,

চুনারুঘাটে স্কুলছাত্রের মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ শুধু লেখা-পড়াতে নয় খেলাধুলাতে ব্যাপক আগ্রহ ছিলো তন্ময়ের। এ জন্য সহপাঠীরা খেলার পোকা বলে ডাকতো। যেখানে খেলা সেখানেই তন্ময়ের ছিলো সরব উপস্থিতি। চলতি বিশ্বকাপে তার পছন্দের দল ছিলো আর্জেন্টিনা। সিরিয়াস সমর্থক। ক্লাসে সে ছিলো বিনয়ী এবং সহজ-সরল প্রকৃতির। শিক্ষকরা তন্ময়কে খুব মায়া করতেন, ভালোবাসতেন। তন্ময়ের চলে যাওয়াটা তারা কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে পারছেন না। তার শূন্যতা বিরাজ করছে পুরো বিদ্যালয়ে। তন্ময়ের দেহ সিলিংয়ে ঝুলানো থাকবে সেটা কল্পনাও করেনি সহপাঠীরা। রেজাউল মোস্তফা তন্ময় (১৪)। সে চুনারুঘাট ডিসিপি হাইস্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা মাওলানা আঃ সালাম হাজী আলীম উল্লা মাদরাসার শিক্ষক। তারা চুনারুঘাট সদরেই বসবাস করেন। গত ২৬শে জুন সন্ধ্যায় মাইকে ঘোষণা করা হলো তন্ময়কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে নিখোঁজ। রাতে বলা হলো, তন্ময় সিলিংয়ের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শত শত উৎসুক মানুষ রাতেই তন্ময়ের বাসাতে ভিড় জমান। মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তন্ময়ের রহস্যজনক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের ছুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তন্ময়ের বাবা যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সে বাসার একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে তন্ময়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার মুখমন্ডল পরনের প্যান্ট দিয়ে ঢাকা ছিলো। পা দুটো ছিলো রশি দিয়ে বাঁধা। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিলো জখমের চিহ্ন। কোনো কোনো আঘাত থেকে রক্তও পড়ছিলো। হাত দুটো গলায় জড়ানো ছিলো রশির কাছে। এ ধরনের আলামত দেখে উৎসুক লোকজনের মাঝে নানা রহস্য ও কৌতূহল দেখা দেয়। এরই মাঝে তন্ময়ের মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে দাফনের উদ্যোগ নেন বাবা আঃ সালাম। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তন্ময়ের লাশ কবরস্থ করা হয়। তন্ময়ের মৃত্যুর বিষয়ে চুনারুঘাট থানার ওসি (তদন্ত) আলী আশরাফ তেমন কিছুই বলেননি তবে কেরাম বোর্ড না পাওয়ার কারণে তন্ময় আত্মহত্যা করতে পারে বলে জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পড়শি জানান, খেলা নিয়ে শাসন করতে গিয়ে ছেলেটি হয়তো আত্মহত্যা করেছে। কারণ হিসেবে তারা জানান, মা ছেলেটিকে শারীরিকভাবে প্রায়ই শাসন করতেন। ঘটনার দিনও ছেলেটির কান্নাকাটি শোনা গেছে। পরে মাইকে নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করা হয়। এ বিষয়ে নিহত তন্ময়ের বাবা এবং মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাৎক্ষণিক কোনো কথা বলতে চাননি। তবে ঘটনার ৩ দিন পর শুক্রবার মুঠোফোনে তন্ময়ের বাবা আঃ সালাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, আত্মহত্যার কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছেন না তিনি। তারা ছেলেকে খুব ভালবাসতেন তাই ছেলেকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে না দেখে শহরে মাইকিং করতে হয়। পরে ছেলের লাশ পাশের ঘর থেকে আবিষ্কার করেন তারা। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা সাংবাদিকদের জানান, ওই মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। রহস্যজনক এ মৃত্যু নিয়ে নানা কথা এখন লোকমুখে শোনা যায়। মরদেহের আলামত দেখে এলাকাবাসী তন্ময়ের মৃত্যু রহস্যজনক বলেই মনে করছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর