ভিকটিম সুরক্ষা কমিটির মেম্বার সাংবাদিক রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুর রশীদ তালুকদার ইকবাল, আব্দুল মুকিত চৌধুরী ও সংশ্লিস্ট ইউপি চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন প্রমুখ। পরবর্তীতে প্রাথমিক তালিকানুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে ওই তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতি পরিবারের হাতে দুই ভাগে ৫ থেকে ২ হাজার টাকা এবং ২ বান্ডিল করে ঢেউ টিন ২৩৪ জনের তুলে দেন জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম। এসময় জেলা প্রশাসক সাবিনা ক্ষতিগ্রস্থদের জানিয়ে দেন ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে কোন ক্রমেই খাদ্য-বস্ত্র বা বাড়ী নির্মানে অসুবিধায় না পড়েন সে ব্যাপারে সরকার থেকে আরও বরাদ্ধ আনার লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। এতে কোন ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না বলেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন।


     এই বিভাগের আরো খবর