,

নবীগঞ্জে হত্যাকান্ডের ৫৬ দিন পর পাওয়া গেল কাউছারের মাথা

প্রেমের সম্পর্কে বাধা দেয়ায় খুন করা হয় প্রেমিকার ভাইকে

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা এলাকায় বোনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে বাধা দেয়ায় লম্পট প্রেমিক ও তার লোকজনের হাতে খুন হওয়ার ৫৬ দিন পর কিশোর কাউছার মিয়ার মাথা পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে একটি কালভার্টের উপরে মাথাটি দেখতে পেয়ে এলাকার লোকজন থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে মাথাটি উদ্ধার করে। এর আগে কাউছারের অর্ধগলিত অবস্থায় মাথা বিহীন লাশ উদ্ধার করে দুই জনকে আটক পরে পুলিশ। এ ঘটনার পর দ্রুত সময়েই পুলিশ হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। সুত্রে প্রকাশ, চলতি বছরের গত মে মাসের ২৯ তারিখ রোজ মঙ্গলবার রাত অনুমান সাড়ে দশটায় টায় ওই গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে পার্শ¦বর্তী ছাতল গ্রামের কাছুম আলীর পুত্র দুরুদ মিয়ার সাথে বাড়ি ফেরার উদ্দেশে রওয়ানা দেয় কাউছার মিয়া। এর পর থেকে কাউছারের আর কোন খোঁজ খবর মিলেনি। তার খোঁজে পরিবারের লোকজন নিকটাত্মীয়-দূরাত্মীয়দের বাড়ীসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করে কোন সন্ধান না পেয়ে নিরুপায় হয়ে তার পিতা হায়দর মিয়া নবীগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। এর ৫ দিন পর গত জুন মাসের ২ তারিখ রোজ শনিবার পানিউমদা ইউনিয়নের টঙ্গীটিলার পূর্ব-দক্ষিণে আব্দুল্লাহজাই গোল নামক স্থানে এলাকার লোকজন মাথা বিহীন ও ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় নিখোঁজ কাউছারের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেল পারভেজ আলম চৌধুরী ও নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম আতাউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। পরে ওই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ পানিউমদা গ্রামের পার্শ্ববর্তী চাতল গ্রাম থেকে কাছুম আলীর পুত্র দুরুদ মিয়া এবং একই গ্রামের সুফি মিয়ার পুত্র জগলু মিয়াকে আটক করে। ঘটনার পরপরই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামী দুরুদ হত্যাকান্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে আদালতে প্রেরণ করলে সে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। তার জবানবন্দী অনুযায়ী পুলিশ জানায়, কাউছার মিয়ার জনৈকা বোনের সাথে পানিউমদা চাতল গ্রামের শফি মিয়ার ছেলে সিরাজুল ইসলাম (২৩) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। এ বিষয়টি জানতে পেরে তাদের প্রেমে বাধা দেয় প্রেমিকার ভাই কাউছার মিয়া।

Kawser File Pc

এ নিয়ে কাউছারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রেমিক সিরাজুল ইসলাম। সে তার পথের কাটা হিসেবে কথিত প্রেমিকার ভাই কাউছার মিয়াকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক সে তার সঙ্গী পানিউমদা চাতল গ্রামের নসরত আলীর ছেলে নূরুজ আলী ও পানিউমদা গ্রামের কাছম আলীর ছেলে দুরুদ আলীকে নিয়ে গত ২৯ মে মধ্যরাতে পানিউমদা সাকিনস্থ আব্দুল্ল্াহজাই নামক নির্জন স্থানে কাউছার মিয়াকে গলা কেটে হত্যা করে। পরে কাউছারের দেহ থেকে মাথা আলাদা করে অন্যত্র ফেলে যাতে তাকে আর কেউ চিনতে না পারে। এ দিকে ঘটনার ৫৬ দিন পর কিশোর কাউছারের মাথা পাওয়া গেল। ওই এলাকার বাসিন্দা যুবলীগ নেতা অনু আহমেদ জানান, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২ টা ৪৫ মিনিটে ওই গ্রামের জালিল মিয়া নামের একলোক পানিউমদা বাজার থেকে বাড়ীতে যাওয়ার সময় দেওলাবাড়ী নামকস্থানের একটি কালর্ভাটের উপর পলিথিন দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় গোল স্তম্ভ দেখতে পান। এক পর্যায়ে নিকটে গিয়ে মাথার চুল দেখে নিশ্চিত হন এটি কোন মানুষের মাথা। জলিল মিয়ার শোর-চিৎকারে এলাকার লোকজন বৃষ্টির মধ্যেই ওই স্থানে যান। পরে কাউছারের মা এসে নিশ্চিত করেন এই মাথাটি কাউছারের। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ওই স্থানে গিয়ে মাথাটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এলাকাবাসী জানান, সে স্থানে মাথা পাওয়া গেছে ওই স্থানে প্রতিদিন এলাকার শত শত লোক চলাচল করেন। মাথাটি আগে কেউ দেখেননি। তাদের ধারণা মঙ্গলবারেই যে কোন এক সময় কেউ মাথাটি ওই স্থানে রেখে গেছে। নিহতের পরিবারের দাবী, হত্যা মামলার প্রধান আসামী দুরুদকে আবারো রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার সাথে হত্যাকান্ডে জড়িত প্রকৃত সকল হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ করবে। জেল হাজতে থাকা দুরুদের পরিবারের সাথে নিহত কাউছারের পরিবারের বিরোধ ছিল দীর্ঘদিন যাবত। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম আতাউর রহমান জানান, মঙ্গলবার দুপুরে মাথার খুলি ও চুল পাওয়া গেছে। তবে এর আগেই কাউছারের মাথাবিহীন দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর