,

আইসিটি আইনে মামলায় সংগীতশিল্পী আসিফ কারাগারে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন

সময় ডেস্ক ॥ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে সুরকার ও শিল্পী শফিক তুহিনের দায়ের করা মামলায় জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে তাকে গ্রেফতরের পর গতকাল আদালতে তোলা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে আসিফের জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম কেশব রায় চৌধুরী উভয় পক্ষের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে এফডিসি এলাকায় আসিফ আকবরের স্টুডিও থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত সোমবার সন্ধ্যায় তেজগাঁও থানায় দায়ের করা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ওই মামলায় আসিফ আকবর ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় চার-পাঁচজনকে আসামি করা রয়েছে। এ মামলায় অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন শিল্পীর ৬১৭টি গান ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করে মোবাইল ফোনের কনটেন্ট হিসেবে বিক্রি করার অভিযোগ আনা হয়েছে আসিফ আকবরের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে শফিক তুহিনের রচিত শতাধিক গান রয়েছে বলে মামলার বাদী দাবি করেছেন। মামলার এজাহারে শফিক তুহিন বলেছেন, গত ১লা জুন রাতে এশটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ‘গান চুরির’ বিষয়টি জানতে পারেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, আসিফ তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আর্ব এন্টারটেইনমেন্ট এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গানগুলো বিক্রি করে ‘প্রতারণার মাধ্যমে’ বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। ঘটনা জানার পর গত ২রা জুন রাতে শফিক তুহিন বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে এশটি পোস্ট দিলে আসিফ আকবর সেখানে বিভিন্ন অশালীন মন্তব্য করেন এবং হুমকি দেন। পরে ফেসবুক লাইভেও ‘অবমাননাকর, অশালীন ও মিথ্যা’ বক্তব্য এবং ‘শায়েস্তা করার হুমকি’ দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। ২রা জুন রাতে ফেসবুক লাইভে আসিফ আকবর দাবি করেন, জালিয়াতি করে অন্যের গান বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার যে অভিযোগ শফিক তুহিনসহ কয়েকজন শিল্পী করেছেন, তা পুরোপুরি মিথ্যা। গতকাল আদালতেও তিনি একই দাবি করেন। মামলার অভিযোগের কথা শুনে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন আসিফ। এ সময় বিচারককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, স্যার আগেই তার (সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শফিক তুহিন) বিরুদ্ধে আমার মামলা করা উচিত ছিল। তা না করে আমি ভুল করলাম। মামলার শুনানির একপর্যায়ে বিচারককে তিনি আরো বলেন, অনুমতি ছাড়াই সংগীতকর্মসহ অন্যান্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের ৬১৭টি গান সবার অজান্তে বিক্রি করেছি এ অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি এর লাভের এক টাকাও পাইনি। প্রয়োজনে আপনি আমার সমস্ত অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখতে পারেন। এ সময় বিচারক আসিফের উদ্দেশে বলেন, আপনি কেন গান ছেড়ে দিলেন? আসিফের আইনজীবী বলেন, স্যার তিনি (আসিফ) আবারও গান শুরু করেছেন। সামনে ঈদ। তাকে তো সবাই চেনেন। জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না। ভক্তরা তাকে নিয়ে ঈদ করতে চায়। আর মামলায় তথ্য-প্রযুক্তি আইনের যে ধারা দেয়া হয়েছে অভিযোগের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। এতে সর্বোচ্চ কপিরাইট আইনে মামলা হতে পারে। এদিকে মামলার এজাহারে শফিক তুহিন উল্লেখ করেন, টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার পর তিনি ২রা জুন রাতে অনুমোদন ছাড়া গান বিক্রির বিষয়টি উল্লেখ করে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দেন। তার সেই পোস্টের নিচে আসিফ অশালীন মন্তব্য ও হুমকি দেন। পরের দিন রাত ১০টার দিকে আসিফ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন। লাইভে শফিক তুহিনের বিরুদ্ধে অবমাননাকর, অশালীন ও মিথ্যা বক্তব্য দেন। আসিফ লাইভে শফিক তুহিনকে শায়েস্তা করবেন বলে হুমকি দেন। পাশাপাশি ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, শফিক তুহিনকে যেখানেই পাবেন, সেখানেই প্রতিহত করবেন। আসিফের এই বক্তব্যের পর তার ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শফিক তুহিনকে হত্যার হুমকি দেন। শফিক তুহিন মামলায় উল্লেখ করেন, আসিফের লাইভ লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। এতে তার (শফিক তুহিনের) মানহানি হয়েছে। অন্যদিকে আসিফ ফেসবুকে বলেন, তিনি আট বছর গান থেকে দূরে ছিলেন এবং আবার ফিরে এসে ‘চুটিয়ে’ কাজ করছেন- এটাই সবার মাথাব্যথার কারণ।


     এই বিভাগের আরো খবর