,

জিন্নাহ’র স্বপ্নের পাকিস্তান গড়ার অঙ্গীকার ইমরানের

সময় ডেস্ক ॥ পাকিস্তানে গত বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিজের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিজয় দাবি করেছেন দেশটির সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান ঘোষণা দেন নতুন পাকিস্তান গড়ার, যেখানে সব নীতি হবে দেশের মানুষের কল্যাণে। পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ‘স্বপ্নের পাকিস্তান’ গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে ইমরান বলেন, তিনি রাজনীতিতে কিছু পাওয়ার জন্য আসেননি। তিনি বলেন, ‘আমি পাকিস্তানকে তেমন দেশ হিসেবে গড়তে চাই, যা মদিনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যে কল্যাণ রাষ্ট্রে বিধবা ও দরিদ্রদের সেবা করা হতো।’ গত বুধবার পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ৬টায় ভোট গণনা শুরু হয়। তবে ভোট গণনা শুরুর পর দীর্ঘ সময়েও চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করতে পারেনি দেশটির নির্বাচন কমিশন। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৪৯ শতাংশ ভোট গণনায় ইমরান খানের দল পিটিআই স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। এই অবস্থায় বিকেলে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে নিজের দলকে বিজয়ী বলে দাবি করেন ইমরান খান। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা পর্যন্ত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৭২টি আসনের মধ্যে ১৯৪টি আসনের বেসরকারি ফল ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এতে ৯৮ আসনে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), ৪৯ আসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) বা পিএমএল-এন এবং ২৩ আসনে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে (পিপিপি) বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ৪টি আসনে এমএমএ ও ৩টি আসনে এমকিউএমকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোট গণনা শুরুর পর বেশিরভাগ আসনে পিটিআই এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। ফলে বুধবার রাত থেকেই জয়োল্লাস শুরু হয় ইমরান খানের পিটিআই শিবিরে। মধ্যরাতে পিটিআইর অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় ইমরান খানকে ‘উজিরে আজম’ হিসেবে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্টও দেওয়া হয়। তবে কারচুপির অভিযোগে এরই মধ্যে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ)-পিএমএলএনের প্রধান শাহবাজ শরিফ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। পার্লামেন্টের ২৭২টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য লাগবে ১৩৭ আসন। এখন পর্যন্ত ঘোষিত ১৯৪টি আসনের ফলে ইমরান খানের পিটিআই এগিয়ে থাকলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়নি। আর শেষ পর্যন্ত নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে পিটিআইকে জোট সরকার গড়তে সহযোগী খুঁজতে হবে। পাকিস্তানের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর হতে যাচ্ছে। এবার ১০ কোটি ৬০ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ ভোট পড়েছে। বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন, ভোট গণনার সময় তাদের পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি নির্বাচনী শৃঙ্খল ভেঙে ফলাফলের সার্টিফাইড কপি দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকা বিশেষ করে পিএমএল-এনের শক্তিশালী কেন্দ্র পাঞ্জাব প্রদেশে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণায় অস্বাভাবিক বিলম্ব হওয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। তবে তাদের প্রতিক্রিয়া আমলে নেয়নি দেশটির নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোট কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তাদের দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ইমরান খানকে জেতানোর চেষ্টা করছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটাও অস্বীকার করেছেন দলটির নেতারা।


     এই বিভাগের আরো খবর