,

নবীগঞ্জে কলেজ ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে তুলকালাম কান্ড!

স্বামীর দাবী আত্মহত্যা ॥ ভাই বলছে পরিকল্পিত হত্যা

শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ না নিয়েই ক্ষোভে বাড়ি ফিরে গেলেন স্বজনরা

আনোয়ার হোসেন মিঠু/মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে নিপা দেব (২৩) নামের এক কলেজ ছাত্রী নব-বধুর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ মৃতদেহের সুরতহাল তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনায় পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। নিহতের স্বামী দাবী করছেন গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তার স্ত্রী। কিন্তু নিপার পরিবারের দাবী তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি নবীগঞ্জ শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে উপজেলার উল্লেখিত গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্র ধামের পুত্র অসীম ধামের সাথে মাধবপুর উপজেলার চৌমুনী ইউনিয়নের তুলসিপুর গ্রামের কালী রঞ্জন দেব এর কন্যা হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী নিপা দেব এর প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। দীর্ঘ প্রায় ৫/৬ বছরের প্রেমের অবসান ঘটে ৫ মাস পূর্বে অনুষ্ঠিত হওয়া বিবাহের মাধ্যমে। বিবাহের পর থেকে সুন্দরভাবেই চলছিল তাদের সংসার। তবে শুরু থেকেই শাশুড়ী খেলারাণী ধামের সাথে বনিবনা হচ্ছিলনা নব বধূ নিপার। গতকাল শুক্রবার সকালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাশুড়ীর সাথে তর্ক-বির্তক হয় নিপার। এক পর্যায়ে পিত্রালয়ে চলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে নবীগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়কে চলে আসলে তার প্রেমিক স্বামী অসিম তাকে ফিরিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষন পর ঘরের তীরে সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় নিপাকে দেখতে পেয়ে বাড়ির লোকজন তাকে নামিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে থানায় খবর দেয়া হলে থানার এস.আই সুজিত চক্রবর্তীর নের্তৃত্বে একদল পুলিশ মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ইফতেখার আলম চৌধুরী দৈনিক হবিগঞ্জ সময়কে জানান, নিপাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম আতাউর রহমানও হাসপাতালে যান এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এদিকে নিপার রহস্যজনক এ মৃত্যুর খবরে তার সহপাঠীরা লাশ দেখার জন্য হাসপাতালে এসে ভীড় করেন। তারা জানায়, নিপা খুব সাদামাটা প্রকৃতির মেয়ে ছিলো। নিপার এভাবে চলে যাওয়ার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারছেন না তার সহপাঠিরা। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য তারা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। অপর দিকে, বিকেল ৫টার দিকে ময়না তদন্ত শেষে নিপার মৃতদেহ তার স্বামীর বাড়ি মুরাদপুরে আসলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। নিপার পিতা মাতা ভাই বোনসহ আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। তাদের আহাজারীতে এলাকার লোকজন বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন। নিপার মা ও ভাই-বোন বার বার মুর্ছা যান। এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে নিপার একমাত্র ভাই টুটন দেব দৈনিক হবিগঞ্জ সময়কে জানায়, তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ছবি সাংবাদিকদের দেখিয়ে বলে তার বোনের হাত ও পায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার বোন কোনভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না।  টুটন অভিযোগ করে বলে তার বোনের মৃত্যুর খবরটি পর্যন্ত তাদেরকে দেওয়া হয়নি। ওই গ্রামে বসবাসকারী তার এক কাকাতো বোন চম্পা মোবাইল ফোনে খবরটি তাদের জানায়। চম্পার দেওয়া খবরে তারা পরিবারের সকল সদস্য নবীগঞ্জের মুরাদপুরে আসেন। এ সময় টুটন আরো অভিযোগ করে বলেন, তার বোনের স্বামী অসীম নিপার সাথে হাসপাতালে পর্যন্ত যায়নি। নিপার মামা স্কুল শিক্ষক দীজেন্দ্র দেব জানান, নিপার শাশুড়ীর সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে তাকে মারধোর করা হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। কিন্তু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিপার স্বামী অসিম ধাম দৈনিক হবিগঞ্জ সময়কে  জানান, তার প্রেমিকা স্ত্রীর সাথে কোর ঝগড়া হয়নি। সুন্দর ভাবেই তাদের সংসার চলছিল। কোন কারণ ছাড়াই গতকাল গলায় ওড়না পেছিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এদিকে, নিপার শেষকৃত্যানুষ্ঠান অংশ না নিয়েই ক্ষোভে তার পরিবারের লোকজন মুরাদপুর ছেড়ে চলে যায়। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় একটি অপ মৃত্যুর মামলা হয়েছে বলে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন এস.আই সুজিত চক্রবর্তী।


     এই বিভাগের আরো খবর