,

মহান জাতীয় সংসদে এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু’র বক্তব্য

মাননীয় স্পীকার, দশম জাতীয় সংসদের পড়ন্তবেলায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির শেষ ভাষণের উপরবক্তব্যের শুরুতেই আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাংলাদেশের সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি, গ্রাম বাংলার গণমানুষের হৃদয়কোটায়এখনো যার নাম সেই প্রাণপ্রিয় নেতা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান
পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মহিয়সী কান্ডারী জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে। যাঁরা আমাকে এই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দিয়েছেন। একইসাথে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আধুনিক বাংলার বিচক্ষণ কারিগর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। আমি আরও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জ-১ এর নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার আপাময় জনসাধারণকে যারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সমগ্র শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনে আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন।তাছাড়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদেরও আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি। বিশেষভাবে স্মরণ করছি, আমার নির্বাচনী এলাকার কৃতি সন্তান সাবেক সফল প্রয়্যাত অর্থমন্ত্রী জনাব শাহ এমএএস কিবরিয়াকে। মাননীয় স্পীকার, গত ৭ই জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ আব্দুল হামিদ এই জাতীয় সংসদে একটি ভাষণ প্রদান করেছেন। বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে গতানুগতিক ভাষণে তিনি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মকা-ের বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন।এই সফলতার জন্য অবশ্যই সরকারকে ধন্যবাদ। আমরা যদি আরো পিছনে তাকাইদেখতে পাবো,সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার শাসনামলে এই সফলতার দ্বার উন্মোচন করেছিলেন। এক সময় এই সংসদ ভবনের সামনে নৌকা চলতো। আজকের ঢাকা বন্যামুক্ত করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বাংলাদেশে ৬৪টি জেলা এবং আইনের শাসনকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌছাতে উপজেলা প্রশাসন সৃষ্টি করেছিলেন। এমন অনেক উন্নয়নের কথা বলে শেষ করা যাবে না। মূলত সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাহেবের সময়েই এদেশে উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারা সৃষ্টি হয়। মাননীয় স্পীকার, সমাজে, রাষ্ট্রে আজ অপরাধ প্রবণতা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। আজকে যে অপরাধগুলো সংঘটিত হচ্ছে জঙ্গিবাদ,গুম, ইভটিজিং এ রকম অনেক অপরাধমূলক শব্দ পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরশাসনামলে মানুষ জানতো না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একজন সৈনিক থেকে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার ৯ বছর শাসনামলে এদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আজ কোর্ট রায় দিয়েছে ৬ মাসের মধ্যে ঢাকসু নির্বাচন করার জন্য। ১৯৯১ সালের পর থেকে ঢাকসু নির্বাচন বন্ধ। কিন্তু আমার দল জাতীয় পার্টি এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কোন ছাত্র সংগঠন না থাকলেও সেদিন ঢাকসু নির্বাচন বন্ধ হয়নি। রাজনৈতিক সহিংসতাও এতো ছিল না। অনেকেই বলে থাকেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯ বছর ছিল এদেশের স্বর্ণযুগ। মাননীয় স্পীকার, মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেছেন বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপমুক্ত একটি সুখী, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়ভিত্তিক এবং জ্ঞাননির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে প”থিবীর বুকে পরিচয় করিয়ে দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমাদের দারিদ্রের হার যেখানে ২০১০ সালে ছিল ৩১.৫ শতাংশ, বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৪.৩ শতাংশ। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার ১৭.৬ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ১২.৯ শতাংশে। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ১৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবাসী আয় বেড়েছে, উৎপাদন বাড়ছে, শিক্ষার হার বাড়ছে ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রেই আমরা সফলতা অর্জন করেছি। কিন্তুবরাবরেরমতই, মহামান্য রাষ্ট্রপতি সরকারের ব্যর্থতার জায়গাগুলো এড়িছে গেছেন। আমি মনে করি রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে এই কাজটি তাঁর করা উচিত। মাননীয় স্পীকার, প্রতিবারের মতোই আমরা লক্ষ্য করেছি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ব্যাংকিক সেক্টরের লুটপাট, শেয়ার বাজারের অস্থিরতা, ধনী-দরিদ্যের বৈষম্য, নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা, মাদকের ভয়াবহতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেননি। বিরোধী দলের একজন সদস্য হিসেবে আমি দু’একটি বিষয়ে এই সংসদকে অবহিত করতে চাই। মাননীয় স্পীকার, বর্তমান সরকারের সময়ে ব্যাংকিক সেক্টরের লুটপাটের কথা নতুন করে কিছু বলার নাই। তবে এইটুকু আমরা বলতে পারি সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ইত্যাদির সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ফারমার্স ব্যাংক এবং উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে খেলাপী ঋণের পরিমাণ। এই ব্যাংকিক সেক্টরটিতে নিয়ন্ত্রণে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।মাননীয় স্পীকার, দ্রব্যমূল্য আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বাজারে চালের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এখন শীতকালীন সবজির পূর্ণ মৌসুম হলেও প্রত্যেকটি সবজির দাম প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা যা এই সময়ে ১৫ থেকে ২০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আজকে কাঁচা পিয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। যদিও আমাদের বিজ্ঞ মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী কয়েক দিন আগে এই সংসদে বলেছেন পিয়াজের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে আছে। আমি জানি না মাননীয় মন্ত্রীর কাছে কি যুক্তি আছে। তবে সাধারণ ভুক্তভোগী মানুষ এর কোন যুক্তি খুঁজে পায় না। অথচ বাংলার সাধারণ কৃষকযারা মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করে সে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে। মাননীয় স্পীকার, বাংলাদেশ গ্রামনির্ভর দেশ, কৃষি নির্ভর দেশ, নদীমাতৃক দেশ। গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কোন এলাকায় আওয়ামী লীগের এমপি, কোন এলাকায় জাতীয় পার্টির এম.পি সেই বৈষম্য না করে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যেকটি এলাকার দিকে তাকাতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে শক্তিশালী করার জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলতেন ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।তাই তিনি গ্রামভিত্তিক উন্নয়নের ধারা শুরু করেছিলেন, দেশ গঠনের মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। আইনের শাসন এবং রাষ্ট্রীয় সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেপ্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণ শুরু করেছিলেন। উপজেলা ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। মাননীয় স্পীকার, আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, এটা শুধু গৌরবের বিষয় নয়,আত্মাতৃপ্তিরও বটে।তবে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিতেসরকার যথেষ্ট মনোযোগী নয়।একটা সময়ে ক্যান্সারের কথা শুনলে আমরা আতংকিত হতাম। কিন্তু এখন ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে প্রচুর রোগীর ভিড়। শুধু তাই নয়, ডায়াবেটিস, কিডনীর রোগ, লিভার সিরোসিস, আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নাই এমন মানুষ নাই বললেই চলে। এর মূল কারণ প্রতিনিয়ত মানুষ বিষাক্ত খাবার খাচ্ছে এবং বিভিন্ন রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে বহু মানুষ। মাননীয় স্পীকার, স্বাস্থ্য খাতে বর্তমান সরকার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদান অনেক। কমিউনিটি কিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে অসামান্য অবদান রাখা এই কমিউনিটি কিনিকগুলোর কর্মচারীরা এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। চিকিৎসা সেবার এই কাজটি অত্যন্ত নিবিড় মনোযোগের সহিত করা উচিত। এর জন্য আমি মনে করি তাদের প্রচুর প্রশিক্ষণ প্রদান করা এবং দ্রুত এই কিনিকগুলো রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা দরকার। তাছাড়া প্রত্যেকটি কিনিকে একজন ডিগ্রিধারী ডাক্তার পদায়নের ব্যবস্থা করলে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। মাননীয় স্পীকার, আমরা ছোট বেলা থেকে পড়ে আসছি ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদ-।’ কিন্তু আমাদের মেরুদ- খুবই দুর্বল। শিক্ষারসামগ্রিক উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী নিরলস পরিশ্রম করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছেন। বর্তমান সরকার এবং বিগত মহাজোট সরকারের সময়ে আমরা শিক্ষারসূচকে অনেক উপরে উঠে আসছি। কিন্তু শিক্ষার গুণগত মানের তেমন উন্নতি হচ্ছে না। আমরা শুধু ছঁধহঃরঃুর দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি ছঁধষরঃুরদিকে মনোযোগ কম দিচ্ছি। মাননীয় স্পীকার, শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। আজকে এই শহরের সরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে ছেলেমেয়েরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইচ্ছ মতো মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ, কোর্টের আদেশ কোন কিছুই তারা তোয়াক্কা করছে না। শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্বৃত্তায়ন যেকোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে।তা নাহলে ভবিষ্যতে জাতির মেধাশূন্যরাজনীতি এবং জনপ্রশাসন নিয়ে দেশকে অগ্রসর করা যাবে না। মাননীয় স্পীকার, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আকার প্রতিবছরই সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। সুবিধাভোগীদের সংখ্যা বাড়ছে, বরাদ্দও বাড়ানো হচ্ছে। দলিত, হরিজন, বেদে ইত্যাদি অবহেলিত জনগোষ্টীকে উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হলেও এক্ষেত্রে খুব একটা সফলতা আসছে না। তাছাড়া হিজরাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলেও রাস্তা-ঘাট, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট ও টার্মিনালে তারা রীতিমতো সাধারণ মানুষের জন্য উপদ্রব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আরো গুরুত্ব দিয়েতাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিরমাধ্যমেউন্নয়নের মূল ¯্রােতধারায় নিয়ে আসতে হবে। মাননীয় স্পীকার, দশম পার্লামেন্টে আমরা যারা নবীন সদস্য এবং ঢাকা শহরে মাথা গোজার কোন ঠাই তাঁদের অনুকূলে প্লট বরাদ্দের বিষয়ে এই পার্লামেন্টের অনেক মাননীয় সদস্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মাননীয় গণপুর্ত মন্ত্রীর দৃষ্ঠি আকর্ষণ করে দাবি জানিয়ে আসছি। এমনকি মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতাও কয়েকবার সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। আমি জানতে পেরেছি এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আমি অনুরোধ করবো, যত দ্রুত সম্ভব মাননীয় সদস্যদের অনুকূলে রাজউকের প্লট বরাদ্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা মাননীয় গণপুর্ত মন্ত্রী করবেন। মাননীয় স্পীকার, বর্তমান সরকারের চার বছরে আমার এলাকায় কিছু উন্নয়ন হয়েছে এবং কিছু চলমান রয়েছে। সামনে নির্বাচন জনগণের কাছে দৃশ্যমান চলমান কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার এবং আরো কয়েকটি কাজ জরুরিভিত্তিতে শুরু করা একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর এটাই হচ্ছে আমাদের শেষ বক্তৃতা। তাই আমার নির্বাচনী এলাকার দু’একটি বিষয় আপনার মাধ্যমে এই সংসদে উত্থাপন করতে চাই। (১) আমার নির্বাচনী এলাকার কৃতি সন্তান আওয়ামী লীগের সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী শাহ এমএএস কিবরিয়াসহ বেশ কয়েকজনকে২০০৫ সালে গ্রেনেড হামলারমাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়,দীর্ঘ ১২ বছর পার হলেও চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। বিচার সম্পন্ন হয়নি বাহুবলের চাঞ্চল্যকর সেই চার শিশু হত্যার মামলার বিচার। রহস্যজনক কারণে বিচার প্রক্রিয়া এগুচ্ছে না। এই বিচার নিয়ে রাজনীতিকরণ চলছে। শুধু আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ নয়, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ চাঞ্চল্যকরসব হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার চায়। (২) মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকা একদিকে হাওর-বাওড় অন্যদিকে পাহাড় ও সমতল ভূমির এক নৈসর্গিক লীলাভুমি। প্রকৃতি যেখানে উদার হলে উন্নয়নে ছোঁয়া সেখানে উপেক্ষিত। এখানে পর্যটন শিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।বাংলাদেশের অন্যতম ফাইভ স্টার হোটেল ‘দি প্যালেস’ আমার নির্বাচনী এলাকার বাহুবলে অবস্থিত। এখানে প্রতিদিন প্রচুর দেশি বিদেশি পর্যটক আসছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার সহযোগিতা করলে এখানে পর্যটন খাতে দেশি-বিদেশি প্রচুর বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। (৩) মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রচুর হাওর রয়েছে। হাওরের হাজার হাজার একর জমিতে বছরের অধিকাংশ সময় কোন চাষাবাদ হয় না। জাতির পিতা এই হাওর-বাওড়ের জন্য গঠন করেছিলেন ‘বাংলাদেশ হাওর উন্নয়ন বোর্ড’। প্রতিবছর হাওর উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও জাতির পিতার নির্মম হত্যার ৪১ বছর পরও এই বোর্ডের গতিশীল কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না। তার প্রমাণ বিগত প্রলয়ংকারী বন্যায় সুনামগঞ্জ, সিলেট এবং হবিগঞ্জের হাওর অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের কথা আমাদের কারো অজানা নয়। অথচ হাওরের এই বিশাল অনাবাদী জমিতেই তৈরি হতে পারে জাতির অফুরন্ত সম্ভাবনা। (৪) মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকা শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক চেয়ে পিছিয়ে আছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবির মুখে এমপিওভুক্তির বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। আমার অনুরোধ থাকবে, আমার নির্বাচনী এলাকার নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার পাঠদানের অনুমতি ও একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যেন এমপিওভুক্ত করা হয়। তাছাড়া নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলায় একটি করে কারিগরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।  মাননীয় স্পীকার, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আমার নির্বাচনী এলাকার অনেক গ্রামে এখনো কোন বিদ্যালয় নাই। নবীগঞ্জ উপজেলার ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নের পূর্ব কসবা, ৬নং কুর্শি ইউনিয়নের হৈবতপুর, ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নের গাজীর মোকাম গ্রাম এবং বাহুবল উপজেলার ২নং পুটিজুরি ইউনিয়নের রূপাইচড়া চা বাগান অত্যন্ত জনবহুল কিন্তু কোন স্কুল না থাকায় শিশুরা মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুত এই গ্রামগুলিতে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা অতীব প্রয়োজন। তাছাড়া এই অঞ্চলের শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ, মাল্টিমিডিয়া কাসরুমস্থাপন একান্তু প্রয়োজন। (৫)মাননীয় স্পীকার, নদী ভাঙ্গন আমার এলাকার একটি অন্যতম সমস্যা। কুশিয়ারা নদী আমার নির্বাচনী এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিগত বন্যায় নবীগঞ্জ উপজেলার ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক গ্রামসহ অনেক গ্রাম কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছর ভাঙতে ভাঙতে ঘর-বাড়ি হারিয়ে এই গ্রামের মানুষগুলো অত্যন্ত অসহায় জীবন-যাপন করছে। এই ভাঙন রোধ করা না অনেক গ্রামনদীগর্ভে তলিয়ে যাবে। তাই দ্রুত এই নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় পানিসম্পদ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। (৬)মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকার গোপলার বাজার ও আউশকান্দি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দুটি এক সময়ের অত্যন্ত ব্যস্ততম স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হলেও বর্তমানে অনেকটা পরিত্যাক্ত অবস্থায়। কারণ এখানে দীর্ঘদিন কোন ডাক্তার নেই। জরুরিভিত্তিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্র দুটিতে ডাক্তার পদায়নসহ গোপলার বাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রূপান্তর করার জন্য মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। (৭) আউশকান্দি-দেওতৈল কিবরিয়া সড়কটি ১৯৯৮ সালের পর কোন সংস্কার হয়নি। দীর্ঘদিন মেরামত/সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ১১নং গজনাইপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও-উমেদগঞ্জ সড়কটির একই অবস্থা। জনদুর্ভোগ লাঘবে এই সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করা অতীব জরুরী। নবীগঞ্জ উপজেলার ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নের ইমামগঞ্জ বাজারের কাছে গোপলা নদীর উপর এবং ৫নং ইউনিয়নের মুকিমপুর গ্রামের কাছে ১০০ মিটার করে দুইটি ব্রিজ নির্মাণ করা অতীব জরুরি। মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মিত হয়েছে এবং কয়েকটি এখনো নির্মিত হয়নি। যে সকল ইউনিয়নে এখনো নির্মিত হয়নি জরুরি ভিত্তিতে সেই সকল ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকার নবীগঞ্জ উপজেলা সদরে কোন অডিটোরিয়াম নাই। ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যোগেও এখানে কোন কমিউনিটি সেন্টার বা অডিটোরিয়াম নির্মিত হয়নি। ফলে এলাকায় কোন সামাজিক বা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য স্কুল-কলেজের মাঠ বা খোলা জায়গা ছাড়া কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে কোন কর্মসূচি পালন করতে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জনদুর্ভোগ লাঘবে নবীগঞ্জ উপজেলা সদরে একটি আধুনিক অডিটোয়িাম নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যমাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রীরদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। (৮) আমার নির্বাচনী এলাকা দেশের বৃহত্তম ফাইভ স্টার হোটেল ‘দি প্যালেস’, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র, কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।কিন্তু পুলিশের জনবল কম থাকায় আইন-কৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খেতে হয়। তাই জরুরিভিত্তিতে পুলিশের জনবল বাড়ানোর জন্য মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। (৯) মাননীয় স্পীকার, আমার এলাকা সুবিধাবঞ্চিত এবং দরিদ্রপীড়িত এলাকা। এখানকার অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে। তাই এখানে স্যানিটেশন সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য বেশ কিছু গভীর নলকুপ স্থাপন করা প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আকার সম্প্রসারণ করা দরকার, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো দরকার। (১০) মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ ও বাহুবল গ্যাস-বিদ্যুতের এক বিরাট উৎস। বিশেষ করে বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র আমার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত, যেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত হচ্ছে। কোন এলাকায় যখন গ্যাস বা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় সেখানে পরিবেশগত কিছু সমস্যা তৈরি হয়। এই বিরূপ প্রভাবের শিকার এলাকার জনগণকেই হতে হয়। জাতীয় স্বার্থে আমার এলাকার মানুষ এর কোন প্রতিবাদ করছে না। অথচ এই এলাকার জনগণ গ্যাস সংযোগের সুবিধা পাচ্ছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, মাননীয় স্পীকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত বছরের আগের বছর আমার নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে এলাকার জনসাধারণ গ্যাস সংযোগের দাবি জানিয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন উৎপন্ন গ্যাসের কিছুটা সংশ্লিষ্ট বিতরণের চিন্তা করছে সরকার। আমি বেশ কয়েকবার এই বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করেছি। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো আমার নির্বাচনী এলাকার, বিশেষ করে নবীগঞ্জ উপজেলার ৩, ৪, ৫, ৬নং ইউনিয়নে অগ্রাধিকারভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। সর্বশেষ মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে তার মূল্যবান ভাষণ প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে  আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ, মাননীয় স্পীকার।
আল্লাহ হাফেজ।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।


     এই বিভাগের আরো খবর