,

মাকে হত্যাকারী ঘাতক আমিরের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

জসিম তালুকদার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের কামিরাই গ্রামে মাকে হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক পুত্র আমির আহমেদ। গতকাল রবিবার বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রায় ২ ঘন্টা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কাওছার আলমের আদালতে সে লোমহর্ষক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে ঘাতক আমির নিজের দোষ স্বীকার করে জানায়, এ ঘটনার জন্য সে অনুতপ্ত নয়। সে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। এ জন্য আদালত তার জন্য যে শাস্তি নির্ধারণ করবেন সে মাথা পেতে নেবে। জবানবন্দিকালে আমির আদালতের কাছে তার মায়ের পরকীয়া প্রেমিকের নামও প্রকাশ করেছে। তবে ওই পরকীয়া প্রেমিকের নাম তদন্তের স্বার্থে এ মুর্হুতে প্রকাশ করছে না পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার সকালে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের কামিরাই গ্রামের লন্ডন প্রবাসী হাজী জরিফ উল্লার কন্যা আমিনা বেগম (৩৫) এর হাত-পা বাঁধা গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আমিনা বেগমের পুত্র আমির আহমেদ ওইদিন সকালে সকালে তার মাকে খাবারের জন্য ডাকতে গেলে ঘরের দরজা খোলা দেখতে পায়। পরে সে ঘরে প্রবেশ করে দেখে বিছানায় তার মায়ের হাত-পা বাঁধা লাশ পড়ে রয়েছে। গলার উপর বালিশ চাপা দেয়া রয়েছে। বালিশ সরিয়ে সে দেখতে পায় গলা কাটা। এ সময় আমির চিৎকার করলে পাড়া প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হলে তারা এসে আমিনা বেগমের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে। এদিকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আমিনা বেগমের পুত্র সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আমির আহমেদ (১৮) কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমির জানায়, সে তার মাকে হত্যা করেছে। তার মায়ের সাথে জনৈক ব্যক্তির পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আর এ বিষয়টি সে মেনে নিতে না পাড়ায় মাকে হত্যা করে। উল্লেখ্য, আমিনা বেগমের স্বামী মানসিক রোগী হওয়ার কারণে তিনি একা আলাদা ঘরে থাকতেন। তার পিতা লন্ডন প্রবাসী জরিফ উল্লা দুই বিয়ে করেছেন। জরিফ উল্লা মারা যাবার পরে জায়গা সম্পদ নিয়ে সৎ ভাইদের সাথে বিরোধ চলে আসছে। গত কয়েক বছর ধরে খাস জমি নিয়ে বাউশা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইফুর রহমানের সাথে আমেনা বেগমের মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে। আমেনা বেগম কামিরাই গ্রামের জাবিদ উল্লাহ স্ত্রী। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমেনার পুত্র আমিরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং গতকাল রবিবার আদালতে প্রেরণ করে। আদালত তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। সে আদালতকে আরো জানায়, তার মা দীর্ঘদিন ধরে একা ঘরে বসবাস করে আসছেন। প্রায় রাতেই মায়ের পরকীয়া প্রেমিক তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। একদিন সে ওই পরকীয়া প্রেমিককে দেখে ফেললে ওই ব্যক্তির সাথে মেলামেশা করতে সে তার মাকে বারণ করে। কিন্তু আমিনা বেগম বরাবর ওই ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকে। এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি আমির। ফলে সে তার মাকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করে। ওই দিন রাতে খাবারের সাথে ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে প্রথমে সে তার মাকে অচেতন করে হাতঁ-পা বেধে ফেলে। তারপর রাতে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে এবং বালিশ চাপা দিয়ে রাখে। সে আদালতকে জানায়, এ হত্যাকান্ড সে একাই ঘটিয়েছে। তার সাথে আর কেউ ছিল না এবং হত্যার প্রমাণ লোপাটের জন্য সে হাতে গ্লাফস পড়েছিল এবং পুলিশ যাতে তাকে সন্দেহ করতে না পারে সে জন্য গ্লাফস দুইটি আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। পুলিশ আমিরের দেয়া তথ্য মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি বাড়ির রান্না ঘরে হাড়িপাতিল দিয়ে ঢাকা অবস্থায় উদ্ধার করে। যা জবানবন্দিকালে সে আদালতকে ব্যবহৃত ছুরিটি দেখায়। দুই ঘন্টা জবানবন্দি শেষে পুলিশ তাকে কারাগারে নিয়ে যায়। এ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে নবীগঞ্জ থানার ওসি এসএম আতাউর রহমান জানান, ঘাতক আদালতে তার দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে সেখানে রিমান্ডের প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে নিহত আমিনার স্বামী জাবিদ উল্লা বাদী হয়ে আমির আলীসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর