,

মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ফোকন ও জাহিদ আটক

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন ॥ ৭১’সালে খুন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নির্যাতন ও অপহরনের মতো নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলাধীন মুড়িয়ক গ্রামের বাসিন্দা ও তৎকালীন পাকিস্তানী নিজামী ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মৌলানা শফি উদ্দিনের ঘনিষ্ট দুই সহচর রাজাকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট মামলার চৌকস তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি নূর হোসেন ও স্থানীয় পুলিশ এ প্রতিনিধিকে জানান, বুধবার আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের আদালত কর্তৃক তৎকালীন পাকিস্তানী নেজামী ইসলাম পার্টীর নেতা  রাজাকার কমান্ডার মৌলানা শফি উদ্দিন সহ আরও দুই জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা
জারীর পর জেলার লাখাই থানা পুলিশ সংশ্লিষ্ঠ গ্রামের মৃত আতাব উল্লাহ’র পুত্র তাজুল ইসলাম ফোকন ওরফে ফোকন রাজাকার ও একই গ্রামের বাসিন্দা আশিক উল্লাহ’র পুত্র জাহিদ মিয়া ওরফে জাহিদ রাজাকারকে গ্রেফতার করে। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জোর গুঞ্জন অব্যাহত রয়েছে, মানবতা বিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত প্রধান আসামী তৎকালীন ওই পার্টির নেতা মৌলানা শফি’র পরিবারের সদস্যদের নিকট আগেই এমন অভিযান হতে পারে এই ধরনের খবর গুটি কয়েক রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পুলিশী সোর্সের মাধ্যমে পৌছে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট মামলার রাজাকার কমান্ডার পায়ে হাটতে অক্ষম বয়োবৃদ্ধ মৌলানা শফিকে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। অথচ পুলিশ বলছে, তারা খবর পেয়েছে গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত অপর আসামী নাকি বাড়ীতে ছিল না। বেশ কয়েক সপ্তাহ যাবত রাজাকার কমান্ডার শফি পলাতক ছিল। তাই তারা সেখানে অভিযান পরিচালনা করেননি। নানা সূত্র জানিয়েছে, মৌলানা শফিকে গ্রেফতার থেকে বাঁচাতে তার পরিবারের ঘনিষ্টজ্বনরা এখন তার নিজ গ্রাম সহ লাখাইয়ের বিভিন্ন গ্রামগুলোর আত্মীয়-সজ্বনের বাড়ীতে উঠিয়ে ক্রমান্বয়ে স্থান বদল করছেন। সংশ্লিষ্ট মামলার এক স্বাক্ষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শফি বি-বাড়িয়া থেকে এখন নাকি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলাধীন আইল্লারা গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ীতে অবস্থান করছেন। ফলে শফিকে গ্রেফতারে পুলিশী ভূমিকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারন মানুষের মাঝে বিরূপ প্রশ্নের উদ্ভব ঘটেছে। প্রশ্ন উঠেছে, মৌলানা শফি নিজ বাড়ীতে থাকা সত্বেও কিভাবে তাকে আটকের খবর সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যদের নিকট পৌছে গেল। এদিকে ওই দুই রাজাকার গ্রেফতার হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দ-উল্লাস। বিভিন্ন স্থানে চলছে মিষ্টি বিতরন। উল্লেখ্য, বিগত ১৫’ সালের অক্টোবর মাসে জেলার লাখাই উপজেলার থানায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ কামাল বাদী হয়ে উল্লেখিত আসামী সহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ পূর্বক একটি এজাহার দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ১৬ ফেব্র“য়ারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ কামাল বাদী হওয়া এই মামলাটি ট্রাইব্যুনালে রেকর্ডভূক্ত হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা নুর হোসেন আরও জানান, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার হাতে মামলাটি চলে যাবার পর যথারীতি নিয়মে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কই বাদী হয়ে যান। ফলে হবিগঞ্জের সংশ্লিষ্ট এলাকায় সংঘটিত ৭১’এর ওই মামলার সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী আইজিপি মোঃ আব্দুল হান্নান খান পিপিএম এর সার্বিক তত্বাবধানে এই মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আমি নুর হোসেন জেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলার ৭১’এর সুনিদিষ্ট নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ঘটনাস্থল একাধিকবার পরিদর্শনকল্পে তদন্তকার্য পরিচালনা করি এবং প্রত্যক্ষ স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন সহ ভিডিও ফুটেজ ধারন একং চক তৈরী করি। যার ফলে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের নির্দেশেই ওই রাজাকারদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়। এদিকে মৌলানা শফি সহ সহযোগি রাজাকারদের বিরুদ্ধে উক্ত একাধিক তদন্ত চলাকালে তদন্তকারী টীমের সাথে ছিলেন সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থা কর্তৃক গঠিত জেলা স্বাক্ষী ও ভিকটিম সুরক্ষা কমিটির মেম্বার সাংবাদিক রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন। এদিকে এই গ্রেফতার প্রক্রিয়া তরান্বিত হবার পর সংশ্লিষ্ট মামলার স্বাক্ষী ও ভিকটিমদের সুরক্ষায় পুলিশ প্রশাসন ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের প্রতি জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছে জেলা আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থা কর্তৃক গঠিত সংশ্লিষ্ট কমিটি।


     এই বিভাগের আরো খবর