,

জাতীয় সংসদে বাজেটের উপর এমপি মুনিম বাবু’র বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হল

বিসমিল্লহির রাহমানির রাহিম,
মাননীয় স্পীকার, আপনাকে ধন্যবাদ, গত ১ জুন মহান সংসদে উপস্থাপিত ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরের বাজেটের উপর বক্তব্য দেয়ার সুযোগ প্রদানের জন্য আপনাকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। টানা ৯ বার এবং মোট ১১ বার এই সংসদে বাজেট উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ জানাই সিলেটের কৃতি সন্তান মাননীয় অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। মাননীয় স্পীকার, আমার বক্তব্যের শুরুতেই আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি সাবেক সফল রাষ্ট্রনায়ক পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং সময়ের সাহসী রাজনীতিবিদ জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে। আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই তিনবারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। তাছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জ-১ এর নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণকে। অভিনন্দন জানাচিছ, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধুর দৌহিদ্র টিউলিপ সিদ্দিকীসহ বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত তিন কন্যাকে। মাননীয় স্পীকার, ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরের বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে ৪ লক্ষ ২৬৬ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৪%। মাননীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় সাফল্যের এক বছরের অনেক ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। ব্যর্থতার জায়গাগুলো বরাবরের মতোই এড়িয়ে গেছেন। মাননীয় স্পীকার, বােেজটের সফলতা বলতে আমরা বুঝি বাজেটের বাস্তবায়ন, আর সাধারণ মানুষ বুঝে বাজেটে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লো না কমলো। জিনিসের দাম বাড়লে তারা মনে করে বাজেট ভালো না, আর দাম কমলে মনে করে বাজেট ভালো। মাননীয় স্পীকার, বাজেটের আকার প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হবে এবং এতে উচ্চাভিলাষ থাকবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ উচ্চাভিলাষ ছাড়া উন্নয়নের মহাসড়কে চলা সম্ভব নয়। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে আমরা কখনো এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারি না। আমরা যদি পিছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো ৯০% থেকে ৯৫% কাগজে-কলমে বাস্তবায়ন করে থাকি, বাস্তবে এটি অনেক কম। কারণ সব সময়ই আমরা দেখি বছরের প্রথম ৯/১০ মাসে ৫০% এর বেশি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি না। কিন্ত পরের ২/৩ মাসে বাস্তবায়নের গতি এতো বেড়ে যায় যে, এই সময়ের মধ্যে ৪০% থেকে ৪৫% বাস্তবায়ন হয়ে যায়। মূলত এই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের নামে চলে ব্যাপকভাবে লুটপাট। এটা আমরা সবাই জানি। এতো লুটপাটের পরেও চলতি বছরে বাজেট বাস্তবায়ন হবে ৯৩%। অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনের অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্বেও সরকার ২৩ হাজার ৪৩১ কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমি মনে করি, এবারও ব্যাপক হারে লুটপাট চলবে। এই বিশাল বাজেট সরকারের পক্ষে বাস্তবায়ন কোনভাবেই সম্ভব হবে না। মাননীয় স্পীকার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘দিন বদলের সনদ’ এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা। কিন্তু মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেটের যে দর্শন তাতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পাবে। ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে এবং গরিব মানুষগুলোর জীবন-ধারন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। মাননীয় স্পীকার, বাজেট নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন কোন আগ্রহ নেই। সাধারণ মানুষ মনে করে, বাজেট মানেই কর বৃদ্ধি, কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি। প্রস্তাাবিত বাজেটে যেসকল পণ্য বা সেবার উপর নুতন করে শুল্ক আরোপ বা শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে সেগুলো একেবারেই গরিব নিম্ন আয়ের মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বিভিন্ন প্রকারের মসলা, ফল, বিস্কুট, চকলেট, পটেটো চিপস, শিশু খাদ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, ফ্যান, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, দিয়াশলাই, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, সেভিং আইটেম, ইমিটেশন ইত্যাদি কোন বিলাসী সামগ্রী নয়। এগুলো একেবারেই সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে। অথচ মাননীয় অর্থমন্ত্রী এগুলোর উপর উচ্চ মাত্রায় শুল্ক আরোপ করলেন। ফলে গরিব মানুষগুলো ভোগান্তির মধ্যে পড়বে। আজকে ইমিটেশন কারা ব্যবহার করে মাননীয় স্পীকার? একেবারেই সহজ উত্তর যাদের সোনার গহনা কেনার সামর্থ নাই তারাই ইমিটেশন ব্যবহার করে। কিন্তু এটাও তাদের জন্য দুঃসাধ্য করে দিলেন। এমন অনেক কিছুর উপর ভ্যাট, ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে। মাননীয় স্পীকার, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। মাননীয় অর্থমন্ত্রী গত ২/৩ বছর ধরে শিশু বাজেটের কথা বলছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ববাদ্দও প্রস্তাব করছেন। অথচ শিশু খাদ্যের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে ৫০% প্রস্তাব করলেন। এতে গ্রামের গরিব মানুষ তাদের শিশুদের পুষ্টির চাহিদা মিটাতে পারবে না। ফলে এ সকল পুষ্টিহীন শিশুদের নিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে। মাননীয় স্পীকার, ১৯৯১ সাল থেকে অদ্যাবধি ভ্যাট নিয়ে অনেক ভাওতাবাজি আমরা দেখেছি। প্রস্তাবিত বাজেটে মাননীয় অর্থমন্ত্রী ভ্যাটের আওতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করেছেন। কিন্তু ভ্যাট যথাযথভাবে আদায় করতে পারছেন না। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর নাকের ডগা দিয়ে কোটি কোটি ভ্যাট ফাঁকি, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ব সব কয়টি ব্যাংক লুটপাট করে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, মাননীয় অর্থমন্ত্রী কিছুই করতে পারছেন না। মাননীয় স্পীকার, আবাসন খাত সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একটি মানুষও যেন গৃহহীন না থাকে। কিন্তু এই আবাসন খাতে চরম হাহাকার। আবাসন ব্যবসা অনেকেই বন্ধ করে দিয়েছেন। যারা টিকে আছেন অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে। কোন ফাট বিক্রি করতে পারছেন না। সরকার রাজউকের মাধ্যমে ফ্লাট ব্যবসা শুরু করেছে। রাজউকের ফ্লাট নিয়ে মানুষের এখন আর আগ্রহ নাই। বার বার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্রেতা পাচ্ছে না। এই অবস্থায় সকল প্রকার নির্মাণ সামগ্রীর উপর ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে এই খাতটিকে একটি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে। মাননীয় স্পীকার, এতো ভ্যাট, ট্যাক্স, শুল্ক আরোপের পরও প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি ১ লক্ষ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৫ শতাংশ। যেটি চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল ৯৮ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মোকাবেলায় বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। যেখানে চলতি অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে কিভাবে এত বড় অংকের বৈদেশিক অর্থায়ন সম্ভব তার কোন বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা বাজেটে নেই। আমি মনে করি, বৈদেশিক উৎস হতে বা দাতাদের নিকট হতে এই টার্গেট অর্জন কোনভাবেই সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে অন্যতম ব্যাংকিক খাত। কিন্তু ব্যাংকিক সেক্টরকে লুটপাট করে এমন বিপর্যস্ত করা হয়েছে যে, চলতি অর্থবছরে কাংক্ষিত ঋণ গ্রহণ করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ভরসা করতে হয়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির উপর। মাননীয় অর্থমন্ত্রী এবারও অনেক আশাবাদী সংঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ঘাটতি মোকাবেলা করবেন। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দেয়ায় সে লক্ষ্য অর্জনও সম্ভব নয়। ব্যাংকিক খাতে আবগারী শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সাধারণ লেনদেনকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। তারা নন ব্যাংকিক লেনদেন করবে। ব্যাংকিক খাতে অর্থের প্রবাহ বিপর্যস্ত হবে। সব মিলিয়ে আমি মনে করি এই বিশাল অংকের বাজেট বাস্তবায়ন সরকারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ এবং অনেকটাই অসম্ভব। মাননীয় স্পীকার, করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু ইতোমধ্যে আমাদের চবৎ ঈধঢ়রঃধষ ওহপড়সব ১৪৬৬ মার্কিন ডলার থেকে ১ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ১৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। সুতরাং করমুক্ত আয়ের সীমাও বৃদ্ধি করে ৩ লক্ষ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। মাননীয় স্পীকার, বিশ্ব জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। এই বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ হচ্ছে লিডিং কান্ট্রি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বিশ্ব জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু এই দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা কতটুকু প্রস্তুত? আমরা কি দেখতে পাচ্ছি, জলবায়ু উন্নয়ন ফান্ড ট্রাস্টের অধীনে দেশি বিদেশি যে অর্থায়ন হচ্ছে সেখানে ব্যাপক লুটপাট হচ্ছে। সাধারণ মানুষ তেমন কোন সুবিধা পাচ্ছে না। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সুনামগঞ্জ হাওরের আগাম বন্যা। শুধু সুনামগঞ্জ নয়, সিলেট, আমার নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জের নববীগঞ্জের ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়ন এবব নেত্রকোণার হাওরবাসীরাও মানবেতর জীবন যাপন করছে। কিন্তু সেখানে যদি সময় মতো এবং যথাযথভাবে কাজ করা হতো, প্রশাসন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতো, দুর্নীতি, লুটপাট না হতো, তাহলে হয়তো এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। মানুষকে এমন দুর্ভোগের শিকার হতে হতো। আমার নবীগঞ্জের হাওরবাসী আজ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। তাদের পুনর্বাসনের জন্য সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণের আহ্বান জানাচ্ছি। মাননীয় স্পীকার, টেকসই উন্নয়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিকল্প নাই। আর এর প্রধান উপকরণ হলো মানসম্মত শিক্ষা। শিক্ষার অবকাঠামোগত উন্নয়নের অনেক কথা মাননীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতা বলেছেন। কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য তেমন কিছু বলেননি। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার শেষে এই পার্লামেন্টের সদস্যগণ হতাশ হন যখন দেখেন মাননীয় মন্ত্রী এমপিওভুক্তি সম্পর্কে কিছুই বলেন না। এমপিওভুক্তির দাবি এখন সমগ্র বাংলাদেশের দাবি, সময়ের দাবি, গণমানুষের দাবি, মাননীয় সংসদ-সদস্যগণের দাবি। এ বিষয়ে আমার মনে হয় সরকারি দল এবং বিরোধীদল কারো কোন দ্বিমত নেই। তাই এমপিওভুক্তি কার্যক্রম দ্রুত চালু করার অনুরোধ করছি। মাননীয় স্পীকার, স্বাস্থ্যখাতে এ সরকারের অন্যতম সাফল্য হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। দরিদ্র গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে ১৩ হাজার ১২৬টি কমিউনিটি কিনিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মাননীয় স্পীকার, চিকিৎসা সেবা একটি অত্যন্ত নিবিড় কাজ। কিন্তু কমিউনিটি কিনিকে যারা এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করছেন তারা প্রতিনিয়ত চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য তারা এখন আন্দোলন করছে। সরকারের এই সাফল্য ধরে রাখার জন্য আমি অনুরোধ করবো তাদের চাকুরি ¯’ায়ী করেন, রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করেন এবং প্রত্যেকটি কিনিকে একজন ডিগ্রিধারী ডাক্তার পদায়ন করেন। মাননীয় স্পীকার, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে আমরা দেখতে পাচ্ছি কোন কারণ ছাড়াই অনেক পণ্যের দাম হুহু করে বেড়ে গেছে। সরকারের এ বিষয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। অনেক মাননীয় মন্ত্রী টিভির সামনে এসে বলছেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়নি। আজকে কোন কারণে এক কেজি চাউলের দাম ১০ টাকা বেড়ে যাবে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোন পণ্য বা সেবার মূল্য নির্ধারণ একান্তই ব্যবসায়ীদের ব্যাপার। তাহলে কি জনসাধরণের এই দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের কোন ভূমিকা নাই? আমি মনে করি, এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্ব এড়ানোর কোন সুযোগ নেই, মাননীয় স্পীকার। এক্ষেত্রে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে, এই ব্যর্থতার দায় সরকারকে অবশ্যই নিতে হবে। মাননীয় স্পীকার, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধীদলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার দল জাতীয় পার্টি অত্যন্ত সঠিক এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখি সরকার আন্তরিক না। মাননীয় স্পীকার, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রকৃত ইতিহাস শুরু হয়েছিল মূলত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমার নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে। বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রাম থেকে শুরু করে উপজেলা শহর, জেলা শহর, রাজধানী ঢাকাসহ সর্বত্র উন্নয়মের সুষম কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন। এমন এক সময় ছিল এই সংসদের ভবনের আশেপাশেও নৌকায় চলতে হয়েছে। সেই অবস্থা থেকে বেরিবাধ নির্মাণ করে ঢাকাকে রক্ষা করেছিলেন সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আজকের ঢাকা শুধু বসবাসের অনুপযোগী নয়, বিষাক্ত। আজকে মানুষের স্রোত ঢাকা কেন্দ্রিক। প্রাদেশিক সরকার ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণ আজ সময়ের দাবি। আমার নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের কথা বলে আসছেন। অনতিবিলম্বে বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকারের মাধ্যমে ১৭ কোটি মানুষের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মাননীয় স্পীকার, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা আমরা সবাই জানি। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচন বয়কট করলেও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। আমরা যারা বিরোধীদলের সংসদ-সদস্য, জীবনের অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচন করেছি। সরকারকে দেশ পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছি। অথচ বিরোধীদলের সদস্য হওয়ার কারণে আমাদের নির্বাচনী এলাকা সুষম উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হ”েছ। সকল ক্ষেত্রে আমাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। উন্নয়নের সুষম ধারায় আমাদের যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। অনেক কিছুই আমাদের বাদ দিয়ে করা হয়। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারের এই মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে উন্নয়নের সুষম বন্টন করতে হবে। মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকা হাওর, বিল, পাহাড় এবং সমতল ভূমির এক নৈসর্গিক লীলাভূমি। কিন্তু উন্নয়ন এখানে মারাত্মক অবহেলিত। তাই আমার নির্বাচনী এলাকার দু’একটি বিষয় আপনার মাধ্যমে এই সংসদে উত্থাপন করতে চাই। ১। আমার নির্বাচনী এলাকায় বিবিয়ানা গ্যাস অবস্থিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আমার নির্বাচনী এলাকায় বিবিয়ানা গ্যাস কুপে গিয়েছিলেন, সেখানে জনগণের পক্ষ থেকে আমার দাবির প্রেক্ষিতে বলেছিলেন যে এলাকায় গ্যাস পাওয়া যায় সেই এলাকার জন্য কিছু গ্যাস সংরক্ষিত থাকে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে পার্লামেন্টে আমি দাবি জানিয়েছি। মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি। ৪। আমার নির্বাচনী এলাকার কৃতি সন্তান দেওয়ান ফরিদ গাজী আওয়ামীলীগের মন্ত্রী ছিলেন, তিনবার এমপি ছিলেন, জনাব কিবরিয়া সাহেব অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তারা কিছু রাস্তাঘাটের উন্নয়নের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারেননি। আউশকান্দি হতে হবিগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তাটি প্রশস্ত করে জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন। ৫। মাননীয় স্পীকার, আমার নবীগঞ্জ থানায় একটি পিকআপ ভ্যান দরকার। আমি অনেক বার এই সংসদে বলে আসছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক মানের ফাইভ স্টার হোটেল আমার নির্বাচনী এলাকায় অব¯ি’ত। প্রতিদিন এখানে ভিআইপিরা যাতায়াত করেন। মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এখানে নাই। তিনি আমাকে বলেছিলেন একটি গাড়ি দিয়ে দিবেন। কিন্তু এখনো সেটি পাওয়া যায় নাই। আমি অনুরোধ করছি জরুরী ভিত্তিতে একটি গাড়ি দেয়ার জন্য। তাছাড়া থানায় পুলিশের জন্য কোয়ার্টার নির্মাণের আমি বারবার বলে আসছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। পুলিশ সদস্যরা অমানবিক জীবন-যাপন করছে। আমার বাহুবল উপজেলায় একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মান করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ৬। মাননীয় স্পীকার, শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। অথচ আমার নবীগঞ্জ উপজেলার হৈবতপুর, পূর্ব কসবা, বাহুবল উপজেলার রূপাইচড়া গ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নাই। এই গ্রামগুলিতে জরুরী ভিত্তিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জোর দাবি জানাচ্ছি। ৭। মাননীয় স্পীকার, আমার নবীগঞ্জ উপজেলার ১০ নং ইউনিয়নের ইনাতগঞ্জ ও ইসলামপুর গোপলার নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। তাছাড়া আরো কয়েকটি ছোট ছোট কয়েকটি ব্রীজ নির্মাণ করা অতীব প্রয়োজন। সর্বশেষ এই পার্লামেন্টের সকল সদস্য এবং আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
আল্লাহ হাফেজ।


     এই বিভাগের আরো খবর