,

নবীগঞ্জে আখের রস বিক্রি করে লেখাপড়া ও পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করছে কলেজ শিক্ষার্থী পিন্টু

আলী হাছান লিটন/এস এম আমির হামজা ॥ জীবনযুদ্ধে হারনামানা একজন কিশোর নবীগঞ্জ পৌর
এলাকার জয়নগর গ্রামের দেবেশ দাশের পুত্র পিন্টু দাশ (১৭)। চরম অভাবের যন্ত্রনা-ক্ষুধা দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে জীবন সংগ্রামে ধিরে ধিরে এগিয়ে চলেছে । জন্মের পর থেকেই জীবন যন্ত্রনাকে সঙ্গি করে খেয়ে না খেয়ে বেড়ে উঠেছে সদা-হাস্যজ্জ্বল সবার প্রিয় পিন্টু। তার বাবা দেবেশ দাশ বিগত ১৫ বছর ধরে নবীগঞ্জ শহরে টেলা গাড়ী চালিয়ে পরিবারের জীবীকা নির্বাহ করে আসছিল। জীবন সংগ্রামে এগিয়ে চলা কিশোর পিন্টু নবীগঞ্জ শহরে আখের রস বিক্রি করে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে শত দরিদ্রতার মাঝেও চালিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া ও সংসারের ব্যয় ভার। নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী পিন্টু দরিদ্রতাকে জয় করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষীত হয়ে সমাজে মাতা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। নবীগঞ্জ সরকারি জে কে মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালিন সময়ে দশম শ্রেণিতে উঠার পরই পিন্টু অত্র বিদ্যালয় থেকে মেধা পুরষ্কার পায়। আখের রস বিক্রি করে পরিবারের জীবীকা ও লেখাপড়া করে নবীগঞ্জবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পিন্টু। তার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দেখা যায় টিনের ঘরের এক কোনে বসে মা ও বোন কাজ করছেন। তার বাবা বাজারে থাকায় পাওয়া যায়নি। পিন্টুর খোঁজ নিতে আসার খবরে কেঁদে ফেললেন তিনি। বললেন পিন্টুর বাবা টেলা চালান সে বাজারে আখের রস বিক্রি করে তার লেখাপড়া ও আমাদের পরিবারের ভরন-পুষন করছে। মরার আগে যেন দেখে যেতে পারি পিন্টু একজন উচ্চ অফিসার হয়ে দেশ ও সমাজের উপকার করছে। আমি সব সময় এই কামনা করি। পরে কাঁপতে কাঁপতে মাটিতেই বসে পড়লেন এই মা। পিন্টুর সাথে আলাপকালে সে চোখে টলমল পানি নিয়ে কুশল বিনিময় করে জানায় আমার মা-বাবা একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারেনা। সেই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে আমি লেখাপড়া করছি। আমার বাবা টেলা চালিয়ে আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। আমি কিছুটা বড় হওয়ার পর যখন দেখেছি বাবা টেলা চালান। তখন আমি বাবাকে সহযোগীতা করতে শহরে আখের রস বিক্রি করছি। আমার বাবা মায়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ইশ্বরের কৃপায় তারা আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। এ সময় কাঁদতে কাঁদতে পিন্টু ক্রেতাদের কাছে আখের রসের গ্লাস তুলে দেয়। সে বলে প্রায়ই পত্রিকার খবরে পড়ি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়ান। তাদের লেখাপড়ার খরচের ভার বহন করেন। যদি আমার লেখাপড়ার দায়ীত্ব তিনি গ্রহণ করেন। তাহলে বাবা মায়ের মৃত্যুর পূর্বে দেখে যেতে পারবেন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমার আর কোন স্বপ্ন নেই বলেই ঢুকরে কেঁদে উঠলো কিশোর পিন্টু। নবীগঞ্জ শহরের পরিচিত মুখ পিন্টু বাবাকে আর টেলা চালাতে দিতে চায়না। সরকার প্রধান ও সমাজের কাছে তার ছোট্ট একটি চাওয়া। সকলের সার্বিক সহযোগীতায় লেখাপড়া করতে চায়। তাহলেই পরম তৃপ্তিতে মা-বাবার কোলে মাথা রেখে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবে পিন্টু।


     এই বিভাগের আরো খবর