,

আওয়ামী লীগ-বিএনপি বিরল ঐকমত্য

সময় ডেস্ক ॥ দেশের চলমান প্রায় প্রতিটি ইস্যুতে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে থাকা বিরোধীদল বিএনপি’র মধ্যে বিরোধ-মতভিন্নতা থাকলেও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণের ঘটনায় দুই দলের অবস্থান একই। প্রধান বিচারপতির ওপর দায় চাপালেও ভোটের হিসাবে দুই দলই একে ইতিবাচকভাবে নিতে চায়। ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্যটি অপসারণে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী দল। পরে প্রধানমন্ত্রীও ভাস্কর্যটির বিরুদ্ধে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও দেশের জনগণের আকাঙ্খার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও আলোচনায় বসেন। অন্যদিকে সরকারের দু’জন মন্ত্রী ভাস্কর্য অপসারণের বিরুদ্ধে স্পষ্ট মত দেন। বাম রাজনৈতিক দলগুলোসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা হেফাজতের সঙ্গে আপস না করে ভাস্কর্যটি বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরই মধ্যে ইসলামী দলগুলোর দাবি মেনে রমজানের আগেই বৃহস্পতিবার রাতে ভাস্কর্যটি অপসারণের সিদ্ধান্ত জানায় সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ। রাতেই ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ভাস্কর্য অপসারণের এখতিয়ার আদালতের। এটি সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিম কোর্টের ওপর দায় চাপালে দলের আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ভোটের রাজনীতিতে এটি একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে। আর সে হিসেবেই জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এ সিদ্ধান্ত এসেছে। এটি সরকারের জন্য ইতিবাচক বলেও মনে করেন তারা। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মমনা। সেক্ষেত্রে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য নিয়ে তো একটি প্রশ্ন ছিলই। এখন আর সেই প্রশ্নটি নেই।’ এ বিষয়ে সরকারের ওপর ধর্মীয় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর চাপ প্রকাশ পেল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে একটি ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট ছিল। সেটিকে তো আমরা বাইপাস করতে পারি না।’ এদিকে ক্ষমতাসীনদের সুরেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। ইসলামী বলয়ের ভোট ব্যাংক ধরে রাখতেই বিএনপি এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী অবস্থানে যাচ্ছে না বলে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ অনেকটা ওবায়দুল কাদেরের মতো করেই বলেন, ‘ভাস্কর্য সরানো প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার, সরকারের না। প্রধান বিচারপতি অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেই ভাস্কর্য সরিয়েছেন।’ এদিকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে বিবেচনায় নিয়েই প্রধান বিচারপতি ভাস্কর্য অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে সরকারবিরোধী অবস্থানে যেতে পারতো বিএনপি। কিন্তু সেটি ভোটের হিসাবে কোনো প্রভাব ফেলত না। এ ক্ষেত্রে আমাদের যে ধরনের ভোটব্যাংক, ভাস্কর্য সরানোর বিষয়টি তার সাথে যায়।’ তবে শীর্ষ দুটি রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে অনেকটা একপক্ষীয় অবস্থান নিলেও বাম রাজনৈতিক দলগুলো এর বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। প্রতিবাদে শামিল হয়েছে প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।


     এই বিভাগের আরো খবর