,

দুর্নীতির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত : অনিয়ম দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বাহুবলের দীননাথ মডেল হাইস্কুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাহুবল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীননাথ মডেল হাইস্কুলের উজ্জল ভাবমূর্তি হারিয়ে এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের রন্ধে রন্ধে আজ দুর্নীতি বিদ্যমান। স্কুলে প্রাইভেট বাণিজ্য, লাখ লাখ টাকার গাছ কর্তন করে হজম করা, স্কুলের বিল্ডিং নির্মাণে ঠিকাদারের ব্যবহৃত লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল স্কুল ফান্ড থেকে প্রদান, ঠিকাদারের ব্যবহৃত ব্যাপক মালামাল রাখার জন্য স্কুলের কয়েকটি কক্ষ বিনা ভাড়ায় ব্যবহার, স্কুলের পুকুরের গাইড ওয়াল নির্মাণে দুর্নীতি, প্রধান শিক্ষক নিয়োগে টাকা লেনদেনের বিষয়, স্কুল মার্কেটের দোকান ঘর উপ-ভাড়া প্রদানসহ নানান অনিয়ম দুর্নিতিতে প্রতিষ্টানটির এতিহ্য হারাতে বসেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, স্কুলের পুরাতন মূল্যবান কয়েকটি কড়ই গাছ কেটে বিক্রির লক্ষাধিক টাকার কোন হিসাব ফান্ডে আজও জমা হয়নি। স্কুলের ৩ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং নির্মাণের ঠিকাদার হচ্ছেন স্কুলের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রেজ্জাকের ঘনিষ্ট আত্মীয়। এ সুবাদে আব্দুর রেজ্জাক ও তার পুত্র নজরুল ইসলামই মূলতঃ নির্মাণের শতভাগ ঠিকাদারী কাজ সম্পন্ন করেছেন। ওই নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল স্কুল ফান্ড থেকে পরিশোধ দেখানো হয়েছে যা সংশিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই বহন করার কথা। কিন্তু তা না করে স্কুল ফান্ড থেকে পরিশোধ দেখানো হয়। এতে লক্ষাধিক টাকা অবৈধ পন্থায় ভোগ করা হয়েছে। স্কুলের কয়েকটি কক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে বছর খানেক যাবৎ ঠিকাদারী কাজে। যা স্কুলকে ভাড়া দেয়ার কথা। কিন্তু তা ভাড়া দেখানো হয়নি। এক্ষেত্রেও মোটা অংকের টাকা নির্মাণ খাত থেকে আদায় করে আত্মসাত করা হয়েছে বলে কমিটি সূত্রে জানা গেছে। পুকুরের গাইড ওয়াল নির্মাণেও মোটা অংকের টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। স্কুলের বিশাল মার্কেটের প্রতিটি দোকান ঘরই উপ-ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছে। এর মাঝে বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুর রেজ্জাকের নামেই রয়েছে কয়েকটি পজিশন। যা উপ-ভাড়া দিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে নামমাত্র স্কুল ফান্ডে ভাড়া জমা দিয়ে রাজস্ব আয় থেকে স্কুলকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কমিটির সদস্য ইতিপূর্বে প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি সভাপতির আন্তরিকতার অভাবে। কারণ যেহেতু সভাপতি নিজেই এর সাথে জড়িত। এদিকে গতকাল বুধবার ছিল প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। এ ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য উঠার পর ওইদিনই প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে তা স্থগিত করা হয়। এক্ষেত্রে নিয়োগ বাণিজ্যের সংবাদ বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় প্রচার হলে তোলপাড় শুরু হয় সারা বাহুবলে। স্কুলের এসব লাগামহীন দুর্নীতি চলে আসছে বিগত ৬ বছর যাবৎ সাবেক প্রধান শিক্ষক ইসহাক মিয়ার আমল থেকেই। আর এসব দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন কমিটির সভাপতি আলহাজ্জ আব্দুর রেজ্জাক ও সদস্য অলিউর রহমান অলি। তাদের দাপটে অন্যান্য সদস্যগণও নিরুপায় অবস্থায় থাকেন বলে কয়েক সদস্য স্বীকার করেন। কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাতকাপন ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আব্দাল মিয়া তালুকদার ও আব্দাল মিয়া আখঞ্জির সাথে আলাপ করলে তারা এসব অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন স্কুলকে রক্ষা করতে হলে এখন একমাত্র পথ এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। কারণ স্কুলে রয়েছে বড় ধরণের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তদন্তের মাধ্যমে তা জনসম্মুখে প্রকাশের মাধ্যমে স্কুলকে পবিত্র অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ম্যানেজিং কমিটিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করার নির্দেশ প্রদান করলে তারা তা স্থগিত করেছে।


     এই বিভাগের আরো খবর