,

বাহুবলে শ্মশানের জমির রেকর্ড সংশোধনের কাজ শুরু

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবলের দ্বিগাম্বর এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানঘাটের দখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধারের জন্য দ্রুতগতিতে রেকর্ড সংশোধনের কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বাহুবল সেটেলমেন্ট অফিস থেকে রেকর্ডের সংশোধনের প্রয়োজনীয় নথি সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে রেকর্ডটি সংশোধন হয়ে আসার পর শ্মশান উন্নয়ন কমিটির কাছে দখল হওয়া জমিটি হস্তান্তর করবে উপজেলা প্রশাসন। অন্যদিকে, স্থানীয় সাংসদ এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু বলেছেন, রেকর্ড সংশোধন হওয়ার পর তিনি নিজে উপস্থিত থেকে শ্মশানের জমি থেকে প্রশাসনের মাধ্যমে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্বে দেবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা বলেছেন, ১৯৫৬ সালের এস এ রেকর্ডের খতিয়ানে বাহুবলের দ্বিগাম্বর এলাকায় এই জমিটি শ্মশানের নামে ছিল। এরপর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শ্মশানের কার্যক্রমও পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু মুহিত মিয়া নামের এক ব্যক্তি শ্মশানের জমিটি দখল করে আরএস রেকর্ডের ডিপি খতিয়ানে রেকর্ড করিয়ে নেয়। এরপর থেকে স্থানীয় হিন্দুরা ফুঁসে ওঠে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাংবাদিক অভিজিৎ ভট্টাচার্য্যরে নেতৃত্বে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহুমুদুল কবীর মুরাদ গত শনিবার শ্মশানের দখল হওয়া জমিটি পরিদর্শন করেন। সেসময় তিনি বলেছিলেন, রেকর্ড সংশোধন করে যত দ্রুত সম্ভব শ্মশানের জমিটি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস গতকাল মঙ্গলবার রেকর্ড সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি সিলেটে অবস্থিত জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে পাঠায়। জানতে চাইলে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, শ্মশানের মোট জমির পরিমাণ ছিল ১৭ শতাংশ। এরমধ্যে ৪ শতাংশ জমি মহাসড়কের অধীনে চলে যায়। বাকী ১৩ শতাংশ জমি আরএস রেকর্ডে ডিপি খতিয়ানে মুহিত মিয়ার নামে লিপিবদ্ধ হয়। সেই রেকর্ডটি সংশোধন করে শ্মশানের নামে নামকরণের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রেকর্ড সংশোধনের কপি আসার পরই আমরা পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করব। অর্থাৎ এস এ খতিয়ানে যেভাবে শ্মশানভূমি ছিল সংশোধিত নথিতে ঠিক সেভাবেই শ্মশানভূমি রাখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা বলেছেন, এর আগে বাহুবলের পুটিজুরী ইউনিয়নের দিগাম্বরে হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানের জায়গা অবৈধ দখলে জটিলতা ও অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি শ্মশানের রেকর্ডপত্র ও দখল পর্যালোচনা করেন। পর্যালোচনা শেষে জেলা প্রশাসক বলেন, এটি শ্মশানের জমি। এসএ রেকর্ডেও তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। অবৈধ দখলদার জালিয়াতি করে আরএস রেকর্ডের ডিপি খতিয়ানে তার নামে রের্কড করিয়ে নেয়। এছাড়া তাঁর কোনো দলিলই নেই। এরপরই জেলা প্রশাসক ঘোষনা দেন হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান রেকর্ড সংশোধন করে অচিরেই তাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে। অবৈধ দখলদারকে আপোষে দখল প্রত্যাহার করতে বলা হয়, না হলে তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন বলেন, যেহেতু চূড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশিত হয়নি তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন রেকর্ড সংশোধনের কাজ গত রোববার থেকে শুরু হয়। এদিকে শ্মশানের জমি উদ্ধারে প্রশাসনের এমন দ্রুতগতিতে কাজ করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব কুমার রায় সুজন। গতকাল তিনি বলেন, প্রশাসন যদি তার দেয়া কথা রাখতে না পারে তাহলে প্রশাসনকে বিবাদী বানিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করব। এর আগে গত ৩১ মে সকালে শ্মশান উন্নয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এমপি এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু। শুধু কথাই বলেন নি, গত শুক্রবার (১ জুন) সকালে শ্মশান উন্নয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে শ্মশানের জমি উদ্ধারে কি কি কাজ করতে হবে সে বিষয়ে কতগুলো নির্দেশনা দেন এমপি। তিনি বলেছেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় (বাহুবল-নবীগঞ্জ) সংখ্যালঘুদের স্বার্থে আঘাত লাগে এমন কাজ কেউ করতে পারবে না। যারা বা যে শ্মশানের জমি দখল করেছে তাদেরকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারন করেন এমপি এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু। তার নির্বাচনী এলাকায় হিন্দুরা শান্তিতে থাকবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। এর পাশাপাশি সাংসদ স্থানীয় ইউএনও (বাহুবল) মো. জসীম উদ্দিনের কাছে ফোন করে কৈফিয়ত তলব করে পুরো বিষয়টি জানতে চান। কিভাবে শ্মশানের জমি মুহিত নামে লিপিবদ্ধ হল-ইউএনও’র কাছে তারও ব্যাখা চান এমপি। জবাবে ইউএনও বলেছিলেন, বিষয়টি আমরা দেখতেছি। গতকাল মুনিম চৌধুরী বাবু বলেন, রেকর্ড সংশোধন হওয়ার পর তিনি নিজে উপস্থিত থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বাহুবল উপজেলা শাখার সভাপতি নীহার রঞ্জন দেব বলেন, শ্মশানের জমি কেউ দখল করতে পারবে না। প্রশাসন যেভাবে কাজ করছে তাতে সন্তোষ জানিয়ে তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানের জমি মুহিত মিয়া দখল করে রাখলেও তার পেছনে গুটিকয়েক হিন্দু প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। একারণেই মুহিত মিয়া শ্মশানের জমির অবৈধ দখলদার হতে পেরেছেন। তিনি উপজেলার গুটিবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও মদ পানকারী হিন্দুদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে যারা হিন্দু হয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে কাজ করবে তাদের নাম গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর