,

নবীগঞ্জে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি : উপজেলা আ’লীগের সেক্রেটারী সাইফুল ও ইউপি চেয়ারম্যান সাজু’র বিরুদ্ধে থানায় জিডি

মুরাদ আহমদ ॥ নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী ও তার সহোদর ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজুর বিরুদ্ধে থানায় জিডি দায়ের করা হয়েছে। গত ৩১ এপ্রিল নবীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন নবীগঞ্জ থানায় এ জিডি দায়ের করেছেন। অভিযোগের বিবরনে জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল ২০১৭ইং তারিখ হতে ৩১ মে ২০১৭ইং পর্যন্ত ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু ও তার বড় ভাই নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরীসহ তাদের সহযোগীরা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার সেলিনা পারভীনকে প্রাণনাশের হুমকিসহ নানভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। তারা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসারের স্বাভাবিক দাপ্তরিক কাজকর্মেও বিঘœ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ কারনে নিরাপত্তার স্বার্থে নবীগঞ্জ থানায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার সেলিনা পারভীন তাদের বিরুদ্ধে জিডি দায়ের করেন। অভিযোগ ও বিভিন্ন সূত্রে আরো জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান ২০১৫-২০১৬ইং ভিজিডি চক্রের উপকারভোগী মহিলাদের সঞ্চয়ের ৭৫ হাজার টাকা ভিজিডির সহযোগী এনজিও সংস্থা স্প্যায়ার এর কো-অর্ডিনেটর এর সহযোগীতায় আত্মসাৎ করলে উপকারভোগী মহিলারা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসারের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার ইউপি চেয়ারম্যান সাজু চৌধুরীকে মহিলাদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দিয়ে দেয়ার জন্য বললে তিনি মহিলা বিষয়ক অফিসারকে ফোনে প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন। এব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপে ইউপি চেয়ারম্যান গত ১১ এপ্রিল মহিলাদেরকে তাদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়। সঞ্চয়ের টাকা ফেরত প্রদান তদারকি করাকালীন কিছু উপকারভোগী মহিলা বিষয়ক অফিসারকে জানান তারা ১৮ মাস ২৫ কেজি করে চাল পেয়েছেন কিন্তু জুলাই/১৬ হতে ডিসেম্বর/১৬ পর্যন্ত ৬ মাসের চাল পাননি। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার তাদেরকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বললে তারা এ বিষয়ে তাদের অভিযোগ দায়ের করেন। ইতিমধ্যে উক্ত ইউনিয়নের ৪ জন ইউ/পি সদস্য ২০১৭-২০১৮ইং ভিজিডি চক্রের ১৩৫ জন উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুতের অনিয়মের বিষয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত ভিজিডি সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগ তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৩ জন অফিসারের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। উক্ত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কার্য সম্পন্ন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্তে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ সত্য প্রমানিত হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উক্ত তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের নিকট প্রেরণ করেন এবং উক্ত ইউনিয়নের ২০১৭-২০১৮ইং ভিজিডি তালিকা বাতিল করে ১৪/০৫/২০১৬ইং এর মধ্যে পরিপত্রের বিধান মোতাবেক পুনরায় তালিকা প্রণয়নের জন্য ইউ/পি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইউনিয়ন ভিজিডি কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক মহিলা মেম্বার, পুরুষ মেম্বার, ইউ/পি সচিব ও এনজিও কর্মী ফরজুন আক্তার মনির সমন্বয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট ওয়ার্ড কমিটি প্রতিটি ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দুঃস্থ মহিলাদের নাম সংগ্রহ করে পরিপত্রের বিধান মোতাবেক ভিজিডির প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করেন। তারা উক্ত তালিকার একটি অনুলিপি ইউ/পি চেয়ারম্যানের নিকট ভিজিডির ইউনিয়ন কমিটির সভা আহ্বানের পাঁচদিন পূর্বেই দাখিল করেন যাতে ইউনিয়ন কমিটি এই তালিকা যাচাই বাছাই করে দেখতে পারে। কিন্তু ইউ/পি চেয়ারম্যান সাজু আহমেদ চৌধুরী ও তার কয়েকজন অনুগত সদস্য ওয়ার্ড পর্যায় হতে প্রস্তুতকৃত প্রাথমিক তালিকা বাদ দিয়ে তাদের পূর্বের বাতিলকৃত তালিকার নাম পুনরায় তালিকাভুক্ত করার জন্য ইউ/পি সচিব ও এনজিও কর্মীকে নানা প্রলোভন দিতে থাকে এবং ইউএনও কর্তৃক ধার্যকৃত সময়ের মধ্যে তালিকা দাখিল না করে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। অবশেষে ইউ/পি চেয়ারম্যান গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ইং ইউনিয়ন ভিজিডি কমিটির সভা আহ্বান করে। সভায় চেয়ারম্যান এবং তার কিছু অনুগত মেম্বার পরিপত্রের নীতিমালা বহির্ভূত তাদের পছন্দমত উপকারভোগীর নামের তালিকায় স্বাক্ষর করার জন্য সকলকে চাপ সৃষ্টি করলে ইউ/পি সচিব, এনজিও কর্মী ও ৭,৮,৯নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার তা অস্বীকার করে। এতে ইউ/পি চেয়ারম্যান, ৪ জন মেম্বার ও নবীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরীসহ কয়েকজন বহিরাগত তাদেরকে ভয়ভীতি দেখানোসহ চরম অসৌজন্যমূলক আচরন করতে থাকে। তারা সচিবের নিকট ওয়ার্ড কমিটির মাঠ পর্যায়ের তালিকা চাইলে সচিব তার পূর্বের দাখিল করা তালিকার অনুলিপি ফেরৎ দিতে বলে। কিন্তু চেয়ারম্যান, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার ও সাইফুল জাহান চৌধুরী উক্ত তালিকার অনুলিপি তাদের কাছে নেই বলে সচিবকে মূল তালিকা জমাদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকলে সচিব তাদের দুরভিসন্ধি বুঝতে পেরে তার কাছে কোন তালিকা নেই মূল তালিকা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নিকট আছে বলে তাদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। তারা চরম অশোভন আচরন করতে থাকলে সচিব, এনজিও কর্মী মিটিং ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়। সচিব, এনজিও কর্মী ও ৭,৮,৯নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ওয়ার্ড কমিটি হতে অব্যাহতির জন্য আবেদন করলে চতুর চেয়ারম্যান তার দুরভিসন্ধি বাস্তবায়ন ও অপকর্মের দায় হতে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে প্রথমে সচিবের বিরুদ্ধে এবং এতেও তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত না হওয়ায় কয়েকদিন পরে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্তে ভিজিডির সঞ্চয়ের ৭৫ হাজার টাকা, ১শত ১১ জন উপকারভোগীর ৬ মাসের প্রায় সাড়ে আট লক্ষ টাকার চাউল আত্মসাৎসহ ২০১৭-২০১৮ ভিজিডি চক্রের তালিকা প্রনয়নে অনিয়মের বিষয় তদন্তে সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হয়েছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসারের কারনে সে এসব অপকর্ম ধামাচাপা দিতে ব্যর্থ হয়ে এসবের দায় হতে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য নানা জায়গায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসহ স্থানীয় পত্রিকায় মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করে তার মানহানি করছে যাতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার তার এসব অপকর্মকে ধামাচাপা দিতে সহায়তা করে। তার পরিবেশিত সংবাদ, ইউএনও অফিসে দাখিলকৃত অভিযোগ এবং ইউনিয়ন ভিজিডি কমিটির দাখিলকৃত রেজুলেশন পড়লেই তার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ও মিথ্যাচারেরর বিষয়টি যে কোন ব্যক্তি খুব সহজেই বুঝতে পারবে। ইউনিয়ন পরিষদ হতে ২০১৫-২০১৬ ভিজিডি চক্রের শুরুতেই উপকারভোগীদের মাঝে কার্ড বিতরণ করা বাধ্যতামূলক হলেও উপকারভোগীদের কার্ড তাদের মাঝে বিতরণ না করে নিজেদের কাছে রেখে দেন। কিন্ত উপকারভোগীগণ ভিজিডি চক্র শেষ হয়ে যাওয়ার পর চাউল আত্মসাতের অভিযোগ দিলে চেয়ারম্যান চাল আত্মসাতের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নিজেরাই কার্ডে চাল পাওয়ার টিপসহি দিয়ে গ্রাম পুলিশ দিয়ে উপকারভোগীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কার্ড পৌঁছে দেন এবং কিছু উপকারভোগীকে ৫ শত করে টাকাও দেন তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য। কিন্তু এতেও কিছু উপকারভোগী ম্যানেজ্ড না হয়ে এ বিষয়টিও ইউএনও মহোদয়কে জানান। সেসব মহিলাদের জবানবন্দী ইউএনও মহোদয় মিটিং-এর মধ্যে ১০/১২ জন অফিসারের সামনেই রেকর্ড করেন। ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন বহুদিন পূর্বে একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে উপজেলা বিষয়ক কর্মকর্তা বিচার প্রার্থী হয়েছিলেন। তখন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। জিডির বিষয়টি আমার জানা নেই এবং আমি এবং আমার ভাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেইনি।


     এই বিভাগের আরো খবর