,

হবিগঞ্জে মেয়রের সাক্ষর জাল করে নম্বর প্লেট ব্যবহার ॥ টমটম আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অসহনীয় যানজটে হবিগঞ্জ শহরবাসির নাভিশ্বাস উঠেছে। ক্রমবর্ধমান হারে ব্যাটারিচালিত টমটম ও অটোরিকশা বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অপরিকল্পিভাবে চলাচলের কারণে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী
হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বাইরে নিজেদের খেয়াল খুশিমত চলাচল করায় একদিকে শহরের সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ঘটছে ছোট খাটো দুর্ঘটনা। প্রথম শ্রেণির পৌর শহর হবিগঞ্জে আগের তুলনায় সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি হলেও অদক্ষ টমটম চালকদের কারণে তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশিষ্ঠজনরা। হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে অবৈধভাবে ৫ গুণ টমটম চলছে হবিগঞ্জ শহরে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকা থেকে সদর থানার এএসআই মৃদুল রায় অভিযান চালিয়ে একটি অবৈধ টমটম আটক করেন। যার নম্বর ২৯৮। পুলিশ জানিয়েছে, এ নম্বরের কোন টমটম হবিগঞ্জ পৌরসভা অনুমোদন দেয়নি। একটি মহল পৌর মেয়রের সাক্ষর জাল করে প্লেট বানিয়ে টমটম চালাচ্ছে। পুলিশের ধারণা ভূয়া নম্বর লাগিয়ে হবিগঞ্জ শহরে ৩ শতাধিক টমটম চলাচল করছে। হবিগঞ্জ পৌরসভার পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে যে কেউ চাইলেই টমটম কিনে সড়কে নামিয়ে দিচ্ছে। ফলে পথে পথে চলছে বিশৃংখলা, ঘটছে দুর্ঘটনা। গত এক সপ্তাহ আগে একটি মহল হবিগঞ্জ শহরে নিজেদের একক সিদ্ধান্তে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। ফলে পৌরসভার অনুমোদন ছাড়াও এখন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে হবিগঞ্জ শহরে টমটম প্রবেশ করছে। ফলে বেড়ে গেছে অবৈধ টমটমের সংখ্যা। এদিকে টমটমের ভাড়া বৃদ্ধি করায় রিকশা চালকরা পড়েছে বিপাকে। একাধিক রিকশা চালক জানিয়েছে আগে যেখানে প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ টাকা আয় হতো টমটমের কারণে সেখানে এখন ২০০-২৫০ টাকা আয় করতেও তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। রিকশা চালকদের অভিযোগ, দুই জন যাত্রী নিয়ে শহরের শায়েস্তানগর বাজার থেকে চৌধুরী বাজার পয়েন্ট পর্যন্ত ৩০ টাকার বেশি কেউ দিতে চায় না। অথচ একজন টমটম চালক (নতুন ভাড়া অনুসারে ৮ যাত্রী নিয়ে এক টিপেই ৮০ থেকে ১শ টাকা) আয় করছে। তাদের মতো, একটি টমটমে ৪ জনের বেশি যাত্রী তোলার নিয়ম না থাকলেও চালকরা সেখানে ৬ থেকে ৮ জন তোলছে। শহরের থানার মোড়, শায়েস্তানগর বাজার, তিনকোনা পুকুর পাড়, কালীবাড়ী, বাণিজ্যিক এলাকা, পৌর মার্কেট, স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অসংখ্য টমটমের বেপরোয়াভাবে চলাচলের কারণে দুর্ভোগে পড়ছেন মানুষ। সরেজমিনে দেখা গেছে, এ সব টমটম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালাচ্ছে রিকশা ও ভ্যান চালকরা। ফলে টমটমের দ্বারা সৃষ্ট যানজটের কারণে ১০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগছে আধঘন্টা। ভুক্তভোগী জনসাধারণ জানান, টমটমের কারণে দিনের বেশিরভাড় সময় শহরের বাণিজ্যিক এলাকা থেকে চৌধুরী বাজারে পৌছতে সময় লাগছে আধঘন্টা। সরকার কর্তৃক টমটম চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও হবিগঞ্জ শহরে পৌরসভার অনুমোদন নিয়ে চলছে এগুলো। ফলে বালক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সী মানুষই ঝুঁকে পড়েছে এর দিকে। সচেতন মহল জানিয়েছেন, পৌরসভার পাশাপাশি প্রশাসনকে অবৈধ অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে হবে।’ যানজটমুক্ত করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। অথচ আজ পর্যন্ত সঠিক কোন পরিকল্পনাই নিতেই পারেনি হবিগঞ্জ পৌরসভা। পৌরসভা পার্কিংয়ের নামে অনুমোদন দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। মোটরযান আইন অনুযায়ী অবৈধ যান্ত্রিক যানবাহন আটক করতে পারে পুলিশ। সূত্র বলছে অটোরিকশা যান্ত্রিক বাহন নয়, এগুলো ধরতে ম্যাজিস্ট্রেট লাগে। অথচ এসব যানবাহন বন্ধে হবিগঞ্জে ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ব্যবস্থা গ্রহণ চোখে পড়ছে না। আনিসুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী জানান, পৌরসভার দায়িত্বহীনতা  সঠিক পরিকল্পনার কারণেই এ অব¯’ার সৃষ্টি হয়েছে। অন্য সব সংস্থার সাথে সমন্বয় করে যানজট নিরসনে তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি মোঃ ইয়াছিনুল হক জানান, হবিগঞ্জ পৌরসভার নিকট টমটমের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা হাতে আসার পর অবৈধ টমটম ধরতে অভিযান চালানো হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর