,

222

বাংলাদেশের বহুমাত্রিক রাজনীতিতে উদোর পিন্ডি বুধোরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজের অসৎ স্বার্থ সিদ্ধিলাভ করার বক্র পথ স্বাধীনতার প্রায় চার যুগ পরেও বাদ দেওয়া গেলনা। যেমন বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি যিনি ১১টি সেক্টরের মাত্র একটিতে কমান্ডার ছিলেন এবং সেনাবাহিনীতে তার স্থান ছিল তিন চার নম্বরে। তাহাকে একটি বেতার ঘোষনায় স্বাধীনতা ঘোষক কিংবা প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নেয়া কতটুকু ন্যায্য দাবী তাহা কেহই বিবেচনা করেন না। বরং শাক দিয়ে মাছ ঢাকাই প্রধান বিষয় হয়ে গেছে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান সম্মন্ধে বিপক্ষে লিখলে কিছু অন্ধ সমর্থক মনে করেন আমি জিয়াউর রহমান বিদ্ধেষী, আর আওয়ামীলীগ এর পক্ষে লিখলেই আমি আওয়ামীলীগের বা ভারতীয় সমর্থক। আমি যে কি আর কি বলতে চাই তা স্পষ্ট করে বলার সুযোগ নেই। থাকি লন্ডনে, সেখানে স্বাধীন মতামত গ্রহণ যোগ্য হলেও বাংলাদেশে সম্ভপর নয়। তবুও লিখতে হয় বলে গা বাঁচিয়ে রাখতে চাই। আওয়ামীলীগ যদি বিশ্বাস ঘাতক ও অপরিনামদর্শী গা ঢাকা দেওয়া কুলাংগারদের ষড়যন্ত্র বুঝে শক্র-মিত্র ছিনে রাজনীতি করতো তা হলে ৭৫এর মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতনা এবং জিয়াউর রহমানের উত্থান হতো না। বঙ্গবন্ধু ও জেনারেল ওসমানীর পিছন পিছন স্যুলুট দিয়েই জিয়াউর রহমান চলতে হতো। এর জন্য বঙ্গবন্ধুর দলই দায়ী। বঙ্গবন্ধু কেন প্রকাশ্যেই ২৩ বা ২৪শে মার্চ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষনা করলেন না তা আজও জানা হলো না। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে নেতারা কে কি দায়ীত্ব পালন করবেন তা কিছুই বলে গেলেন না। বিপ্লবী সরকার গঠন করলে কে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন তার দায় দায়ীত্ব বলে গেলেন না। সেনাবাহিনীর লোক নেতৃত্বে থাকলেও পুরো মুক্তিবাহিনী কিভাবে পরিচালনা করবে তা ঠিক ঠিকানা নেই কেন? যুদ্ধ পরিচালনায় আওয়ামীলীগ, ন্যাপ ও কমিউনিষ্ট পার্টিকে নিয়ে সর্বদলীয় অস্থায়ী সরকার কেন গঠন করতে বলে গেলেন না কেন? আরো অনেক গুলি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। ১৯৭১ সালের ৪ঠা এপ্রিল হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়ায় চা বাগান ম্যানেজার বাংলোয় কর্ণেল রব, কর্ণেল ওসমানী, মেজর জিয়া, ক্যাপ্টেন ভুঁইয়া, মেজর শফিউল্যা, খালেদ মোশারফসহ সামরিক নেতৃবৃন্দ যখন সম্মলিতভাবে কর্ণেল ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান হিসেবে ঘোষনা করেন। মেজর জিয়া যদিও চৌকশ সেনা অফিসার ছিলেন না তবুও ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে বীরেত্বের যুদ্ধ করেছিলেন। অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতার অধিকারী শফিউল্লাকে প্রাধান্য দিয়ে ১৯৭২ সালে যুদ্ধ শেষে সেনাবাহিনীর প্রধান করা হলো। শফিউল্লা জিয়াউর রহমানের জুনিয়র ছিলেন। এ বিষয়ে ঘাটাঘাটি করে জানা যায়, খোদ বঙ্গবন্ধুই শফিউল্লাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন কিন্তু জাতির বিপদে শফিউল্বাহ এগিয়ে আসেননি। যারা এগিয়ে এসেছিলেন এদের নাম সকলেই জানেন। বঙ্গবন্ধু কেন যে রক্ষীবাহিনী গঠন করেছিলেন যা বিপদের সময় কাজে লাগেনি। জেনারেল জিয়া সুযোগের সদ্বব্যবহার করেছেন। ডেড হর্স হিসেবে অন্ধকারের ভাই খন্দকার মোসতাকই ষড়যন্ত্র করেছেন, আর কর্ণেল রশিদের বুদ্ধিতে সর্বনাশ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শক্তিশালী অংশ যাহারা জাসদে যোগ দিয়েছিল এদেরকে নিমূল করার জন্য আওয়ামীলীগের একটি