,

কালিয়ারভাঙ্গা ইউপির দুই মেম্বারের বিরুদ্ধে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ : তদন্তে সত্যতা পেয়ে প্রতিবেদন দাখিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ১২ লাখ টাকা স্থানীয় দুই মেম্বার কতৃক আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সরজমিন তদন্ত করেন উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা। তিনি সরজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। অভিযোগে জানা যায়, কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের শ্রীমতপুর গ্রামের ছামিরুজ্জামান চৌধুরীর বাড়ি থেকে কাটাখালি পর্যন্ত গুঙ্গিয়াজুরি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামতের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার আকবর আলী ও ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার সাদিকুল হককে বাঁধ মেরামতের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ওই দুই মেম্বার যথাসময়ে কাজ না করে টাকা আত্মসাত করে ফেলেন। ফলে সামান্য বন্যার পানিতে বাধ ভেঙে পানি হাওরে প্রবেশ করায় কাচা বোরো ফসল তলিয়ে যায়। কৃষকরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও ফসল রক্ষা করতে পারেননি। দুই মেম্বারের দুর্নীতির কারণে পানির নিচে তলিয়ে গেছে কৃষকদের স্বপ্নের ধান। ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষরা। এতে প্রায় ২০ হাজার একর বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগ দেন স্থানীয় কৃষকরা। এমনিক দুই ইউপি মেম্বারের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা গত ৭ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১১টায় স্থানীয় কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এক মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে কৃষকরা দুই ইউপি মেম্বারের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি জানান। এদিকে, অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার অভিযোগটি সরজমিন তদন্তের জন্য উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আব্দুন নূরকে দায়ীত্ব দেন। তদন্তাদেশ প্রাপ্তির পরের দিন, তারিখ ও সময় নির্ধারণ পূর্বক বাদীপক্ষগণসহ বিবাদীগণকে সরজমিনে তদন্তের বিষয়টি নোটিশ জারী করে গত মে মাসের ১৪ তারিখ সরজিমন তদন্তে যান তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুন নূর। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তিনি গত ৩১ মে তারিখে অভিযোগের সতত্যা পেয়েছেন মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুন নূর উল্লেখ করেছেন- ২নং ওয়ার্ড মেম্বার আকবর আলী গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের জোর বিলার ভাঙ্গাতে (আফরোজ মিয়া জমি) প্রথমেই মাটি ভরাট না করে জনগণের অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন। এই ভাঙ্গা স্থান দিয়ে নদীর পানি হাওরে প্রবেশ করে হাওরের প্রায় ২০ হাজার একর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। অপর দিকে ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার সাদিকুল হক কাচনের বাড়ির সামনে ভাঙ্গা বেড়ি বাধে আংশিক মাটি, ছামিরুজ্জামানের জমির পাশের্^ ভাঙ্গা বেড়িবাধে আংশিক কাটান ফলে উক্ত দুই ভাঙ্গা দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া মৌলার ভাঙ্গা লম্বায় ২০০ হাত এবং আব্দুল জাহিরের ভাঙ্গা লম্বায় ৭০ ফুট নামক ভাঙ্গা দুইটিতে কোন মাটি কাটা না হওয়ায় উল্লেখিত ভাঙ্গাগুলো দিয়ে নদীর পানি হাওরে প্রবেশ করেছে এবং হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব কাজে ২নং ওয়ার্ড মেম্বার আকবর আলীর ব্যয় হয়েছে নাম মাত্র প্রায় লক্ষাধিক টাকার এবং ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার সাদিকুল হক এর ব্যয় হয়েছে মাত্র প্রায় ৫০ হাজার টাকা। অভিযোগ প্রমাণের পর স্থানীয় কৃষকরা জানান, ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ পেয়ে দুই মেম্বার প্রোয় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার কাজ করিয়ে বাকি টাকা আত্মসাত করেছেন, আমরা আন্দোলন করেছি এবং প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। তারা দুই মেম্বারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী তুলেন। এ ব্যাপারে অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুন নূর জানান, “আমি নির্দেশ পেয়ে সরজিমন তদন্ত করেছি, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে সত্যতা পেয়েছি। এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে প্রেরণ করেছি।”


     এই বিভাগের আরো খবর