,

মাধবপুরে খুচরা মাদক বিক্রেতারা ধরা পড়লেও মূলহোতারা অধরা

মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ মাদকে ভাসছে মাধবপুর ! ব্যাপক প্রসার ও বিস্তৃতির কারনে মাদকের স্বর্গরাজ্যে উপজেলাটি মাদকের স্বর্গরাজ্যে রুপ নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সীমান্তরক্ষি বাহিনী, মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এই মাদকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ অভিযান পরিচলানা করে আসলেও মাদকের প্রসারতা রোধ করা সম্ভব হয়নি! উপজেলার শাহজহানপুর, জগদীশপুর ও নয়াপাড়া এই তিনটি ইউনিয়নে রেল ও সড়ক পথ এমনকি চা বাগান বেষ্টিত হওয়া মাদকের সম্্রাজ্য গড়ে ওই এলাকা গুলোতেই। দুধর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকের কাছে অসহায় সাধারন জনগন। অভিযোগ রয়েছে এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রাক, প্রাইভেটকার, পিকআপ এমনকি মহিলা ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক লোকদের দ্বারা প্রেরন করা হয়ে থাকে। ২০০৮সালে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান(র‌্যাব)’র সাথে ক্রস ফায়ারে নিহত হন মাদক স¤্রাট নয়াপাড়া ইউনিয়নের আব্দুল হাকিম। এরআগে তেলিয়াপাড়া ইউনিয়নের মাদক স¤্রাট আব্দুল সোবহান মাদক মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় নিহত হয়। তাদের উত্তসূরীরা মাদকের রাজ সিংহাসনে বসে দাপটের সাথে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৪ঠা মে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের ডিজি’র নির্দেশে মাদক নির্মূলে দেশব্যাপি সাঁড়াশি অভিযান অব্যহত থাকলেও মাধবপুরে নির্বিঘেœ চলছে মাদক ব্যবসা। প্রায় প্রতিদিন কোন কোন এলাকা থেকে মাদক মাদকসহ পাচারকারী ধরা পড়লেও মূল হোতা ও নিয়ন্ত্রনকারীরা থেকে যাচ্ছে অধরায় ! নাম আসেনা মামলার এজাহারে ! সীমান্তবর্তি উপজেলা মাধবপুরের সর্বত্র হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদক। মাদকের সহজ লভ্যতায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছেমাদকাসক্তির সংখ্যা। যুব সমাজ থেকে শুরু করে যুবতি এমনকি উঠতি বয়সের স্কুল কলেজ পড়-য়াদের মাদকাসক্তের খবর পাওয়া গেছে। সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে অভিভাবকসহ সচেতন মহল। প্রায় ৩০কিঃমিঃ সীমান্ত এলাকা ভেদ করে পার্শ্ববর্তি ভারত থেকে ফেন্সিডিল, গাজাঁ, ইয়াবাসহ সকল প্রকাশ মাদকদ্রব্য মাধবপুরে প্রবেশ করে সড়ক ও রেল পথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হয়। মাদক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রনে শতাধিক মাদকের স্পট ছাড়াও এখানে ভ্রাম্যমান মাদক বিক্রেতার সংখ্যা রয়েছে কয়েকশ। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে গ্রামের পাড়া, মহল্লায় রয়েছে মাদক বিক্রেতা। সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় ইয়াবা,গাঁজা ও ফেন্সিডিলের ছড়াছড়ি বেশি। আদালত হইতে জামিন পাওয়ার সুবিধার্থে মাদক ব্যবসায়ীরা কৌশল করে মহিলা ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মাদক পাচার ও বিক্রয়কারী হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর গত কয়েক মাসে সেবনকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের আটক করলেও মাদক আমদানিকারী বড় ব্যবসায়ী ও বড় মাদকের চালান ধরা আজো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সীমান্ত এলাকায় বর্ড়ার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি)’র মাদক উদ্ধার নিয়মিত অভিযানের খবর পাওয়া গেলেও অধিকাংশ উদ্ধারে পাচারকারী কিংবা ব্যবসায়ীকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত উদ্ধারের মাদক পাচারকারীরা নিজেদেরকে বাঁচিয়ে নিতে পারে। বছরের শুরুতে মাধবপুর থানা পুলিশ বেশ বড় বড় মাদকের চালান আটক করলেও গত এপ্রিল মাসের পর থেকে মাদক উদ্ধারে পূর্বের তুলনায় ভূমিকা নেই বললেই চলে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা ও নিয়ন্ত্রনের অভিযানের স্বল্পতার বিপরীতে মাদক প্রসার কয়েকগুন হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মাধবপুর বাসিরকে আতংকগ্রস্ত করে তুলছে। সংখ্যাবৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে উপজেলা ব্যাপি তাদের দাপটও বেড়েই চলেছে। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্ভর কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হাবিব ও তার পরিবারের লোকজন সোহাগ(৩৪)নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে। উপজেলা ধর্মঘর থেকে বাঘাসুরা ১১টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামেই রয়েছে মাদক বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট ও স্পট। মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের পরিদর্শক খাইরুল আলম লোকবলের অভাবে বড় চালান আটক করা সম্ভব হয়না বলে স্বীকার করে তিনি জানান খুচরা বিক্রেতা ও সেবনকারীদের আটক করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হয়ে থাকে। এ ব্যপারে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এস এম রাজু আহমেদ জানান-মাদক নির্মূলকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বিট পুলিশিং সভা করে প্রত্যেক এলাকায় মাদক রিরোধী সচেতনা বৃদ্ধি, মাদক উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রনে আইনি পদক্ষেপ গ্রহন অব্যহত আছে। মাদক সংশ্লিষ্ট যেই হোক না কেন আইনের আওতায় আনা হবে। সচেতন মহল ও অভিভাবকবৃন্দ মনে করেন এখনই সেই মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনা ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে না পরলে পুরো মাধবপুর মাদকের ভয়াল গ্রাসে ডুবে যাবে।


     এই বিভাগের আরো খবর