মতলবী অংশ কুবুদ্ধি দিয়েছিল। আজও আমরা জানিনা, বঙ্গবন্ধুর মতো জ্ঞানীলোক যেখানে ১৯৭৩ সালে চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদোর আলেন্দে বলেছিলেন আপনাকে ও আমাকে সিআই আস্ত রাখিবেনা সেই মহুর্তে কেন সর্তক হলেননা। পরে ঠিকই ১৯৭৪ সালে সালভাদোর আলেন্দে এবং ১৯৭৫ সালে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। সুপ্রিয় পাঠক, আমি বঙ্গবন্ধু বা জেনারেল জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করছিনা। কতগুলি আমার ক্ষুদ্র ভাবনা গুলি তুলে ধরতে চাই মাত্র। সত্য কথা যদি বলতে হয় তাহলে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠটি আগোছলো হলেও অপ্রসংগিত ছিলনা। এটা অস্বীকার উপায় নেই বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ এর ভাষন মানুষ মরার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল আর একজন সেনা অফিসার হিসেবে নিজেকে বিপ্লবী সরকারের প্রধান বা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ মানুষকে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধ করার অমিত সাহস যুগিয়েছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়া। আমার এক প্রবীন বন্ধু বলতেন, ডাইনে গেলে বায়ে ধমকায় আর বায়ে গেলে ডাইনে ধমকায়, মধ্য দিয়ে হাটলে পুলিশে পিঠায়। আমার অবস্থা হয়েছে এরকমই। জেনারেল জিয়ার মোটা বুদ্ধি ও খালেদা জিয়ার পরের বুদ্ধিতে চলায় স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি হিসেবে কার্যকলাপে প্রমান দেওয়ায় যুগ যুগ ধরেও এরা ইতিহাসে সম্মানজনক স্থান লাভ করবেন না। যেমন জাতির স্বার্থে বেইমানী না করায় যথেষ্ট ভুল ভ্রাস্তি হলেও শেরে বাংলা, হোসেন সরওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী এরা বাঙ্গালীর জাতির প্রিয় নেতা হিসেবেই ইতিহাসে স্থান পেয়েছেন। আর ইতিহাসের অন্ধকার পাপী খন্দকার মোশতাক, কর্ণেল রশীদ খুনীরা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে স্থান নিয়েছে। আমি এই পর্যায়ে নিরপরাধ মুক্তিযোদ্ধাদের জিয়া হত্যাকান্ডে জড়িত দেখিয়ে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলানো জেনারেল মনডুর যিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে চৌকশ অফিসার ও পাকিস্তান আমলে লাহোরের কাকুলে প্রথম হয়েছিলেন তার মর্মান্তিক পরিনতি ও বঙ্গ শার্দুল বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশারফ ও কর্ণেল তাহেরের বিয়োগান্তের ঘটনা সম্মন্ধে আলোচনা করার আশা রাখি। ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগষ্টের নারকীয় হত্যাকান্ডের পর জেনারেল জিয়া ও ব্রিগ্রেডিয়ার মনজুর ও ব্রিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশরফই ছিলেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। খাদেল মোশারফের নেতৃত্বে ৩রা নভেম্বর বঙ্গবভন দখল করে জেনারেল জিয়াকে গৃহ বন্দী করে খন্দকার মোশতাককে সরিয়ে অন্য কাহাকেও প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর জন্য চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে শাফায়াত জামিল যিনি ছিলেন খালেদ মোশারফের প্রধান সহযোগী ও অত্যান্ত রাগী অফিসার তিনি পিস্তল উচিয়ে খন্দকার মোশতাককে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে বঙ্গবভন থেকে বেরিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। তখন ঘটনাক্রমে জেনারেল ওসমানী বঙ্গবভনে উপস্থিত ছিলেন এবং ওসমানী শাফায়াত জামিলকে শান্ত হতে বলেন, এবং আরো বলেন চলবে…
বি: দ্র: লেখাটি বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রকাশিত


     এই বিভাগের আরো খবর