,

খোয়াই নদীর ৩টি স্থানে ভাঙ্গন : অল্পের জন্য ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেল হবিগঞ্জবাসী :ভারতের চাকমাঘাট ব্যারেজ খুলে দেয়া ও অতি বৃষ্টিপাতই মূল কারণ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ অল্পের জন্য ভয়াবহ দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছেন হবিগঞ্জ জেলাবাসী। খোয়াই নদীর পানি স্বরণকালের বিপদসীমার সর্বোচ্চ রেকর্ড অতিক্রম করায় কেটেছে নির্ঘুম ও শ্বাসরোদ্ধকর একটি রাত। ২৪ ঘন্টা পর অবশেষে হবিগঞ্জ শহরসহ জেলাবাসীর মধ্যে ফিরে এসেছে স্বস্থি। জানা যায়, গত সোমবার সকাল থেকে অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে খোয়াই নদীর পানি। বিকেলে বিপদসীমা অতিক্রম করায় হবিগঞ্জ শহরসহ জেলাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। সন্ধ্যার দিকে হবিগঞ্জ শহরের আতঙ্কিত মানুষ বেড়িয়ে পড়েন রাস্তায়। এক পর্যায়ে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেন খোয়াই প্রতিরক্ষা বাঁধে। রাত ১০টার দিকে হবিগঞ্জ শহর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের বাঁধে উপচে পড়ে পানি। তখন বালি, মাটি ও পাথরের বস্তা দিয়ে স্বেচ্ছায় স্বতস্ফুর্তভাবে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। পাউবো’র তথ্যানুযায়ী ওই দিন মধ্যরাত পর্যন্ত বিপদসীমার ২৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে খোয়াই নদীর পানি। এ অবস্থায় হবিগঞ্জ শহর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রাত জেগে বাঁধ পাহাড়া দেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। বাসা ও বাড়িঘরে নির্ঘুম রাত কাটে মহিলা ও শিশুদের। তৈরি হয় এক শ্বাসরোদ্ধকর পরিস্থিতি। রাতব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও চলে প্রচার-প্রচারণা। যে যার মত করে দেন বিভিন্ন তথ্য। অনেকে ফেইসবুক লাইভ করেও দেন সর্বশেষ তথ্য। নড়ে-চড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসনও। অনাকাঙ্খিত বন্যার আশঙ্কায় প্রস্তুত রাখা হয় ৯টি আশ্রয় কেন্দ্র, পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালেও পানির প্রবাহ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে স্বরণকালের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে বিপদসীমার ২৮০ সেন্টিমিটারে দাঁড়ায় খোয়াই নদীর পানি। তখন আতঙ্ক বেড়ে যায় আরও বহুগুণ। কিন্তু পড়ন্ত বিকেলের দিকে সকল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দূর করে অবশেষে কমতে শুরু করে পানি। টানা ২৪ ঘন্টা পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিরে আসে স্বস্থি। এ রিপোর্ট লিখার সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত পাউবো’র তথ্যানুযায়ী বিপদসীমার ২৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল পানি। বলা যায়, অল্পের জন্যই ভয়াবহ দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছেন জেলাবাসী। অনেকে মনে করেন, দীর্ঘ সময় পানির প্রবাহ অপরিবর্তিত থাকলে ঝুকিপূর্ণ এলাকার বাঁধ নরম হয়ে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হতে পারত। এতে ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতিসহ ভয়ানক দুর্ভোগের আশঙ্কা বিদ্যমান ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতের চাকমাঘাট ব্যারেজ খুলে দেয়া ও অতি বৃষ্টিপাতের কারণে আকষ্মিক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে খোয়াই নদীর পানি। এতে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধে কোথাও ভাঙ্গন দেখা না দিলেও ভাটি এলাকার ডুবন্ত বাঁধে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। বানিয়াচং উপজেলার চানপুর, শাহপুর ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলার গজারিয়া কান্দি এলাকার ডুবন্ত বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তবে এতে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতির তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার খোয়াই নদীর ঝুকিপূর্ণ এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শন করেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব এডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি। পরিদর্শনকালে তিনি আতঙ্কিত লোকজনের সাথে কথা বলে সাহস যোগান এবং অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সম্ভব সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, পৌর মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ ও পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলামসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। তাই এরকম অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ড্রেজিং করে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই’। তিনি বলেন, ‘সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাদের পরিকল্পনা আছে। খোয়াই নদীও ড্রেজিং হবে’।


     এই বিভাগের আরো খবর